সমগ্র পার্বত্য জুড়ে অবৈধভাবে কাঠ পাচারে বাধা নেই, অবৈধ কাঠের গাড়ির টাকা কোথায় যায়?

0

মারুফ কামাল, দীঘিনালা

খাগড়াছড়ি দীঘিনালার মেরুং- মাইনি রোডের চৌমুনি এলাকায় ব্রিজ ভেঙ্গে পরে গেছে দু’টি কাঠ বোঝাই ট্রাক। ২৬ শে ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল সাড়ে ৯ টার সময় এ ঘটনা ঘটে।

অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক একই সময়ে ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতের ফলে ব্রিজটি ভেঙে যায় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা যায়, চোরা কাঠ পাচারকারী অবৈধভাবে সরকারী আইন ভঙ্গ করে কাঠ পাচার করে আসছে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে। আর এ কাজে সরাসরি জড়িত প্রশাসনের কিছু কতিপয় ব্যক্তি ৷ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও গোয়েন্দা সংস্থা সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে চক্রটি। কাঠ পাচারকারীরা সেগুন, গামারি সহ নানান প্রজাতির গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করে ফেলছে৷ স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক সহ পরিবেশবাদীরা রহস্যজনক ভাবে নীরব এই বিষয়ে৷

কাঠ পাচারকারী ব্যবসায়ী সমিতি বলছে তারা অবৈধ কাঠের গাড়ি থেকে যে টাকা উত্তোলন করেন তা সড়ক সংস্কারের জন্য এবং সমিতির জন্য! এখন কি তারা সড়কের ভেঙে যাওয়া ব্রিজ সংস্কার করবে? নাকি সড়ক ও জনপদ বিভাগ বা এলজিডি সংস্কার করবে? সড়ক সংস্কারের নাম করে অবৈধ কাঠের গাড়ি হতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিটি কাঠ-লাকড়ি বোঝাই গাড়ি হতে ১২০০ শত টাকা থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়! এ চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা ২০/২১ টি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রেসক্লাব সহ আরো কিছু দপ্তর ব্যক্তি ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলেও জানা যায়। অবৈধ কাঠ পাচারকারীরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাল্লা দিয়ে যেতে গিয়ে একাধিক কাঠ বোঝাই ট্রাক ব্রিজে উঠে৷ তাছাড়া অতিরিক্ত কাঠ বোঝাইের ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সড়ক গুলোর বেহাল দশার মূল কারণ অবৈধভাবে অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চলাচল। সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল; সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব কি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির? তারা কেন ১২০/১৫০ টাকার সড়ক সংস্কারের নামে চাঁদার টোকেনে উল্লেখ্য করে? ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা গাড়ি প্রতি নিয়ে ১২০/১৫০ টাকা চাঁদার টোকেনে উল্লেখ করা হয়! যে টাকা তারা সড়ক সংস্কারের নামে নেন সেটা গুলো দিয়ে তো তাদের কোন সড়ক সংস্কার করতে দেখা যায় না! চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে সড়ক সংস্কারের দোহাই দেওয়া হয় চাঁদার টোকেনে। নতুন একটি সড়ক নির্মাণ হলে বছর ঘুরে আসার আগে কাঠ পাচারকারীরা সে সড়কের বেহাল দশা করে। ৫ মেট্রিকটন বোঝাই করার অনুমতি থাকলেও ৩০/৩৫ মন বোঝাই করা হয়! বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগ সহ এলজিটির নজর নেওয়া উচিত। এবং সড়ক সংস্কারের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে যে টাকা উত্তোলন করা হয় তারও হিসাব নেওয়া উচিত৷ অবৈধভাবে কাঠ পাচার কাজে সহযোগীতা করার কারণে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি গুলোর রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করা প্রয়োজন। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপজাতি-বাঙালি সকলের ঐকবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি৷ পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করতে হলে অবৈধভাবে কাঠ পাচার বন্ধ রাখতে হবে৷ এবং সহজশর্তে কাঠ ব্যবসা চালু করতে হবে৷ যাতে পরিবেশেরও ক্ষতি না হয় এবং গরীব মানুষ জীবিকার তাগিদে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। বন বিভাগ, আনসার ভিডিপি, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের লাভের জন্য সমগ্র পার্বত্যবাসীর ক্ষতি করা কোন মতে কাম্য হতে পারে না। পাহাড় হতে কাঠের জন্য যে চাঁদা উত্তোলন করা হয় এই চাঁদাবাজির টাকা পাহাড় ছেড়ে সমতলেও যায়। এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা যতটা লাভবান হয় তার থেকে বেশি লাভবান হয় সুযোগ সন্ধানী ও সিন্ডিকেট গ্রুপ সহ উপজাতি সন্ত্রাসীরা।

শুধু খাগড়াছড়ি দীঘিনালা নয় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের এই চিত্র বিদ্যমান। প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করা হয়। কিছু কাঠের পারমিট থাকলেও এই পারমিটের কাগজ দিয়ে বিভিন্ন বাগান হতে গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করা হয়। অবৈধভাবে পারমিট ব্যবহার করা হয়। একটি পারমিটের কাগজ অনেক দিন ব্যবহার করা হয়, এক পারমিট দিয়ে একাধিক বাগানের গাছ কাটাও হয়। বন বিভাগ পারমিট দিলেও ব্যবসায়ীরা পারমিট সঠিকভাবে ব্যবহার করছে কিনা তা নিয়ে বন বিভাগের বিন্দুমাত্র তদারকি নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ কাঠের গাড়ি আটক করলেও পারমিটের কাগজপত্র না বুঝতে পারার কারণে আটক কাঠ ভর্তি গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কে কোন পারমিটের বাগান হতে গাছ কাটছে তাঁরও তদারকি নেই। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অবৈধভাবে কাঠ পাচারে জড়িত। এই অভিযোগ খোদ অবৈধ কাঠ পাচারকারীদেও। বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ কাঠ পাচারের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি কাঠের গাড়ি হতে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে অবাধে পারমিটবিহীন কাঠ পাচারে সুযোগ দেন। অবৈধভাবে কাঠ পাচার হলে তার থেকে মোটা অংকের চাঁদা নিতে পারে বন বিভাগ। আর পারমিট দিলে চাহিদা অনুযায়ী পকেট ভরা যায় না। তাই চাহিদা মত পকেটে ভরতে অবৈধভাবে কাঠ পাচার করছে। স্থানীয় কিছু কতিপয় ব্যবসায়ীর কারণে অনেক গরীব ব্যবসায়ীরা কাঠ ব্যবসা করতে পারছে না। কারণ গরীব ব্যবসায়ীদের কাঠের গাড়ি আটক করে অবৈধ পাচার হিসেবে। আর যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীও কাঠ ব্যবসা সমিতির মাধ্যমে লিয়াজো করে তাদের শুধুমাত্র ব্যবসা করতে দেয়া হয় সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়।

ইটভাটার জ্বালানির, ফার্নিচার আবাসপত্র ও সমতলে কাঠ পাচারের জন্য পাহাড় হতে সেগুন, গামারি গাছ কেটে পাহাড় নেড়া করা হয়। তথাকথিত বুদ্ধিজীবি, পরিবেশবাদীরা সহ যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে পান থেকে চুন খসলে সেনাবাহিনীকে দায়ী করে এমনকি বাঙালির চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে তারা আজ কোথায়? সরকার কর্তৃক পরিবেশের ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক রক্ষার জন্য গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের এই আদেশ অমান্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, কতিপয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যে কাঠ পাচার করছে তার ব্যাপারে বর্ণিত মহল কোথায়?

অবৈধ কাঠ ব্যবসা ও অতিরিক্ত কাঠ বোঝাইয়ের কারণে গত ২০১৯ ইং রামগড় কালাডেবা বেইলি ব্রিজটিও ভেঙে যায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More