২২ বছর পর বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্তবর্তী এলাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তা রক্ষায় ভারী অস্ত্রসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সালের পর হঠাৎ সেন্টমার্টিন দ্বীপ এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হলো। সীমান্ত পাহারার অংশ হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তে এটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি সদর দফতর।
রোববার বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘সরকারি নির্দেশ মোতাবেক আজ (৭ এপ্রিল-২০১৯) থেকে দেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত সেন্টমার্টিনে ভারী অস্ত্রসহ পুনরায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’
মোহসীন রেজা বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে এর আগেও বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। তবে ১৯৯৭ সালের পর ওইভাবে আর পাহারা ছিল না। আবারও ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগের মতো আবারও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। তাই আজ থেকে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।’
এতো দিন পর বিজিবি সদস্য মোতায়েনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুহম্মদ মোহসিন রেজা বলেন, সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই সরকারি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিনে বিজিবি মোতায়েন করার মতো কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে মোহসীন রেজা বলেন, ‘কোনো বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
সারাদেশের সীমান্ত যেভাবে পাহারা হয়ে থাকে, সেভাবেই সেন্টমার্টিনে বিজিবির সদস্যরা পাহারায় থাকবে। আর বিজিবি তো সব সময়ই অস্ত্র নিয়েই পাহারায় থাকে।
এখানে ভারী অস্ত্র বলতে তেমন কিছু বোঝানো হয়নি জানান মোহসিন রেজা ।’
প্রসঙ্গত রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার নিজেদের বলে দাবি করার চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (এমআইএমইউ) নামের দেশটির সরকারি একটি ওয়েব সাইটের মানচিত্রে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনকেও মিয়ানমারের মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও’কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে একটি কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে মানচিত্রে সেন্টমার্টিন ভারত উপমাহদেশের অংশ ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর সেন্টমার্টিন ওই সময়ের পাকিস্তান অংশে ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময়েও সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অংশে ছিল।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ সমুদ্রসীমা বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (আইটিএলওএস) বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির রায় দেন।
ওই রায়েও সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মিয়ানমারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না, যুদ্ধ করতে চাই না।
সবার সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। তবে কেউ যদি আমাদের আক্রমণ করে তাহলে তার যেন যথাযথ জবাব আমরা দিতে পারি, সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেছিলেন, যেহেতু মিয়ানমার আমাদের একেবারেই প্রতিবেশী, তাদের সঙ্গে কখনো সংঘাতে যাব না।
বরং আলোচনার মাধ্যমে তাদের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) যেন তারা ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই প্রচেষ্টাই আমাদের অব্যাহত থাকতে হবে এবং সেভাবে সবাই দায়িত্ব পালন করবেন।