পাহাড়ে শান্তি আনতে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করুন

0

||জেসি চাকমা||

জেএসএসের অস্ত্র সমর্পণের সময় চুক্তির বিরোধিতা করে অস্ত্র সমর্পণ না করে তাদেরই একটি অংশ জেএসএস থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে।যা পুনরায় ভেঙ্গে হয় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। এরপর স্বার্থগত দ্বন্দ্বে জেএসএসও ভেঙে জেএসএস (এমএন লারমা) নামে নতুন আরো একটি সংগঠন তৈরি হয়।

এরা পাহাড়ে বসবাসকারী কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বিপুল অংকের চাঁদা। তা দিয়ে সশস্ত্র গ্রুপকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। গোপনে বিদেশ থেকে কেনা হচ্ছে ভারি, দামি ও অত্যাধুনিক অস্ত্র। সামরিক আদলে কাঠামো তৈরি করে নিজেদের সংগঠিত করছে।

হঠাৎ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জেএসএস, ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কারপন্থি গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাস থেকে পাহাড়ে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার কারও সাহস নেই। যদি জানতে পারে কেউ অভিযোগ করেছে- তাহলে পরের দিন তার লাশ ফেলে দেয়া হচ্ছে অথবা অপহরণ করা হচ্ছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এসব খবর বেশিরভাগ সময়ই মিডিয়ায় আসে না।

তারা বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করছে। আর অস্ত্র কেনা ও নিজেদের সংগঠন চালানোর জন্য তারা চাঁদা আদায় করছে সাধারণ মানুষ, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে । ফলে জিম্মি হয়ে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ মানুষ। প্রাণ ভয়ে তারা কেউই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যান না।

তারা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পোশাক ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের রয়েছে প্রায় ৯শ’ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী।
তাদের অধীনে রয়েছে সামরিক কায়দায় ৬টি কোম্পানি। জেএসএস (সংস্কার) এর রয়েছে ২টি কোম্পানি। তাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীর সংখ্যা প্রায় পৌনে ৩শ’। আর ইউপিডিএফ এর ৪টি কোম্পানির অধীনে রয়েছে প্রায় ৭শ’ সশস্ত্র সদস্য।

তাদের রয়েছে নিজস্ব সেনাপ্রধান, আলাদা আলাদা কোম্পানি, বিভিন্ন উইং, শরীরে থাকে বাহিনীর পোশাক, হাতে অত্যাধুনিক ওয়াকিটকি, কাঁধে চকচকে ভারি ও দামি অস্ত্র। তারা প্রত্যেকেই প্রশিক্ষণ পাওয়া দক্ষ ও ক্ষিপ্র। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে তাদের বিচরণ।

শুধু পোশাক আর অস্ত্র নয় তাদের রয়েছে নিজস্ব পরিচয়পত্র, মুদ্রা ও পতাকা। পাহাড়ে জুম্মল্যান্ড ও স্বায়ত্তশাসিত সরকার গঠনকে টার্গেট করে নীরবে সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে এই সশস্ত্র সংগঠনগুলো। এ সব সংগঠনগুলো ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের পতাকা, মুদ্রা ও পরিচয়পত্রের প্রচারণা চালাচ্ছে।

পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। গাড়িপ্রতি চাঁদা দিতে হয়। পুলিশকে বলেও কোনো লাভ হয় না। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা প্রায়ই গাড়ি ভাঙচুর করছে। উপজাতিদেরও এ চাঁদা দিতে হয়। তাদের কাছে অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

তিন পার্বত্য জেলায় জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার) ও ইউপিডিএফ ধার্যকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই শুরু হয় অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর, যানবাহন। নাকের ডগায় বসে অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে এই চাঁদাবাজি চললেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। যারা ব্যবস্থা নিবেন সেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বেতনের ১০-১৫ শতাংশ চাঁদা দিতে হয় তিনটি গ্রুপকে।

প্রতিদিনই পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলো এক থেকে দেড় কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছে। বছর শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি। এ ছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চাঁদার এ অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে বাঙালি বিদ্বেষী প্রচারণা ও তাদের অস্ত্র ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার কাজ করে থাকে বলেও জানা গেছে।

তাই সরকারের নিকট আকুল আবেদন ” আমাদের উপজাতি সন্ত্রাসী দলগুলো থেকে রক্ষা করতে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বাড়ান। আমাদের শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করুন”।

এই লেখাটি সম্পূর্ণ লেখকের নিজেস্ব মতামত।

আগের পোস্টনির্বাচন কর্মকর্তাকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের হুমকি থানায় সাধারণ ডায়েরি
পরের পোস্টসুরেশ কান্তি তংচঙ্গ্যা হত্যার ঘটনায় মামলা, সাবেক পিসিপি নেতা আটক।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন