আহম্মদ শেহজাদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম
বান্দরবানের ১ নং রাজবিলা ইউনিয়নের তাইখালী পাড়াই সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ে অস্থীয়ভাবে অবস্থানরত ৩০ জন সেনাসদস্যের মধ্যে এক সেনা সদস্য কর্তৃক গতকাল ১৮ জানুয়ারী সোমবার দুপুর ১ টায় এক মারমা নারীকে কথিত ধর্ষণ চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে! এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড়ও বয়ে যাচ্ছে। ২৩ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী উপজাতি নারী’কে তাইনখালি বাজার পাড়ার তার নিজ বাড়িতে গিয়ে তাকে একা পেয়ে সেনাসদস্য ঝাঁপিয়ে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালাই বলে অভিযোগ করে! অদ্য ১৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকালে তাইনখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত সেনাসদস্যের ঘিরে রেখে ধর্ষণ চেষ্টার বিচার দাবিতে স্থানীয় তাইনখালি গ্রামবাসী সহ ৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করতে দেখা যায় এবং সেনাসদস্যের সঙ্গে তর্ক করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়। ভিডিওতে সব নারীর হাতে দেখা গেছে লাঠিসোঁটা সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। আমার সাধারণ জ্ঞানে যতটুকু পার্বত্য নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা থেকে স্পষ্টভাবে বলতে পারি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর অভিযান ঠেকাতে এবং সেনাবাহিনীর পার্বত্য কার্যক্রমে বেঘাত ঘটাতে এমন মারাত্মক মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। মূলত: এজন্যই নারীদের মাঠে নামিয়েছে।
ছবি: তাইনখালি সঃ প্রঃ বিঃ স্কুলে অবস্থানরত উপজাতীয় কতিপয় নারী ও সেনাসদস্যরা।
আমাদের দেশের মানুষ এমন যে, কোন কিছু সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া হুটহাট করে মন্তব্য করে এমনকি সেটা নিয়ে জামেলা পাকাই। কেউ একজন একটা অভিযোগ তুললো, তদন্তের পূর্বে সেটাকে বিশ্বাস করে ঢালাওভাবে তা নিয়ে মন্তব্য করা কতটুকু যৌক্তিক তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি কতটুকু সত্য আর যতটুকু মিথ্যা তা যাচাই-বাছাই ছাড়া যারা এটাকে ইস্যু করে সমগ্র সেনাবাহিনীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমার ধারণা তারা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি এমন কথা কেন বল্লাম তার জন্য আমার সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো পাঠকদের।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে সে বিশাল কাহিনী। অতোটা গভীরে না গিয়ে কথিত ধর্ষণ অভিযোগ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কথা বলাই শ্রেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে তদন্তের পূর্বে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যতো গুলো কথিত ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বান্দরবান ১নং রাজবিলা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে তা যে ডাহা মিথ্যা প্রমাণিত হবে না, তা বলি কি করে? বিলাইছড়ি মারমা দুই কিশোরী বোনকে ধর্ষণ করেছে বলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সহ এদেশের বিশাল অংশ প্রতিবাদ করেছিল! তারপর সর্বমহল পার্বত্য সেনাবাহিনীকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে। অথচ মেডিকেল রিপোর্ট এবং তদন্তের পরে দেখা গেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল “ধর্ষণ” অভিযোগটি৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন মিথ্যা অভিযোগ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অহরহ করা হয়। পাহাড়ের বাস্তবতা অনুমেয় করতে হলে দীর্ঘদিন পাহাড়ে থাকতে হবে, তা ছাড়া পাহাড়ের ঘটনা গুলো সত্য মিথ্যা যাচাই-বাছাই করাও কঠিন। আমার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি নিঃসন্দেহে এটা মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদীত অভিযোগ। যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সহ একটি মহল বরাবরই ধর্ষণ তকমা সহ নানান কুৎসিত অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসতে সেহেতু এধরণের অভিযোগও পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়।
ছবি: Abushee Marma নামক ফেসবুক আইডি হতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’র স্কিনশট।
বান্দরবান ১ নং রাজবিলা এলাকায় সেনাবাহিনী নিরাপত্তার স্বার্থে অস্থায়ী কিছু দিন থেকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে তার জন্য সেনাসদস্যরা আপাতত বর্ণিত স্কুলে অবস্থান করেছে৷ সেনাসদস্যের উক্ত স্কুল হতে বিতাড়িত করার জন্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদীতভাবে মিথ্যা অপপ্রচার রটিয়ে দিচ্ছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও তাদের মদদপুষ্ট লোকেরাই।
ছবি: উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক প্রচার করার নমুনা
রাজবিলা তাইনখালি প্রতিবাদের নামে উপজাতীয় কতিপয় নারীরা যখন সেনাসদস্যের মুখামুখি তখন উপজাতীয় উশৃংখল উগ্রবাদী যুবক ও সন্ত্রাসীরা নারীদের সেনাবাহিনীর উপর লেলিয়ে দেয় এবং অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর জন্য চেষ্টা করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা ভিডিও করার জন্য উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ক্যামেরা নিয়েও প্রস্তুত ছিল। সেনাবাহিনী ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে।
ভিডিও: সন্ত্রাসী কর্তৃক লেলিয়ে দেওয়া নারীরা।