প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে আসছে।পৃথিবীর সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্য দেখায় মানুষ সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়েছে-বিক্ষুদ্ধ মহা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে অজানা অচিন দেশে।
মানুষের এই দুর্নিবার ভ্রমনাকাঙ্ক্ষা থেকেই পর্যটন শিল্পের উৎপত্তি।
বর্তমানে পর্যটন মানুষের জন্য একটি শখ ও নেশায় পরিণত হয়েছে।শধু তাই নয় পর্যটন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেও সক্ষম।
পর্যটনের সজ্ঞায়ণ সম্পর্কে মতবিরোধ থাকলেও AIEST এর সজ্ঞাটা আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে।AIEST এর মতে ‘কোন উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নয় এবং স্থায়ী ভাবে বসতি গড়ে না এমন ব্যক্তির ভ্রমণ এবং কোথাও থাকা থেকে উৎসারিত প্রপঞ্চ ও সম্পর্কের সমষ্টি হচ্ছে পর্যটন।
আশা করি পর্যটন সম্পর্কে পাঠকগণ একটি সঠিক ধারণা পেয়েছেন;এখন আশি মূল আলোচনায়।
শিরোনামের বিষয় হলো পাহাড়ে পর্যটন শিল্পঃসমস্যা ও সম্ভাবনা।প্রথমেই সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
বহুবিদ সমস্যার আবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটনশিল্প সংকটাপন্ন।
লেক, পাহাড়, মেঘের হাতছানি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিস্তৃত এই পার্বত্য জনপদে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আর বাড়াবার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটনশিল্পের আশানুরূপ বিকাশ ঘটছেনা।
অতি সংক্ষেপে পাহাড়ের পর্যটনশিল্পের সমস্যা নিয়ে বলতে গেলে চোখের সামনে যা ভেসে আসে তা হলঃ
১. যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সমস্যা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থান গুলো প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকয় এ সকল স্থানে যাতায়াতের উন্নত তেমন ব্যবস্থা নেই।
কিছু দর্শনীয় এলাকায় যোগাযোগের নূনতম ব্যবস্থা থাকলেও বাসস্থানের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক কোন হোটেল,মোটেলের ব্যবস্থা নেই।
২. সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগের অভাব।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি উদ্যোগে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরকে উৎসাহিত করার কোন পদক্ষেপ দেখতে পাই না।
এবং পাহাড়ে সরকারি পর্যটন দপ্তরে স্বয়ংসম্পূর্ণ তেমন কোন প্রমশন বিভাগ নেই।
বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন এলাকায় পর্যটন খাতকে উন্নতিকরণে বেসরকারি সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পাহাড়ে পর্যটন খাতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ নেই।
৩. পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলোর সার্বক্ষণিক মারমূখী অবস্থান।
পাহাড়ে আঞ্চলিক দল গুলোর আন্তঃকোন্দলে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে সার্বক্ষণিক অস্থিরতা বিরাজ করে পাহাড়ি জনপদে।তাছাড়াও পর্যটকদের টার্গেট করে উপজাতি সন্ত্রাসী দল গুলোর বেপরোয়া চাঁদাবাজী অনেক ক্ষেত্রে পর্যটকদের হতাশ করে। ফলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাঃ
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর আয়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উৎস হলো পর্যটন খাত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক শোভা।
বিস্তীর্ণ পাহাড়-পর্বত, হ্রদ, পাহাড়ি ঝর্ণা এবং ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রভৃতি পাহাড়ের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ।
তাই প্রাচীন কাল থেকে জ্ঞানী -গুণী, দেশী-বিদেশী পর্যটক পার্বত্য চট্টগ্রামে পা রেখে এখানকার রূপসী সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে।
প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক এই পর্যটন আকর্ষণকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিপুল পরিমান দেশী এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সক্ষম হবে।
অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
পাহাড়ের পর্যটন শিল্পের সংকটের উত্তরণ এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
১..পাহাড়ের আকর্ষনীয় পর্যটন স্থানগুলো সু-পরিকল্পিত ভাবে দেশী বিদেশী পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
২. পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে সন্দেহজনক স্থানগুলোতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
৩. দর্শনীয় স্থানসমূহে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের আরামদায়ক বাসস্থানের জন্য পাঁচ তারকা হোটেল সহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. ফিল্ম ও ভিডিও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে পাহাড়ের আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।
৬. পর্যটকদের টার্গেট করে চাঁদা উত্তোলনকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কর্তৃক অব্যাহতভাবে চিরনি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
লেখক: এনামুল হক, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক এবং ব্লগার পার্বত্য চট্টগ্রাম।