||রানা আহমেদ, খাগড়াছড়ি||
উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অর্থনীতিকভাবে অনেক শক্তিশালী, সাংগঠনিক ভিত খুবই মজবুত, জনশক্তিও তারা অস্ত্রের জোর দেখিয়ে তাদের পক্ষে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংগঠন যখন অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি, সাংগঠনিক ভিত ও জনশক্তি ভালো অবস্থানে থাকে তখন তাদের হটানো খুবই কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ৩টি দিক এতোটাই মজবুত যে, তাদের রাষ্ট্রের পক্ষে এখন খুব সহজেই দমন করা বা তাদের লাগাম টেনে ধরা খুব সহজ হবে না।
রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এযাবৎ যতো গুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার কোনটাই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির মূল উৎস বন্ধ করতে পারেনি! বরং রাষ্ট্রের একের পর এক পদক্ষেপের পরেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সাংগঠনিক কাঠামো পরিচালনার জন্য জনশক্তি এবং অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ধরে রাখতে পেরেছে৷ এ থেকে রাষ্ট্র একটা সচ্ছল ধারণা নিতে পারে যে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং রাষ্ট্রের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পেরেছে। রাষ্ট্র যদি মনে করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জন্য দমন সময়ের ব্যাপার তাহলে সেটা ভূল। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে এতোটা দূর্বল ভাবার অবকাশ নেই৷ পার্বত্য চুক্তির পরেও যখন ৩ বিদেশী পর্যটককে অপহরণ করে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ্য আদায় করতে যারা সক্ষম তাদের দূর্বল মনে করা রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ভূল। উদাহরণ স্বরূপ বলি,
১. গত ২০০৭ খ্রিঃ নানিয়ারচরে সন্ত্রাসীরা সেনা ক্যাপ্টেন গাজী সহ তার দলবলকে ঘিরে ফেলে। মুখামুখি বন্দুকযুদ্ধে সেনা ক্যাপ্টেন গাজী নিহত হয়।
২. গত ২০১৯ সালে রাজস্থলী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযোগ চালাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনাসদস্য মোঃ নাছিম ঘটনার স্থলে নিহত হয় এবং গুলিবিদ্ধ হয় সেনা ক্যাপ্টেন।
৩. গত উপজেলা নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণ শেষ করে যখন ভোটের বাক্স নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে রওনা হয়েছে তখনই পথিমধ্যে সন্ত্রাসীরা ব্রাশ ফায়ার করে ৬ জনকে হত্যা করে এবং ১৭ জনকে ক্ষতবিক্ষত করে।
৪. মানিকছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রক্তাক্ত হয় সেনা মেজর টু আইসি। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ২৩ বছরে অগণিত হত্যাকান্ড, অপহরণ সহ রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতার সঙ্গে সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিলো।
এই হতাহত এবং আক্রমণ গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে অনুমেয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কোনভাবেই দূর্বল নয়। তাদের থেকে সেসমস্ত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তা রাষ্ট্রীয় বাহিনী হতেও নেই৷ নিঃসন্দেহে বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলো অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। যেকারণেই তারা এতটাই শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে।
পার্বত্য প্রেক্ষাপট বিচার বিশ্লেষণ করে এটা অনুমান যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দমন করা রাষ্ট্রের জন্য অনেক কঠিন থেকে কঠিন হবে। সময় থাকতে এ সন্ত্রাসীদের মেরুদণ্ড ভেঙে না দিলে ভবিষ্যতে এ সন্ত্রাসীরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি (পার্বত্য চট্টগ্রাম) ইন্দোনেশিয়ার পূব তিমুর না হয় দক্ষিণ সুদানের ন্যায় করবে।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখানকার বসবাসরত উপজাতি বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মধ্য হতে ৯০% মানুষ হতে চাঁদা আদায় করে থাকে। এখানকার সরকারী চাকুরীজীবিও চাঁদা দিতে হয়। বিস্ময় প্রকাশ করার সুযোগ নেই, পাহাড়ে প্রতিটি প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের ৫ থেকে ১০% হারে চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। চাঁদাবাজির এ চরম সত্যটা যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে বুঝতে হবে সে সুবিধা ভোগী না হয় জ্ঞানপাপী। পার্বত্য সন্ত্রাসীরা এমন বর্বর এবং এমন রক্ত শোষক যে, একটি মুরগী কেনাবেচা করলেও সাধারণ মানুষ হতে তারা চাঁদা আদায় করে থাকে৷ বান্দরবানের বিদায়ী এক জেলা প্রশাসক ৩ পার্বত্য জেলার আইন- শৃঙ্খলা বিষয়ক মিটিংয়ে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় এমন কোন জিনিস নেই যে সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয় না। সন্ত্রাসীরা এখানে সবকিছু হতে চাঁদা আদায় করে থাকে! একজন সংখ্যালঘু সরকারী কর্মকর্তার এ চরম সত্য প্রকাশের পরেও কেউ যদি অস্বীকার বলে ‘সন্ত্রাসীরা দূর্বল এবং পাহাড়ে কিছু হয় না।’ তাহলে এক্ষেত্রে বলার কিছু নেই।