আদিবাসী স্বীকৃতি নিয়ে ডক্টর তৌহিন মালিকের মন্তব্য সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক ও আত্মঘাতি

0

||জিহান মোবারক, রাঙ্গামাটি||

আদিবাসী স্বীকৃতি নিয়ে ডক্টর তৌহিন মালিকের মন্তব্য সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক ও আত্মঘাতি চিন্তা চেতনার ফলস্বরূপ! গত ০৫-১১-২০২০ ইং ডক্টর তৌহিন মালিক তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে হারিয়ে যাওয়া সংবিধান দিবস প্রসঙ্গ টেনে লেখা স্ট্যাটাসে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন! এটা অনভিপ্রেত অথবা নূন্যতম ধারণা না থাকায় আদিবাসী শব্দ ব্যবহার এবং স্বীকৃতি দাবি। আদিবাসী কাকে বলে তা জাতিসংঘের ঘোষণা পত্র সহ সংজ্ঞাটা যতসম্ভব জানা নেই ডক্টর তৌহিন মালিকের! উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘের আলাদা আলাদা ঘোষণা পত্র ILO রয়েছে। আদিবাসী শব্দ পরিহারে সরকারী ভাবে শুধুমাত্র দায়সারা পরিপত্র জারি করলেও আদিবাসী শব্দের তাৎপর্য সম্পর্কে সরকার যথার্থ প্রচার করেননি। আদিবাসী শব্দ সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা এবং এই শব্দ ব্যবহার ও স্বীকৃতি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর দিকগুলো সরকার তুলে ধরতে বর্থ্য হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে এদেশের অধিকাংশ মানুষ আদিবাসী শব্দের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে অক্ষম। বাংলাদেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠী নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি৷ পার্বত্য চুক্তিতেও উপজাতিরা তারা নিজেদের উপজাতি দাবি করে চুক্তি সাক্ষর করে সরকারের সঙ্গে। বেশিরভাগই উপজাতি তারা স্বীকার করে তাদের পূর্বের আবাসস্থল চম্পক নগর (বার্মা।) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা, খুমি, চাক সহ বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী পার্শবর্তী মায়ানমারের চম্পকনগর ও মঙ্গোলীয়া এবং ভারতের ভিন্ন অঙ্গরাজ্য হতে ১৫০০ শতকের পরে ও ১৭০০ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় প্রাপ্ত হয়ে অনুপ্রবেশ করে৷ ভিনদেশ হতে এই দেশে আগমণ করে যদি তারা আদিবাসী হয় তাহলে রাষ্ট্রের মূল জনগোষ্ঠী বাংগালীরা পরবাসী নয় কি? এ দেশে বাংগালী বসবাসের ইতিহাসও কম নয়। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি, সুতরাং তারা কোনভাবেই আদিবাসী নয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা মতে যথাস্থানে কয়েক হাজার বছর বসবাসের ইতিহাস থাকতে হবে, এমনকি যাদের বসবাসের কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি ও যাদের ১৫ শতের অধিক ভাষা রয়েছে এবং যাদের রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি। নূন্যতম এই দিকগুলো যাদের মধ্যে বিদ্দমান তারাই আদিবাসী জনগোষ্ঠী। যেমন ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী আদিবাসী, তাদের Indigenous People বলা হয়৷ তাদের জীবনমান আদিবাসী সূলভ এবং শাসন ব্যবস্থা ও বসবাসের ইতিহাস হাজার বছরেরও অধিক। Oxford ডিকশনারীর তথ্য মতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১। ব্রাজিল আদিবাসী, ২। অস্ট্রেলিয়ার টরেস প্রণালীর তীরে বসবাস করা অধিবাসীরাও আদিবাসী, তাদের Abroginal বলা হয়। ৩। মার্কিন অধিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হয়, তারাও আদিবাসী। এদেশের বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণা বইয়ের তথ্য মতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি জনগণের এই দেশে বসবাসের সঠিক ইতিহাস মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ বছর! কোন মত তার অধিক নয়। ইতিহাস অনুযায়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠী হওয়ার মতো প্রমাণাদি বহন করেনা তাদের অতীব ও বর্তমান অবস্থান। মার্কিন অধিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হয় অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি নেই! পার্শবর্তী ভারতে এতগুলো জনজাতির বসবাস তাদের দেশেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি নেই! জনবহুল চীন এতো নৃ-তাত্বিক গোষ্ঠীর বসবাসের স্বত্তেও তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি নেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা ও জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ এর ঘোষণা পত্র জানেনা। উপজাতিদেরও আদিবাসী বলে! কোন কিছু না জেনে না বুঝে শুধু আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি তুলে! আদিবাসী জনগোষ্ঠীর যেসকল সুযোগ সুবিধা ও অধিকারের কথা প্রণীত ILO 169-189-107 তে বলা হয়েছে তা বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র দেশের পক্ষে কি মানা সম্ভব? আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও স্বায়ত্তশাসন অধিকার, এবং স্বাধীনতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ অথাৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠী যদি মনে করে তারা কোন রাষ্ট্রের অধিনে থাকবেনা তারা জাতিসংঘ আবেদন করে গণভোটের মাধ্যমে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে৷ যেটা করেছে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব- তিমুর এবং দক্ষিণ সুদানে৷ আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর তফাৎ না বুঝে সবকিছু গুলিয়ে ফেলা বাংগালীর কাজ। বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র৷ এখানে ৪৫ টির মতো নৃ-গোষ্ঠীের বসবাস। যদি এই নৃ-গোষ্ঠীকে সাংবিধানিক ভাবে আদিবাসী স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪৫টি প্রদেশ বা অঞ্চল সৃষ্টি হবে। সুতরাং আদিবাসী ও জনগোষ্ঠীর তফাৎ না বুঝে হাউমাউ আবেকবশত নৃ-গোষ্ঠী পরিচয়ের মানুষদের আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন এবং স্বীকৃতি রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্বে আঘাত হানার সামিল। অনেকেই অজ্ঞবশত করে সেটা ভিন্ন কথা৷ কিন্তু ডক্টর তৌহিন মালিকের মতো একজন সচেতন আইনজ্ঞ মানুষ যদি আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি তুলে তাহলে সাধারণ মানুষের আর উপজাতি আদিবাসী তাৎপর্য নিয়ে বোধগম্য হবে কবে? ২০১৫ সালে একবার ডক্টর তৌহিন মালিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/ উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, পরোক্ষণে আমাদের প্রতিবাদ ও আইনগত ব্যাখা দেওয়ার পরে তিনি পোস্টটি এডিট করে উপজাতি লিখতে বাধ্য হন। ৫ বছর পর তিনি আবার সেম কাজ করে উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার ক্ষোভটা দেখালেন! উপজাতিরা এদেশে উপজাতি হিসেবে খারাপ কি আছে? বরং বাংগালীদের চেয়ে নাগরিক ও মৌলিক অধিকার সহ সর্বদিকে সুযোগ সুবিধা পেয়ে রাজার হালে আছে উপজাতিরা। তবুও উপজাতিদের আদিবাসী বানানোর চক্রান্ত কিছুতেই থামছে না।

আগের পোস্টবান্দরবানে ভূমি দখলের ধুয়ো তুলে সাধারণ ম্রোদের ইন্ধন দিয়ে রাস্তায় নামাচ্ছে কারা?
পরের পোস্টমিঠুল চাকমা বিশাল নামে মানবাধিকার কর্মী তার ব্যক্তিগত আক্রোশ হতে সম্প্রীতি বিনিষ্ট করতে তৎপর!

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন