||রুহুল আমিন তুহিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম||
এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাঁদাবাজির টাকার একটি অংশের ভাগ পাওয়া কথিত সংসদীয় ককাস বান্দরবানে পর্যটন নির্মাণের বিরোধিতা করে ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের ধুয়ো তুলে মিথ্যা-বানোয়াট প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাহাড়ের প্রকৃত ঘটনা প্রবাহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন্য অপচেষ্টা করে গত ১১-১১-২০২০ ইং! এই কথিত সংসদীয় ককাস নেতৃত্ব সৃষ্টিতে কারা তা আগে জেনে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ককাসে রয়েছে কারা তা জানতে পারলে হয়তো এতো সময় ব্যয় করে আর সম্পূর্ণ লেখা পড়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী যতো বিতর্কিত এমপি ও পাতি নেতা যারা আছে তাদের সকলেরই অবস্থান সংসদীয় ককাসে! সাংসদ রাশেদ খান মেনন এমপি, হাসানুল হক ইনু এমপি, এর অন্যতম কারিগর; আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, এ.কে.এম. ফজলুল হক এমপি ও আরোমা দত্ত এমপি; ককাসের উপদেষ্টা সাবেক উপদেষ্টা নাজমুল হক প্রধান ও আরেক সাবেক সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির নেতা ঊষাতন তালুকদার, যিনি রাঙামাটি আসনের ২০১৪ সালের এমপি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (শান্তিবাহিনী) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ও মানবাধিকার কর্মী রানা দাশগুপ্ত, ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য ঢাবি অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কথিত আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং ও জান্নাত-এ-ফেরদৌসী; ককাসের কমিউনিটি প্রতিনিধি রবীন্দনাথ সরেন, কাজল দেবনাথ, নির্মল রোজারিও এবং ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু।
ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন ককাস সৃষ্টি এবং ককাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কতটুকু নিরপেক্ষতা বজায় রাখার মতো! রাশেদ খান মেনন এমপি, হাসানুল হক ইনু এমপি, সঞ্জীব দ্রং গংদের ব্যক্তিগত অভিরুচি সম্পর্কে কারোরই অজানা নয়। কমবেশি সকলে তাদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম নিয়ে জ্ঞাত। রানা দাশগুপ্ত নিঃসন্দেহে এদেশে ভারতীয় এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। আর হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট করার অন্যতম কারিগর হিসেবে সে খুবই একজন জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী মতবাদের অনুসারী। কি ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে একটি মিথ্যা অভিযোগ সামনে এনে পাহাড়ের শান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলে তা থেকে কারো অনুমেয় করতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।
বিতর্কিত সংসদীয় ককাস-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আনীত অভিযোগ গুলো হুবহু তুলে ধরছি:
ম্রোদের উচ্ছেদ করে হোটেল নির্মাণের নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে সংসদীয় ককাস
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রু পাড়ায় ম্রো সম্প্রদায়ের ভূমিতে আর এন্ড আর হোল্ডিংস (সিকদার গ্রুপ) কোম্পানি কর্তৃক অবৈধভাবে ম্যারিয়ট হোটেল নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস।
আজ বুধবার (১১ নভেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নিন্দা ও ক্ষোভ জানায় সংসদীয় ককাস। ককাসের আহ্বায়ক ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ৪৮ কিলোমিটারে নাইতং পাহাড় সংগগ্ন কাপ্রুপাড়া, ইরাপাড়া, দোলাপাড়া ও কলাইপাড়া-সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় কয়েকশত ম্রো পরিবার শত শত বছর ধরে বসবাস ও জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই ভূমি ম্রোদের চিরায়ত ভূমি।
উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, সম্প্রতি সেখানে সিকদার গ্রুপ প্রায় ১০০০ একর ভূমি অবৈধভাবে দখল করে চন্দ্রনাথ পাহাড় নামকরণ করে বিলাসবহুল হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের তৎপরতা চালাচ্ছে। ফলে সেখানকার বংশপরম্পরায় যে ম্রোরা আছেন তারা ভিটে-মাটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। ম্রোদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এই নির্মাণ কাজ শুরু হলে চারটি পাড়া-সহ আশেপাশের প্রায় দশ হাজার ম্রো জনগন উচ্ছেদের মুখে পড়বে বলেও ককাস উদ্বিগ্ন।
এছাড়া ম্রোদের শ্মশানভূমি ও পানির উৎস দখল করে সেখানে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ম্রো পাড়ায়
লাল পতাকা ঝুলিয়ে স্থাপনা নির্মাণের জন্য সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে ম্রোদের জাতিগত
নিধন ত্বরান্বিত হবে বলেও সংসদীয় ককাস শংকা প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও স্থানীয়দের দেয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক
সংসদীয় ককাস আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের যে চিরায়ত ভূমিতে বসবাস ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ
করেন সেখানে তাদের বৈধ অধিকার রয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করে।
ককাস শংকা প্রকাশ করে আরো উল্লেখ করে যে, এভাবে চলতে থাকলে ম্রো’রা জাতিগত নিধনের শিকার হবেন। তাই অবিলম্বে সিকদার গ্রুপ-এর কাজ বন্ধ করে সরকারের পক্ষ থেকে ম্রো-সহ সকল পার্বত্য জনগোষ্টিকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করার আহবান জানান আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের
সদস্যবৃন্দ।
পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান ককাসের ব্যক্তিরা।
বিতর্কিত ও কতিপয় ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র মূলক চর্চা ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকার রিপোর্ট বিচার বিশ্লেষণ করে এটা প্রমাণিত যে তারা কেউ এদেশের ভালো চাইনা৷ ঘৃণিত অপরাধ সংঘটিত করা কেবলমাত্র তাদের প্রধান লক্ষ্য। ঠিক পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তাদেরও পূর্বের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকান্ড থেকে প্রতিয়মান যে বর্তমানেও তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে অত্যন্ত তৎপর। ককাস কর্তৃক আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। এটা হিংসার বহিঃপ্রকাশও বটে। বান্দরবান চিম্বুক পাহাড় বলেন আর কাপ্রুপাড়া, ইরাপাড়া, দোলাপাড়া ও কলাইপাড়া যা বলেন না কেন উক্ত এলাকা গুলোতে কোনধরনের ম্রো জাতি উচ্ছেদ হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি পর্যটন হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য ১০০০ একর পাহাড় দখল করে উপরোক্ত উল্লেখিত কর্তৃপক্ষ কোন ম্রো পরিবারকে উচ্ছেদ করেনি এবং ভবিষ্যতেও কোন ম্রো পরিবার উচ্ছেদ হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই তাদের কর্তৃক। হাতে নেওয়ার প্রকল্প হতে অনেক দুরত্ব স্থানে ম্রো সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি অবস্থিত। প্রকল্পর ফলে বিন্দুমাত্র ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা নেই ম্রো সম্প্রদায়ের। সরকারী খাস ভূমির উপর পর্যটন স্পষ্ট ও হোটেল মোটেল রেস্তোরাঁ নির্মাণ হবে। ম্রোদের দাবীকৃত ভূমির কোন বৈধ দালিলিক প্রমাণও নেই৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের প্রথাগত প্রচলিত নিয়মে ভূমি অধিকার বলে সমগ্রভূমি উপজাতীয় সম্প্রদায় দাবী করে আসছে। ম্রোদের দাবিকৃত খাস ভূমি গুলোর কোন প্রকার খাজনা পরিশোধের রেকর্ডও নেই! কোন আইনে তারা উক্ত ভূমি নিজেদের বলে দাবি করে তাও বোধগম্য নয়! মূলত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও তাদের দোসরা সাধারণ খেটে খাওয়া ম্রোদের উস্কে দিয়ে ভূমি দখলের অভিযোগ এনে মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে৷ অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ গুলো একপেশে প্রকাশ করা হয়েছে। বিতর্কিত ককাসের আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। সংবাদমাধ্যম ও তাদের চাঁদাবাজ প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য নির্ভর করে একটি কাল্পনিক মিথ্যাচার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেন৷ যা অনভিপ্রেত এবং একটি ষড়যন্ত্র মাত্র।