ইউপিডিএফ চুক্তির বিরোধিতা করে আবার কিন্তু চুক্তির সে সুফলও ভোগ করে!

0

কৌশিক দাস, খাগড়াছড়ি

পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬-শে ডিসেম্বর রাজধানীর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাকালীন ইউপিডিএফের শ্লোগান ও দাবি ছিল “পুনস্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান পথ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু সরকারের সঙ্গে যে, পার্বত্য চুক্তি করেছে, এই চুক্তি পার্বত্য উপজাতি জনগণ এবং আমরা ইউপিডিএফ মানি না।” এমনই সুর ছিল ইউপিডিএফের। তৎকালীন
ইউপিডিএফ আরো বলে, “এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার আদায় হয়নি।”
অথচ, এসমস্ত বেফাঁস কথাবার্তা বলে ইউপিডিএফ তৎকালীন পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে নিজেদের যাত্রা শুরু করে। ইউপিডিএফ-এর এই স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন কতটুকু বেগবান হয়েছে তা ইতোমধ্যে পার্বত্যবাসী জেনেছে। আর কতজন মায়ের বুক খালি করেছে তারা? তা কি কারোরই অজানা? সবই জানেন পার্বত্যবাসী।
হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি তো প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে। ইউপিডিএফ উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকারের দোহাই দিলেও এখন পর্যন্ত উপজাতি জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য কি করতে পেরেছে? রাষ্ট্র ও সরকার থেকে ইউপিডিএফ কি আদায় করতে পেরেছে? তারা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, খুন-গুম আধিপত্য বিস্তার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করণ ছাড়া আর কি বা করেছে? স্বজাতি ও বাঙ্গালি হত্যার মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির করে উদ্দেশ্য হাসিল করায় ইউপিডিএফ গঠন। চাঁদাবাজি করার জন্য এবং আধিপত্য বিস্তার করার জন্য মূলত গঠন হয়েছে ১৯৯৮ সালের ২৬ – শে ডিসেম্বর। জাতির অধিকার এটা তাদের টিকে থাকার হাতিয়ার।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) ও তৎকালীন সরকার শেখহাসিনার মধ্যকার পার্বত্য চুক্তি যদিও অসাংবিধানিক। এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য বাঙ্গালি জনপদের অধিকার খর্ব করা হলেও উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার সম্পূর্ণ আদায় হয়েছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে বেশিরভাগই ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রের সংবিধানকে লঙ্ঘন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত করা হয়। এই চুক্তিতে উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকারের কথা প্রতিটি ধারায় উপধারায় বলা হয়েছে। এরপরও ইউপিডিএফ-এর পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করা হাস্যকর এবং দুঃখজনক।
এক সমীকরণে দেখা গেছে ১৯৯৭-এর পার্বত্য চুক্তির পর থেকে আজ পর্যন্ত ২৩টি বছর পার্বত্য চুক্তির অধিকাংশ সুফল ইউপিডিএফ ও তার অন্ধ সমর্থকরা ভোগ করে আসছে। ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা ও ইউপিডিএফের ছেলে-সন্তানরা সরকারি চাকরি, শিক্ষাবৃত্তি, উপজাতি কোটা, সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ ও জীবনমানের প্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ইউপিডিএফ ভোগ করে আসছে। ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন সরকারি চাকরি নিয়েছে চুক্তির সুফল উপজাতি কোটির ভিত্তিতে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকারি সুযোগ-সুবিধা ইউপিডিএফ ও তার সমর্থকরা বরাবরই আদায় করে নিয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের এবং প্রশ্নের বিষয় হলো ইউপিডিএফ কোন মুখে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করেছিল এবং এখনো করছে??

সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো; এই ইউপিডিএফ চুক্তির বিরোধিতা করে আবার চুক্তির শর্ত মোতাবেক সেনা প্রত্যাহারের দাবি তুলে!! এটা যেমন হাস্যকর তেমনি লজ্জাজনকও বটে। জ্ঞানপাপী মানুষ দিয়ে জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন করা “ইউপিডিএফ” চুক্তির বিরোধিতা করে বছরের পর বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। এটা কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। জেএসএস ও সরকার মধ্যকার চুক্তির বিরোধিতা করে আবার চুক্তির সে সুফল ভোগ করে। বিপদে পড়লে পার্বত্য চুক্তিরও দোহাই দেয়! উপজাতি জনগোষ্ঠী বুঝে গেছে ইউপিডিএফ-এর ভাঁওতাবাজি সম্পর্কে। চুক্তির বিরোধিতা করে অস্ত্র নিয়ে ইউপিডিএফ গঠন করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করে তুলছে ইউপিডিএফ। তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে৷ চাঁদাবাজি, খুন-গুমে এ এক অতিষ্ঠ জনপদ পার্বত্যবাসী।
ইউপিডিএফ-এর মতো নির্লজ্জ বেহায়া সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীর কর্ণাধার হতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ সে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছে। ইউপিডিএফ এখন যে সব দাবিদাওয়া নিয়ে খুন-গুম ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বজাতি এবং বাঙ্গালি হত্যা করছে তা একমাত্র চাঁদাবাজি মঞ্চ টিকিয়ে রাখার জন্য করছে। চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানুষের রক্ত চুষে খাওয়ার মানসেই তৎপরতা। পাহাড় থেকে যে ৭০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয় তার ৪০০ কোটি টাকা ইউপিডিএফ নিজেই আদায় করে। চাঁদাবাজির ৫০% ইউপিডিএফের শীর্ষ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ৪০% সশস্ত্র গ্রুপের জন্য অস্ত্র ক্রয়, বেতনবাতা এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদের পেছনে ব্যয় করা হয়। বাকী অবশিষ্ট ১০% এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, তথাকথিত গণমাধ্যম, ভাড়াটে বুদ্ধিজীবি ও সুশীল, রাম-বামদের দেওয়া হয়।

আগের পোস্টপাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে সামরিক অভিযানের বিকল্প নেই।
পরের পোস্টপাহাড় নিয়ে গুজব রটিয়ে সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ইমতিয়াজ মাহমুদ নারী লোভী নিকৃষ্ট ব্যক্তি

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন