||প্রেস বিজ্ঞপ্তি||
বান্দরবান চন্দ্রপাহাড় পর্যটন শিল্প বিকাশে এখানকার উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনমানে ছোঁয়া লাগবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বান্দরবান এর পাহাড়ি এলাকা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অত্র এলাকার শৈল্পীক মান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগনের জীবনযাত্রার মানোয়ন্নয়ন হবে। আজ ১৮ ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানায় বান্দরবান সেনা রিজিয়ন।
প্রকৃতির চির সবুজ শৈল শ্রেণীর কোলে গড়া নৈসর্গীক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান পার্বত্য জেলা। বিশ্বের মানচিত্রে এর অবস্থান পূর্বে ভারত,
পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, দক্ষিণে মায়ানমার এবং উত্তরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭৯.০৩ বর্গ কিলোমিটার। ব্রিটিশ শাসন আমলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময়ে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অধীনে ছিল। বান্দরবান জেলা ১৯৫১ সালে মহকুমা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন লামা মহকুমার ভৌগলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসমূহ ৭টি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ জেলার প্রধান গিরি শ্রেণীর মধ্যে মিরিঞ্জা, ওয়ালটং, তামাবং এবং পলিতাই উল্লেখযোগ্য। এখানকার পাহাড় শ্রেণী সমুদ্র পৃষ্ট হতে ৩০০-১১০০ মিটার উচ্চে অবস্থিত। সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং বাঁকখালী জেলার প্রধান নদী। উক্ত জেলার তিনটি উচ্চতম পাহাড় হল তাজিংডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং। চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। কেবল পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশই পারে এ জেলার মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে। এ জেলায় ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাঙ্গালীসহ মোট ১২টি জাতি গোষ্ঠি বাস করছে। স্বকীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে প্রতিটি নৃ- গোষ্ঠীই এখানে সম্প্রীতির বন্ধনে নিজেদের বিকাশের গতি ধরেছে।
সম্প্রীতি এ জেলার অহংকার। পর্যটন শিল্পের বিকাশে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হবে নৈসর্গীক সৌন্দর্যে ঘেরা বান্দরবান। সবুজের চাদরে ঘেরা এলাকাটির পাহাড়গুলি মনে হয় কিছুক্ষণ পর পরই মেঘের সাথে লুকোচুরী খেলে আর পর্যটকদের মেঘের চাদরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবুজ পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে যাচ্ছে ছোট বড় অসংখ্য ঝরনা, বাঁচিয়ে রেখেছে জীব বৈচিত্র আর নানা রংঙের ফুল ও ফলের সমাহারে সমৃদ্ধ করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিকে করেছে অর্থনীতির চাকা সচল। পৃথিবীর অন্যান্ন দেশে যেমন নৈসর্গীক সৌন্দর্যকে পূজিকরে পর্যটন শীল্প গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বেসামরিক উদ্যোগে বান্দরবানও হতে পারে.পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। বদলে যাবে বান্দরবান এলাকার জীবন
ব্যবসহা পাবে আধুনিক ছোঁয়া।
চন্দ্রপাহাড়ের অবস্থানঃ
বান্দরবান থানচি সড়কের নীলগিরির নিকটবর্তী একটি সহান চন্দ্রপাহাড়।
সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ২৪০০ ফুট উপরে চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ স্থানে চন্দ্র পাহাড়ের অবস্থান। উপরের বিস্তৃত নীল আকাশ, নীচে সবুজের গালিচা, যে দিকে চোখ যায় দিগন্ত রেখা পর্যন্ত শুধু ছোট বড় পাহাড় দেখা যায়। গোধুলির আলো আঁধারিতে সূর্যাস্তের লাল আভার সঙ্গে যে দিকেই.চোখ পড়ে দেখা যায় সাদা মেঘের ভেলা ও একরাশ নীল আকাশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন এক অপার সৌন্দর্য অবগাহনের স্থান চন্দ্রপাহাড়, যাকে
ঘিরে বিকশিত হচ্ছে পর্যটন শিল্প।
চিম্বুক রেঞ্জের এই নয়নাভিরাম এলাকা যার নাম পাহাড়িদের কাছে নাইতং পাহাড় নামে পরিচিত। আবার অনেকে চন্দ্র পাহাড় নামে জানে। অত্র এলাকাটি বান্দরবান জেলার আওতাধীন উত্তরে উঁচু-নীচু লামা উপজেলার আওতাধীন চন্দ্র পাহাড়ের পূর্ব দিকে থানচি সড়ক, পশ্চিমে নীচু পাহাড়, উত্তরে পাহাড় এবং দক্ষিণে ৯০০ পাহাড়ের ঢাল। বান্দরবান সদর থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে থানচি প্রধান সড়ক ও লামা উপজেলার সীমানা লাগোয়া স্থানে আশেপাশে নেই কোন জনবসতি ও লোকালয়। চন্দ্রপাহাড়ের নিকটবর্তী চারটি পাড়া/লোকালয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, কাপ্রুপাড়া, ধলাপাড়া, এরাপাড়া ও কলাইপাড়া। চন্দ্রপাহাড় থেকে কাপ্রুপাড়া ৩.৫ কিঃ মিঃ উত্তর-পশ্চিমে,
ধলাইপাড়া ২.১ কিঃ মিঃ দক্ষিণে এবং কলাই পাড়া ০৫ কিঃ মিঃ পূর্বে অবস্থিত। উক্ত গ্রাম সমূহে ম্রো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি বসবাস করে।
পর্যটন পরিকল্পনাঃ
চিম্বুক রেঞ্জে অবস্থিত চন্দ্রপাহাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সময় উপযোগী যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। উক্ত উদ্যোগকে ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের লক্ষে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট এর পক্ষে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সাথে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তিতে তৎকালীন ও বর্তমান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট ভূমি উন্নয়নে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। পর্যটন শিল্প বিকাশে জনস্বার্থ পরিপন্থি কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং স্থানীয় উপজাতীদের জীবন যাপন ও আচরণ বিঘ্নিত করে এরুপ কার্যক্রম চুক্তির আওতাভূক্ত করা হয়নি।
পর্যটন শিল্প পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। বর্তমানে সরকারী খাস খতিয়ানের ২০ একর জায়গায় একটি উন্নতমানের হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি ঠিক রেখে উন্নত নির্মাণ শৈলীর আদলে তৈরী করা হবে। উক্ত জায়গাটি একটি তৃতীয় শ্রেণীর জায়গা এবং বসবাসের অযোগ্য। উক্ত জায়গাটিতে কোন রাস্তা-ঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোন নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই। উক্ত এলাকাতে বর্তমানে লোক বসবাসও করছে না। ঐ এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের উপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
পর্যটক বান্ধব ব্যবস্থাঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে গত ১৬ জুন ২০১৬ তারিখে “আর্মি ওয়েলফেরার ট্রাষ্ট ও আরএন্ডআর হোল্ডিং
লিমিটেড” এর যৌথ উদ্যেগে চন্দ্রপাহাড়ের পরিত্যক্ত গভীর জংগল বিশিষ্ট এই জায়গায় একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। অত্র রিসোর্টটিকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার জন্য বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন ম্যারিয়ট হোটেল এর শাখা স্থাপনের কাজ প্রত্রিুয়াধীন রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য স্থাপনার সাথে মিল রেখে এখানে সকল রকম সুযোগ সুবিধা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে উপজাতি শপিং কমপ্লেক্স, সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম, বিভিন্ন রকমের রাইডস, বাচ্চাদের খেলার জায়গা এবং আন্তর্জাতিকমানের রেস্তোরাসহ।বিনোদনের ব্যবসহা, নীলগিরি সাথে ক্যাবল কার সংযোগ স্থাপন এবং নিজস্ব হেলিপ্যাড ইত্যাদি। নিরাপত্তাবাহিনী দ্বারা পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পর্যটনের প্রভাবঃ
উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বান্দরবান এর পাহাড়ি এলাকা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে অত্র এলাকার শৈল্পীক মান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগনের জীবনযাত্রার মানোয়ন্নয়ন হবে।
পাহাড়ি জনগন তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য আগত পর্যটকদের কাছে।ন্যায্যমূল্যে বিত্রুয় করতে পারবে। রাস্তার দুই পাশে ফলের দোকান ও রেস্তোরা দিয়ে উপজাতীয় জনগন তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও স্থানীয় লোকজন পর্যটক গাইড হিসেবে নিয়োজিত থাকতে পারবে। উপজাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক।কর্মকান্ডের আরো বিকাশ ঘটবে। পর্যটন ভিত্তিক মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে।উঠবে। পর্যটকদের চলাচলে পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানসহ নানা অর্থনতিক কর্মকান্ডের সৃষ্টি হবে। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জীবনমানের উন্নতি হবে। এছাড়াও উপজাতীয় শপিং কমপ্লেক্স এ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোষাক ও হাতের তৈরী দ্রব্যাদি বিক্রির মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষভাবে হাজার হাজার পাহাড়ী জনগনের কর্মসংস্থানের ব্যবসহা হবে। পাহাড়ী উপজাতীদের পানি সমস্যা দূরীভূত।হবে। পাহাড়ে দূর্গম সহানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। উক্ত অঞ্চলে নিরীহ উপজাতীয় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। শুধু তাই নয়, চন্দ্র পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে বিদেশী পর্যটকরাও
বান্দরবানের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এর ফলে প্রতি বছর বহু সংখ্যক বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী হবে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। এশিয়ার অন্য দেশগুলো যেমন, থাইল্যান্ড (ফি ফি আইল্যান্ড, ক্রুবি, ফুকেট), ভিয়েতনাম (মার্বেল পর্বতমালা) এবং মালয়েশিয়ার মাউন্ট কিনাবালু ও ক্যামরতন পার্বত্য অঞ্চল ইত্যাদি দেশসমূহ পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈশ্বিক অঙ্গনে এক নতুন শিল্পায়িত দেশে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি উন্নত দেশই তাদের রুপ বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বিশেষ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে অর্থনতিক সক্ষমতা অর্জন করেছে। অনুরূপভাবে চন্দ্র পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের মত স্বচ্ছলতা অর্জনে সক্ষম হবে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম একটি ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।