সাধারণত কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি হলে কিংবা চলমান অবস্থায় আইন – শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার স্থলে যারা থাকে সবাইকে এলোপাতাড়ি লাঠি চার্জ করতে দেখা যায়। কিন্তু এক পক্ষের হামলার শিকার হওয়া মানুষ ও তাদের উদ্ধারে যাওয়া মানুষদের লাঠি পিটা করতে কোনদিন শুনিনি। গতকাল ৪ এপ্রিল খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা তবলছড়ি লাইসা কুমার পাড়া ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা চড়া হয় হতদরিদ্র বাঙ্গালি কৃষকদের উপর। বাঙ্গালিরা নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে তাদের উপর বর্বরোচিতভাবে হামলা করে ইউপিডিএফ। সন্ত্রাসীদের গুলিতে মনির হোসেন নামের একবাঙ্গালী সহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। ছাড়া গতকালের হামলায় অন্তত ২০ জন বাঙ্গালি আহত হয়েছে। ওই এলাকায় তখন ২০/৩০ জন বাঙ্গালিকে সন্ত্রাসীরা হামলা করে জিম্মি করে রাখে। ঘটনাটির খবর খাগড়াছড়ি জেলা অতিক্রম করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে পৌছে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বাঙ্গালিদের মামলা করে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত করছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ অতিষ্ঠ। ঘটনারস্থলে রক্তাক্ত বাঙ্গালি দেখে উদ্ধারে যাওয়া বাঙ্গালিরা কিছু ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পরে ঘটনার স্থলে বিজিবি’র সদস্যরা গিয়েছে। তারা কোন দাঙ্গাহাঙ্গামা ছাড়া সাধারণ বাঙ্গালিদের উপর লাঠি চার্জ করে। এতে অনেক বাঙ্গালি আহত হয়। একদিকে সন্ত্রাসী হামলা অন্যদিকে বিজিবি’র হামলা বাঙ্গালিরা কিছুটা হতবিহ্বল হয়। বাঙ্গালিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে৷ বাঙ্গালিরা বিজিবির লাঠি চার্জের প্রতিবাদ জানায়। এবং বিজিবির গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিষয়টি নাকি বিজিবি’র এক কতিপয় অফিসার মাইন্ড করেছে৷ সে পরক্ষণেই বলেছে সে আর ওই এলাকার বিজিবি ক্যাম্পে চাকরি করবে না এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবে না। তার আস্কারা ও ইন্ধন পেয়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা আজ ৫ এপ্রিল সকাল ৯টায় উক্ত এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয় এবং বাঙ্গালিদের উপর হামলা করার চেষ্টা করে। বিজিবি যদি ওই এলাকায় একটা টহল রাখতো কিংবা সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য একটু সজাগ হতো তাহলে সন্ত্রাসীরা বারবার এলাকায় এসে অস্ত্র মহড়া এবং হামলা চালানোর মতো এতটা সাহস দেখাত না।
আজ আবার রাত ৯ টায় ইসলামপুর এলাকায় ইউপিডিএফ সশস্ত্র অবস্থায় এসে বাঙ্গালিদের মারধর করে ঘর থেকে বাহির করে দেয়৷ ১০০০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বিজিবি খবর পেয়েও তাৎক্ষণিক ঘটনারস্থলে আসেনি। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নৈপূন্যে বিজিবির কর্মকর্তার ইন্ধন থাকতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করে। বিজিবি’র কতিপয় অফিসার হতদরিদ্র খেটে খাওয়া বাঙ্গালিদের উপর নাখোশ হয়ে সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। বিজিবি’র অফিসারের বলি হয় সাধারণ বাঙ্গালিরা। বিজিবি যদি বাঙ্গালির নিরাপত্তা দিতে অপারগ হয় তাহলে তাদের বাঙ্গালির নিরাপত্তা তাদের দিতে বলে কে? তারা সেখান থেকে চলে যাক। স্থানীয় বাঙ্গালিরা নিজেদের নিরাপত্তা অন্যান্য আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। ১৯৭৯ সাল, ১৯৮৪ সাল ১৯৮৬ সাল, ১৯৯২ সাল ও ১৯৯৬ সালের উপজাতি সন্ত্রাসীদের গণহত্যা মোকাবেলা করে পাহাড়ের বাঙ্গালিরা টিকে আছে। বাঙ্গালিদের এতো দূর্বল মনে করার কারণ নেই। বিজিবি’র কাজ সীমান্তে পাহারা দেওয়া জনগণের জননিরাপত্তা বিজিবি’র কাজ নয়। বিজিবি অফিসার নিজেকে জাহির করতে গিয়ে রাস্ট্র ও বাঙ্গালি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মাটিরাঙ্গা এলাকায় বড় ধরনের কোন ঘটনা সংগঠিত হলে তার দায়ভার বিজিবির কতিপয় কর্মকর্তাকে নিতে হবে বলে মনে করে মাটিরাঙ্গার মানুষ ৷ কারণ বারবার বাঙ্গালিদের উপর হামলা করার পরেও বিজিবি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাধারণ মানুষদের বিজিবি ঐক্যবদ্ধ হতে দেয়নি। আজকে রাতে বিজিবি ছাড়া বাঙ্গালিরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। হাজার হাজার বাঙ্গালি সংঘবদ্ধ ভাবে ডিউটি পালন করে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তবলছড়ি হতে এক বাঙ্গালি জানান, আজকে সন্ত্রাসী হামলার পেছন বিজিবি জড়িত। বিজিবির ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে এসে মহড়া দিয়েছে। আর বাঙ্গালিদের বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে বাহির করে দিয়েছে।
সাম্প্রদায়িক কোন দাঙ্গাহাঙ্গামা ছাড়া আহত বাঙ্গালিদের উপর লাঠি চার্জ কোন আইনে বিজিবি করেছে? ওর আগেও বিজিবি মাটিরাঙ্গা ৪জন বাঙ্গালিকে গাছের গাড়ি হতে চাঁদা না পেয়ে গুলি করে হত্যা করে। অথচ তখন বিদ্যুৎের লাইনের উপর গাছ থাকার কারণে বিদ্যুত বিভাগ ৪ জন কাজের শ্রমিক নিয়ে গাছ কাটে। সে গাছের গাড়ি নেওয়ার সময় চাঁদা না দেওয়ার কারণে বিজিবি ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি করে এক পরিবার থেকে ৩ তিনজনকে সহ ৪ জনকে হত্যা করে। এদেশের দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসারকে বিজিবি হত্যা করে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত পশুর মতো নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে বিএসএফ। সেখানে বিজিবি কে কার্যকারী ভাবে দেখা যায় না। আসছে এদেশের মানুষের সাথে শক্তি দেখাতে। এই বিজিবি বাহিনী এদেশের জনগণ আর চায় না। যারা সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অফিসারদের হত্যা করে সেনা পরিবারের সদস্যদের সোনাদানা, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের দিয়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তা করা এবং পার্বত্য বাঙ্গালির নিরাপত্তা দেওয়া হাস্যকর। আর এরা ইউপিডিএফ- জেএসএস বিরুদ্ধে কিছু করবে সে চিন্তা তো দূরে কথা।
লেখক: আহসান হাবিব, তবলছড়ি মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি।