কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ভূষণছড়া বাঙালি গণহত্যার ইতিহাস!
গণহত্যা এমন একটি শব্দ, যা কোনো জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত, বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত সহিংসতাকে বর্ণনা করে। এই শব্দটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। গণহত্যার সময় একটি জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা হলো: গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা, মারাত্মক শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা, গোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি কঠিন করে তোলা, আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা, এবং শিশু, বৃদ্ধ, বা নারী-পুরুষ কাউকে রেহাই না দেওয়া।
গণহত্যার “ধ্বংসের অভিপ্রায়” এটিকে জাতিগত নির্মূলকরণ বা মানবতার বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধ থেকে পৃথক করে, যেমন কোনো গোষ্ঠীকে ভৌগোলিক অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করা ‘হত্যা, জোরপূর্বক নির্বাসন, এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের নির্মূল করতে এই গণহত্যার সব ধাপই প্রয়োগ করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ৪৬টি ছোট-বড় গণহত্যার মধ্যে অন্যতম হলো রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গণহত্যা। এই গণহত্যার খবর দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তৎকালীন প্রশাসনের অভূতপূর্ব কারসাজির কারণে প্রকাশিত হয়নি। ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই মারাত্মক ছিল যে, প্রশাসন তৎকালীন সময়ে এ বিষয়ে প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মূলত প্রশাসনের অসহযোগিতা ও নিষ্ঠুরতার কারণে এই নৃশংস গণহত্যার ইতিহাস প্রায় মুছে গেছে।
১৯৮৪ সালের ৩১ মে, রাতের অন্ধকারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) প্রকাশ্যে শান্তিবাহিনীর সন্তু গংদের হাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয় প্রায় ৩০০ পরিবারের সদস্য। গণহত্যার শিকার এই মানুষগুলো সবাই ছিল বাঙালি। তাদের একমাত্র অপরাধ ছিল, তারা ১৯৭৯ সালে সরকারের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত হয়েছিল। এই অপরাধে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে গণহত্যার মাধ্যমে তাদের নিধনের চেষ্টা করে। তৎকালীন শান্তিবাহিনীর মেজর রাজেশ চাকমার নেতৃত্বে এই নৃশংস, জঘন্য, ও ঘৃণিত অপরাধমূলক গণহত্যা সংঘটিত হয়, যা পার্বত্য ইতিহাসে এক কলঙ্কময় ঘটনা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই রাজেশ চাকমা কে? রাজেশ চাকমা হলেন ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য মণি স্বপন দেওয়ান। বিএনপি সরকার তাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীও নিয়োগ করেছিল। একজন খুনিকে দলে নেওয়া এবং মন্ত্রী করার কারণে ভূষণছড়া গণহত্যায় শহিদ হওয়া পরিবারগুলোর সদস্যরা এখনো ক্ষোভে ফুঁসছে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি এই খুনি মণি স্বপন দেওয়ানকে রাঙামাটি আসন থেকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছিল!
ভূষণছড়া গণহত্যা সম্পর্কে বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে বর্ণনা করলেও, মূলত একজন লেখকের লেখায় কিছুটা হলেও বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও, নৃশংসতার বিবরণ তার লেখা পার্বত্য বিষয়ক বইগুলোতে উঠে এসেছে। আমি বলছি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আতিকুর রহমানের কথা। তার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সব বইতেই এখানকার চরম বাস্তবতা মোটামুটি ফুটে উঠেছে। তিনি দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং শুধু এই বিষয়ের উপরেই তার ১১টিরও বেশি বই রয়েছে। তার “পার্বত্য তথ্য কোষ” এর তৃতীয় ও সপ্তম খণ্ডে ভূষণছড়া গণহত্যার উপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ১ ও ২-এ তিনি এই গণহত্যার মর্মন্তুদ ও হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরেছেন। তার প্রতিটি বইয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। পার্বত্য বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে তথ্যের উৎস হিসেবে তার বইগুলো ব্যবহার করা ছাড়া বিকল্প নেই।
“কলা বন্যা, গোরস্তান, ভূষণছড়া, হরিণা হয়ে ঠেগামুখ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিশাল এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াল নিস্তব্ধতা নেমে আসত। কুকুর-শিয়ালেরও কোনো শব্দ শোনা যেত না। আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি সদস্যরাও ক্যাম্পে বন্দি থাকত। কারণ, তৎকালীন তথাকথিত শান্তিবাহিনীর ভয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ক্যাম্পে ফিরে যেত। সেদিন হঠাৎ অতর্কিতে বাইরে থেকে গুলির শব্দ শোনা গেল। তৎক্ষণাৎ ঘটনা শুরু হলো। চারদিকে ঘরবাড়িতে লেলিহান আগুন জ্বলে উঠল। আহত ও নিহত মানুষের ভয়াল চিৎকার, গুলির শব্দ, জ্বলন্ত ঘরের বাঁশ ফাটার আওয়াজ, এবং আক্রমণকারীদের উল্লাসমুখর হ্রেষাধ্বনি একাকার হয়ে গেল। এভাবে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, আর্তনাদ, এবং উল্লাসের মধ্যে এক দীর্ঘ গজবি রাত শুরু হলো। চিৎকার, আহাজারি, ও মাতমের মধ্যে সূর্যোদয়ে জেগে উঠল এক পর্যুদস্ত জনপদ। হতভাগা জীবিতরা আর্তনাদে পুরো পরিবেশ ভরিয়ে তুলল। অসংখ্য আহত মানুষ ঘরে ও বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। পোড়া ভিটা, পথঘাট, ও পাড়ায় লাশে লাশে ভরে গিয়েছিল। সবাই ভীত ও বিহ্বল। এত লাশ, রক্ত, এবং এত বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ—মাত্র অর্ধরাতের মধ্যে এলাকাটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল।”
অভূতপূর্ব নৃশংসতা। অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা। ওয়ারলেসের মাধ্যমে এই ধ্বংসাত্মক ঘটনার কথা স্থানীয় বিডিআর ও আর্মি কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। শুরু হয় কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ, আগমন, এবং পরিদর্শন। চলতে থাকে লাশ কবরস্থ করার প্রক্রিয়া এবং ঘটনা গোপন রাখার চেষ্টা।
ঘটনাটি যে কতটা ভয়াবহ, মর্মন্তুদ, এবং অমানবিক, এবং শান্তিবাহিনী যে কতটা হিংস্র, পাশবিক, মানবতাবিরোধী, ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন, তা প্রচারের সুযোগও এড়ানো হয়। খবর প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল যে, জাতীয়ভাবে ঘটনাটি প্রচারিত হলে তা বিক্ষোভ ও অশান্তির সূচনা করবে এবং দেশজুড়ে উপজাতীয়রা বিপন্ন হয়ে পড়বে।
ঘটনার ভয়াবহতা এবং সরকারি নিষ্ক্রিয়তার কারণে ভীতসন্ত্রস্ত অনেক বাঙালি স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পলাতকদের ঠেকাতে পথে-ঘাটে, লঞ্চে, গাড়িতে, নৌকায়, ও সাম্পানে তল্লাশি ও আটকের প্রক্রিয়া চলতে থাকে। তবুও নিহত ও পলাতকদের মিলিয়ে জনপদের প্রায় অর্ধেক মানুষ লাপাত্তা হয়ে যায়। শুরু হয় জীবিতদের দিয়ে লাশ টেনে নিয়ে কবরস্থ করার প্রস্তুতি। খাবার নেই, পরার কাপড় নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই—চারদিকে শুধু পচা লাশের দুর্গন্ধ। পালানোর পথও বন্ধ। নিরুপায় জীবিতদের লাশ গুঁজে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। কর্তৃপক্ষ কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসেন। এটাকে দয়া বলা ছাড়া আর কী উপায় ছিল?
ভূষণছড়া গণহত্যা পরিদর্শনে প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বরকল ওসি শামসুর রহমান, রাঙামাটি এসপি, ডিসি, রাঙামাটি ব্রিগেডিয়ার আনোয়ার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জিওসি-সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সবাই তৎপর ছিলেন ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এবং লাশ লুকাতে।
কয়েকদিন ধরে একটানা গণকবর তৈরির প্রক্রিয়া চলে। এজন্য জীবিত বাঙালিদের আহার, নিদ্রা, বা বিশ্রামের ফুরসত ছিল না। গর্তে গর্তে গণকবর তৈরি করে একেকবারে ৩০ থেকে ৪০টি লাশ চাপা দেওয়া হয়। এভাবে লোকালয়গুলো পচা লাশ ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত হলেও, পাহাড়ে ও বনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো দাফন-কাফন ছাড়াই পচতে থাকে এবং শিয়াল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়। দুর্গত পরিবারগুলো পোড়া ভিটায় খাদ্য ও আচ্ছাদনহীনভাবে দিনযাপনে বাধ্য হয়।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাহায্যে আতিকুর রহমান তার বইয়ে ৩৭০ জন নিহত ব্যক্তির তালিকা সন্নিবেশিত করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নির্দেশে গুরুতর আহত ৮৫ জনকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সিএমএইচ-এ পাঠানো হয়েছিল। (পার্বত্য তথ্য কোষ, তৃতীয় খণ্ড ও সপ্তম খণ্ড, আতিকুর রহমান, প্রকাশ ২০০৭)
আতিকুর রহমান তার লেখায় ৩৭০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজারের বেশি হবে। কারণ, সে সময় পুনর্বাসিত ১,৬০০ পরিবারের মধ্যে ৩০০ পরিবারের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। প্রতি পরিবারে ন্যূনতম চারজন সদস্য হিসেবে গণনা করলেও সংখ্যা দাঁড়ায় ১,২০০ জন। তাই ধারণা করা হয়, নিহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি হবে।
প্রথম সাংবাদিক হিসেবে ভূষণছড়া গণহত্যার রহস্য উন্মোচন করতে গোপনে বরকল প্রবেশ করেন সাংবাদিক সৈয়দ মুরতজা আলী। ১৯৮৪ সালের ৩ জুন, ঘটনার তিন দিন পর তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তার বই ‘দি হিচ ইন দি হিলস’-এ তিনি সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ভূষণছড়া গণহত্যার ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করতে চায়নি, তাই কোনো সাংবাদিকের বরকল যাওয়ার সামান্যতম সুযোগও ছিল না।
কাগজ, কলম, মিনি রেকর্ডার, এবং কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পলিথিনে পেঁচিয়ে নৌকার পাটাতনের তলায় লুকিয়ে, তিনি জেলের ছদ্মবেশে ময়লা গেঞ্জি ও ছেঁড়া লুঙ্গি পরে গিয়েছিলেন। রাঙামাটি কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে অন্য কোনো উপায়ে নিরাপদে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি যেদিন পৌঁছেছিলেন, সেদিন সেখানে তিনটি হেলিকপ্টার এসেছিল, যার একটিতে ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ।
ঘটনার তিন দিন পরেও সৈয়দ মুরতজা আলী অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। এই মৃতদেহগুলো দাফনের জন্য কোনো নিকটজন পাওয়া যায়নি বলে পড়ে ছিল। ৬৮ বছর বয়সী আব্দুল করিম নামে এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, “সেহরি খেয়ে লোকজন তখনো বিছানায় ঘুমের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ গুলির শব্দ চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করে দেয়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শান্তিবাহিনীর গুলি ও যুদ্ধের হুংকার শোনা যায়। শান্তিবাহিনীর গুলি ভয়ে কম্পমান এবং পালিয়ে যাওয়া বাঙালিদেরও বিদীর্ণ করে। অনেক বাঙালিকে বিয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়, অনেকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এমনকি শিশুদেরও টেনে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়।”
বীভৎস ও লোমহর্ষক দৃশ্যের বর্ণনার পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ৩৪ জন নারী ও ২৬ জন শিশুসহ মোট ১২০ জনকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়। তখন পর্যন্ত ৩৫ জন নিখোঁজ ছিল। প্রস্থানের আগে শান্তিবাহিনী বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, ফলে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। অগণিত গৃহপালিত পশু-পাখি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। (সৈয়দ মুরতজা আলী, দি হিচ ইন দি হিলস, প্রকাশ ১৯৯৬)
গণহত্যার পরিসংখ্যান নিয়ে তথ্যের সূত্রগত ভিন্নতার কারণে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই পার্থক্যের মূল কারণগুলো হলো: প্রতিকূল পরিবেশ, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির তারতম্য, সময়ের ব্যবধান এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার প্রভাব।
গণহত্যা সংঘটিতকারী তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে তৎকালীন সময়ে পার্বত্য বাঙালিরা বিভিন্ন বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাশ নিয়ে মিছিল ও সভা করেছিল। কিন্তু এর কোনো ফল হয়নি। রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে গণহত্যাকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে নিহত বাঙালি পরিবারগুলোর বেঁচে থাকা সদস্যদের জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার পথও বন্ধ হয়ে যায়। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। এভাবে পুরো ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, এবং কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে ১৯৮৪ সালের ৩১ মে’র ভূষণছড়া গণহত্যার ইতিহাস।
যদিও ভূষণছড়া এলাকাবাসী এখনো প্রতি বছর নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। কিন্তু এটি যথার্থ নয়। হয়তো ভবিষ্যতে এটিও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভূষণছড়া গণহত্যা নিয়ে সক্রিয় কেউ নেই। এখন যদি কেউ ভূষণছড়া গণহত্যার প্রকৃত ও বাস্তবিক ইতিহাস তুলে ধরে, তাহলে এ দেশের মানুষ জানতে পারবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি নিধনের সেই নৃশংস ও ভয়াবহ ইতিহাস।
লেখক: মোঃ সোহেল রিগ্যান ব্লগার, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী, রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম।