মুক্তমত: Tawfiq Bina
ছবি: খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রতিষ্টান বান্দরবান
২৮ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিঃ বান্দরবানের এমপি ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের এপিএস Sadek Hossan Chowdhury তার সম্পাদিত PaharBarta তে তেলবাজি করতে একটি মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে! সংবাদের হেডিং ছিলো: বান্দরবানে শিক্ষার নামে আদিবাসী শিশুদের ধর্মান্তরিত করতে তৎপর মৌলবাদী চক্র!
তার এই নিউজটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদীত এবং ভিত্তিহীন। তেলবাজি আর চাটুকারিতা করে মন্ত্রীর কদর পেতে এধরণের নিউজ করেছে মাত্র। তার অনলাইন নিউজের প্রতিবেদক গুলোও এদেশে নিজেদের সংখ্যালঘু পরিচয় দিয়ে সুবিধা ভোগকারী। যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার উপজাতি মিশনারীদের খপ্পরে পড়ে খ্রিস্টান হয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে তার ভ্রক্ষেপ নেই! আসছে তেনা পেঁচাতে। নিবন্ধন বিহীন তথাকথিত অনলাইন নিউজ পোর্টালটি পূর্বেও সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার স্বত্বেও আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করেছে! উপজাতীয়দের মধ্যে আদিবাসীর মতো বিষফোঁড়া মূলক শব্দ ঢুকিয়ে দেওয়ার পেছনে এ ছাগুদের কারসাজি সবচেয়েই বেশি। বান্দরবানে প্রতিনিয়ত খ্রিস্টান ধর্মে যে সাধারণ উপজাতিরা ধর্মান্তরিত হচ্ছে তা নিয়ে তথাকথিত অনলাইনের সংবাদ নেই৷ সংবাদ শুধু মৌলবাদীদের নিয়ে যতসব আজাইরা। জানিনা এ সংবাদটি কি সে নিজে করেছে নাকি তার সংখ্যালঘুরা করেছে! ইসলামে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার নিয়ম নেই। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইসলামের দিকে ঝুঁকছে স্বেচ্ছায়। বান্দরবানে যদি কেউ ইসলামের পথে এসে থাকে তাও স্বেচ্ছায় এসেছে। কারণ ইসলামে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার নজির নেই৷ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করার জন্য এধরণের নিউজ করা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। পাহাড়ের চরম বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ এবং বাস্তবতা
প্রায়শও পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলগুলো ও তাদের পোষ্য বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীরা সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণের অভিযোগ করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে তারা বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলে, যদিও এ বিষয়ে তারা বরাবরই কোন তথ্য উপাত্ত দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এই অভিযোগগুলো মূলত দাতা রাষ্ট্র এবং বিদেশী প্রভুদের মনোযোগ আকর্ষণের অস্ত্র এবং বাংলাদেশ সরকারকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রতীয়মান হয়, যদিও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ৩০ বছরে অর্থাৎ ১৯৯১ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩৪.৪৭%। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৯১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যা ৯৭৪৪৪৫ জনের মধ্যে ৪২৯৯৫৪ জন ছিল মুসলমান, যা শতাংশ হিসাব মোট জনসংখ্যার ৪৪.১২% । অপরদিকে ২০১১ সালের মোট জনসংখ্যা ১৫৯৮২৩১ জনের বিপরীতে মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল ৬৮০৮১০ জন, যা শতাংশের হিসেবে ৪২.৬০%। সে হিসেবে গত ৩০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ২%। এর বিপরীতে ১৯৯১ সালে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের জনসংখ্যা যেখানে ছিল ২২২০৬ জন ( মোট জনসংখ্যার ২.২৮%), যা ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২০৬৬ জনে। শতাংশের বিচারে যা বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩.২৬%। উপরের তথ্য উপাত্ত হতে সহজে অনুমেয় যে, গত ৩০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেছে, যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অন্তরালে দেশি এবং বিদেশি কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের উদ্যোগে পরিচালিত কপিতয় এনজিও দারিদ্র উপজাতি জনগণকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরের হীন চক্রান্তে নিয়োজিত রয়েছে। এক্ষেত্রে, কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সনে ইন্টারন্যাশনাল, কমিউনিটি এডভান্সমেন্ট ফোরাম, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ওফ বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। এ সকল এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং স্বকীয়তা বিসর্জনের মাধ্যমে এই ধর্মান্তকরণের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্ট ধর্মের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, গত পহেলা জানুয়ারি ২০১৮ হতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫৩ জন উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ এসকল এনজিওদের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নিজস্ব ধর্ম-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে এসকল এনজিওদের অন্যতম লক্ষবস্তু হল ক্ষয়িষ্ণু কিছু ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী যথা বোম, চাক, লুসাই ও পাংখা নৃ গোষ্ঠী, যাদের মোটামুটি সকলেই খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। এর বাইরে সম্প্রতি সময়ে তারা ত্রিপুরা, তনচংগা, মারমা ও চাকমা জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ধর্মান্তরের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে গির্জার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।গত আগস্ট ২০১৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে গির্জার সংখ্যা ছিল ৩৬৫ টি, তা ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪০টিতে। এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব কিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আগামী ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হবে। আজকের আমার এই লেখার উদ্দেশ্য খ্রিস্ট ধর্মের বিরুদ্ধে নয় এ ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে নয় বরং পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ধর্মান্তরের সঠিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে সুবিধাবাদী চিহ্নিত কিছু গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গের মুখোশ খুলে দেওয়া। এসকল তথ্য উপাত্ত হতে সহজে অনুমেয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত ইসলামীকরণের এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার একটি অংশমাত্র। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং তাদের দোসররা বিভিন্ন সময় সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ উপজাতি জনগোষ্ঠীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার অপচেষ্টা চালানোর অভিযোগ করে আসলেও এ সকল এনজিও কর্তৃক সাধারণ দারিদ্র উপজাতী জনগোষ্ঠীকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে দেখা যায় না। মূলত ব্যক্তিস্বার্থ এবং অর্থের লোভে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা নিশ্চুপ বলে সহজে প্রতীয়মান হয়। আপাতদৃষ্টিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ধর্মান্তর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে বিদেশি শক্তিগুলোর কাছে এই অঞ্চলটির গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে এখানে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে পারলে একাধারে ভারত, চীন এবং মায়ানমার উপর কঠোর নজরদারি ও চাপ সৃষ্টি করা যাবে। সেইসাথে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে আরও দুর্বল করে কবিতার মাধ্যমে নিজ স্বার্থে ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এক্ষেত্রে এই ষড়যন্ত্রকে অনেকেই পূর্ব তিমুরের সাথে তুলনা করে থাকে। তাই ভবিষ্যতে এই অঞ্চলটির ভাগ্য যেন পূর্ব তিমুরের মতো না হয় সে বিষয়ে সরকার এবং দেশের জনগণকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যে কোন ব্যক্তি যে কোন ধর্ম গ্রহণ এবং পালনের অধিকার রয়েছে, তবে তবে এই ধর্মান্তরকরণ যদি সেটা শঠতা বা প্রতারণার মাধ্যমে হয় তখনই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় যা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আমি আশা করব বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টি দিকে দৃষ্টিপাত করবেন এবং চট্টগ্রাম ভূখণ্ডকে বাংলাদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করে একটি খ্রিস্টীয় জুমল্যান্ড রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
লেখা ও তথ্য সূত্র অনেকটাই “ছিদ্দিক শাহীন” হতে সংগৃহীত। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের চিত্রের দিকে তাকালেই দেখবেন এখানে বাঙ্গালী মুসলিমদের অবস্থান কতটাই নাজুক। আর মিশনারী ও দাতা সংস্থা গুলো হতে অর্থ বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে উপজাতিরা কতটা আরাম আয়েশে আছে। সুতরাং বলা যায় পাহাড়ে মৌলবাদী চক্র বরং সক্রিয় নয়, সক্রিয় আছে মিশনারী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা বৌদ্ধ ধর্ম পাহাড়ে বিলুপ্ত করে সবাইকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে চায়।
লেখাটি সম্পূর্ণ লেখকের নিজেস্ব এবং স্বাধীন মুক্তমত প্রকাশের অংশ। এর সাথে হিল নিউজ বিডি সম্পাদক নীতি কোনভাবেই দায়ী নয়।
এই লেখাটা ব্যাপকহারে শেয়ার করা উচিত
Thanks