উপজাতি হায়না কর্তৃক কাউখালী বাঙ্গালী ও সেনা গণহত্যাটি আজো অজানা থেকে গেল!

0

||রোহান হোসেন||

ভয়াল ২৫ মার্চ কলমপতি গণহত্যা; পার্বত্য ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়ন গণহত্যা। এই দিনে বাঙ্গালীদের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা নিহত হয়েছিল তথাকথিত শান্তিবাহিনীর গুলিতে। হতাহত হয়েছিল অনেক সেনাসদস্য। ঠিক কতজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছে তার সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করার মত লোকের অভাব থাকায় এবং বাঙ্গালী নেতৃত্ব শ্রেণীর অভাবে কাউখালীতে বাঙ্গালি ও নিরাপত্তা বাহিনী নিহত হওয়ার প্রকৃত পরিসংখ্যানটি সংরক্ষিত হয়নি৷ বর্তমানে ৭৫০ জন নিহত হওয়ার কথা বললেও স্থানীয়দের তথ্য মতে তা হবে প্রায় দেড় হাজার।

আজ সে ভয়াল কলমপতি গণহত্যা দিবস। ১৯৮০ সনের ২৫ মার্চ এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় তৎকালীন তথাকথিত শান্তিবাহিনী। তাদের সামরিক কমান্ডার মেজর মলয় এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এ জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ। মেজর মলয় হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর বর্তমান সহ-সভাপতি এবং রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি। তার নেতৃত্বে পুনর্বাসিত বাঙ্গালী এলাকায় দিনভর চলে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও লুটপাটের মত ঘৃণিত ঘটনা। ‘প্রিয় পাঠক আপনি পড়ছেন HBF এর লেখা। লেখাটি প্রচারে শেয়ার করুন।’ স্থানীয় প্রবীণ বাঙ্গালীরা জানায়, “৮৩ জন বাঙ্গালী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে; ১০১ জন বাঙ্গালী শিশুকে হত্যা করা হয়েছে; ১৭৩ জন বাঙ্গালী যুবককে হত্যা করা হয়েছে; ৪৭৬জন নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে।”

নিখোঁজ ও আহত হয়েছে অসংখ্য নারী-পুরুষ। ভয়াল এমন এ দিনকে স্মরণ করা তো দূরের কথা এমন একটি দিন এ এলাকার মানুষের জীবনে ঘটেছিল তাও জানেন না এখানকার বাঙ্গালী আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতারা। কেউ কেউ এ দিনটিকে স্মরণ রাখলেও একটি মহল অসন্তুষ্ট হবেন বলে গণহত্যা দিবসটি পালন করেনা। কাউখালীতে ১৪ কুতুব রয়েছে। এখানকার বাঙ্গালীরা ঐকবদ্ধ নয়। তারা স্বার্থপর এবং জাত বিরোধী৷ অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা হচ্ছে আঞ্চলিকদল গুলোর কালেক্টর এবং এজেন্ট। কেউ বাঙ্গালী আন্দোলন করলে তাকে টেনে ধরা হয়। অকৃতজ্ঞদের ভরপুর কাউখালী।

প্রতিবছর গণহত্যার দিবসটি আসলে ২৫ মার্চ আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করে শোকসভা ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার করে। গণহত্যার সম্পূর্ণ দায়ভার বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর উপর আরোপ করে।

ইউপিডিএফ এর অভিযোগ-
“১৯৮০ সালের এই দিন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নে রাষ্ট্রীয় মদদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর সেটেলার দ্বারা এক বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিলো। এদিন সেনা কর্মকর্তারা বৌদ্ধ বিহার সংস্কারের জন্য পাহাড়িদের ডেকে এনে নৃশংসভাবে ব্রাশ ফায়ার করে এবং সেটলারদের লেলিয়ে দেয়। সেনা ও সেটলারের হামলায় এ হত্যাকাণ্ডে ৩০০-এর অধিক নিরীহ পাহাড়ি প্রাণ হারায়। নিকটস্থ বৌদ্ধ বিহারে হামলা করে ভিক্ষুকেও গুরুতর জখম করে এবং পুরো এলাকা তাণ্ডব-লুটপাট চালায়। এ হত্যাকাণ্ড ১৯৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সাথে তুলনীয়।
ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, সেদিন ছিলো হাটবার। স্থানীয় সেনা ইউনিটের কমাণ্ডার হাটে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেয় যে পোয়াপাড়া বৌদ্ধ মন্দির মেরামত কর হবে। তাই পাহাড়িরা যাতে বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গনে অনতিবিলম্বে হাজির হয়। পাহাড়িরা মন্দির মেরামতের কাজ করার জন্য সেখানে উপস্থিত হলে সেনা কমাণ্ডার সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেয়। গুলিতে নিমিষেই প্রাণ হারায় শতাধিক পাহাড়ি। নিহতের মধ্যে বাজার চৌধুরী কুমুদ বিকাশ তালুকদার, স্থানীয় ইস্কুল কমিটির সেক্রেটারী কাশীদেব চাকমাও রয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের পরও সেনাবাহিনী ক্ষান্ত হয়নি। তারা সেটলারদের নিয়ে পাহাড়ি অধ্যুষিত কাউখালী মুখ পাড়া, পোয়াপাড়া, কাউখালী বাজার, তোং পাড়া এবং হেডম্যান পাড়া আক্রমণ করে। সেনাবাহিনী গ্রামের চারিপাশে ঘিরে থাকে যাতে কেউ বেরুতে না পারে। আর সেটলাররা দা, কুড়াল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের কুপিয়ে হত্যা করে ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। মুখপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, তোং পাড়া আনন্দ মোহন বৌদ্ধ মন্দির, পোয়া পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কাউখালী বৌদ্ধ মন্দির এবং হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধমন্দিরও এদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। মারধর করে জখম করা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের।”

গণহত্যার ঘটনার একমাস পর ২২ এপ্রিল বাম রাজনৈতিক দল অথাৎ তৎকালীন বিরোধী দলীয় তিন সংসদ সদস্য শাহজাহান সিরাজ (জাসদ), উপেন্দ্র লাল চাকমা (জাসদ) ও রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কাস পার্টি) ঘটনা তদন্ত করতে কলমপতি যান। ঢাকায় ফিরে ২৫ এপ্রিল (১৯৮০) তারা একপেশে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। সংবাদ সম্মেলনে গণহত্যার জন্য বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

দুঃখজনক বিষয় যে, বাঙ্গালীরা এই গণহত্যায় সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের স্বীকার ও ক্ষতিগ্রস্ত। তারপরও বাঙ্গালীরা গণহত্যার দিবসটি পালন করেনা, এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেনা! পক্ষান্তরে ইউপিডিএফ একতরফা সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালীকে দায় করছে।

স্থানীয় বাঙ্গালীরা জানায়-১৯৮০ সনের ২৪ মার্চ সকাল ১১টায় তৎকালীন ঘাগড়া জোন কমান্ডার খালিকুজ্জমানের নেতৃত্বে কাউখালীতে ডাকা হয় শান্তি সমাবেশ। উপজাতীয় হেডম্যান, কার্বারী, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তবর্গ ও বাঙ্গালী নেতাদের উপস্থিতিতে দিনভর চলে সম্প্রীতি ও শান্তির সমাবেশ। এর আগে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মাঝে ঘটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা। যা ঘটেছে সামনে যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে বৈঠক সফল করতে তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। আলোচনার পর উপস্থিত পাহাড়ী-বাঙ্গালী নেতারা শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভাল একটা অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হন। নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শান্তির আশ্বাস পেয়ে উভয় পক্ষই চলে যায় যার যার বাড়ী ঘরে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক তা কোন মতেই মেনে নিতে পারেনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা। তারা চেয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে পুর্ণবাসিত বাঙ্গালীদের নিধন করে এ অঞ্চল রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড হইতে আলাদা করে একটি স্বাধীন জুমল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠন করতে। তারই মানসেই বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা চালায়।

২৫ মার্চ ১৯৮০, তীব্র শীতের কনকনে ঠান্ডার সকাল মানুষ জীবিকার সন্ধানে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে যার যার কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কেউ বা সাপ্তাহিক হাটবাজারে যাবে। সকাল প্রায় ৮টায় এমন সময় খবর আসে কলমপতি ইউনিয়নের পোয়াপাড়া বাজারের পার্শ্বে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত সেনা ক্যাম্প লক্ষ করে প্রথমে গুলি চালায় মেজর মলয়ের নেতৃত্বে শান্তিবাহিনী। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপজেলার কাশখালী, ঘিলাছড়ি, রাঙ্গীপাড়া ও বেতছড়িসহ আশপাশের এলাকাগুলো চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে বৃষ্টির মত গুলি চালাতে থাকে জেএসএস এর সশস্ত্র শাখার সন্ত্রাসী বাহিনী। উপর্যপূরী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙ্গালী নারী-পুরুষের উপর। গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়া হয় আগুন দিয়ে। হত্যা করা হয় অগণিত নারী-পুরুষ ও শিশুকে। জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয় আবাল বৃদ্ধা-বনিতা কে। সে ঘটনায় উল্লেখিত এলাকাগুলোতে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে হত্যা করা হয় অন্তত ৭৫০ জনের অধিক মানুষকে। অপহরণ ও গুমের শিকার হয়েছেন শত শত নিরস্ত্র বাঙ্গালী নরনারী।

অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ৪৫০টি বাড়ীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় শান্তিবাহিনী। এছাড়া গৃহহীন হয় সহস্ত্রাধিক পরিবার। এই দিন শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে সেনাবাহিনীও শহীদ হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এভাবে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে শান্তিবাহিনীর হাতে খুন হন প্রায় ৩৫ হাজার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।

যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আজকের এই কাউখালী। সে মানুষগুলোকে স্মরণ করা দূরে থাক আজকের এই দিনটার সম্পর্কে কথা বলতে রাজি নয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতারা। এখানকার বাঙ্গালী নেতারা এখন জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ উপজাতি নেতৃত্ব মহল বলেছে বাঙ্গালী সংগঠন করলে নাকি আওয়ামী লীগ-বিএনপি করা যাবেনা। মহলটি সর্বদা বলেন, কেউ যদি বাঙ্গালী সংগঠন করে তাকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে৷ তাই কেউ এই ভয়ে বাঙ্গালী সংগঠন করেন না। একসময় বাঙ্গালী আন্দোলনের পটভূমি ছিল এই কাউখালী। বর্তমানে বাঙ্গালী আন্দোলন ধ্বংসের পথে বাঙ্গালী দালালদের ষড়যন্ত্রের কারণে। দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাঙ্গালী দালালগুলোর অবস্থান এবং তৎপরতা এই কাউখালী।

পার্বত্য বাঙ্গালীরা বাঙ্গালী গণহত্যার এ ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে! দুঃখজনক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে এভাবেই ২৬টি বাঙ্গালি গণহত্যা মুছে ফেলা হচ্ছে। অথচ উপজাতি সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালী গণহত্যা গুলোকে পূঁজি করে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

আগের পোস্টসুরেশ কান্তি তংচঙ্গ্যা হত্যার ঘটনায় মামলা, সাবেক পিসিপি নেতা আটক।
পরের পোস্টবান্দরবানে র‌্যাব-জেএসএস সন্ত্রাসী গুলিবিনিময় নিহত ১, অস্ত্র উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন