খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমান হোসেনকে গত ১ জানুয়ারী ২০২২ খ্রিস্টাব্দে রাত ৯টার সময় অপহরণ করে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসিত মূল গ্রুপ।
যুবলীগ নেতাকে উদ্ধার দাবিতে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামীলীগ বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবরোধ পালন করলেও তাকে ছেড়ে দেয়নি ইউপিডিএফ৷ প্রশানকেও ইমান হোসেনকে উদ্ধারে তেমন তৎপর দেখা যায়নি।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা যুবলীগ নেতা উদ্ধার দাবিতে উপজেলার পাশাপাশি জেলা ব্যাপী হরতাল ঘোষণা দিলেও শুধুমাত্র উপজেলায় ৪ জানুয়ারী অবরোধ পালন করেন। সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির প্রভাবশালী নেতার চাপের কারণে জেলা ব্যাপী অনির্দিষ্টকাল হরতাল ডেকেও হরতাল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। সূত্রে আরো জানা যায়, প্রভাবশালী নেতার বিক্ষোভ সমাবেশ ও হরতাল অবরোধের বিপক্ষে ছিলেন। এই কারণে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা চাপে ছিলেন।
আওয়ামীলীগের স্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তিনি জানান, প্রশাসন উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এমন কাউকে আটক করে মো. ইমাম হোসেনকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতে পারতেন কিন্তু প্রশাসন তা করেন নি৷ প্রশাসন সবকিছু জানেন উপজাতি সন্ত্রাসীদের সহযোগী করা এবং তাদের সমর্থিত চেয়ারম্যান, মেম্বার ও হেডম্যান-কার্বারী ও বাঙ্গালী দালালদের প্রশাসন চিনেন৷ তাদের কাউকে আটক করলে অবশ্যই চাপে পড়ে ইমান হোসেনকে আরো আগেই ছেড়ে দিত ইউপিডিএফ। কিন্তু প্রশাসন তা করেনি!
১০২ ঘণ্টা পর (বৃহস্পতিবার) ৬ জানুয়ারী ভোর রাত ৩টায় সিন্দুকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কের দুল্যাতলীর উজানে ধুরংখাল পাড়ে তাকে রেখে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে ইমনের চাচা ও মানিকছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো.শফিকুর রহমান ফারুক ও ছোট ভাই মো. আকতার হোসেন তাকে উদ্ধার করে সকালে বাড়ী নিয়ে আসেন।
এদিকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে মানিকছড়ি থেকে অপহৃত ইউনিয়ন যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমান হোসেনকে ইউপিডিএফ মূল মুক্তি দিয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তারা এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়।
সূত্রে আরো জানা যায় ইমান হোসেনকে অপহৃণের পর ইউপিডিএফ পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একপর্যায়ে প্রশাসনের কোনপ্রকার সহযোগিতা না পেয়ে পরিবার ৩০ লাখ টাকার মাধ্যমে ইমান হোসেনকে ইউপিডিএফ থেকে মুক্তি করে আনেন। এই থেকে পরিষ্কার যে, পার্বত্য সন্ত্রাসীদের কতটা দাপট। প্রশাসন এখানে কতটা মেরুদণ্ডহীন ছিল!
পার্বত্য চট্টগ্রামে এইভাবে হাজারো মানুষ অপহৃত হলে প্রশাসন কাউকে উদ্ধার করতে পারেন না। যারা বিজ্ঞবান কেবলমাত্র তারাই অপহৃতকে উদ্ধার করেন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে। আর যারা গরীব অসহায় তারা তাদের পরিবারের সদস্যকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। তখন সন্ত্রাসীরা অপহৃতকে হত্যা করে লাশ গুম করে।
মো. ইমান হোসেন মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় থানার অফিসার্স ইনচার্জ জানায়, প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের চেষ্টায় ইমান হোসেন উদ্ধার হয়েছে!
আর এই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ইমান হোসেনকে প্রশাসন উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। তাকে ইউপিডিএফ মুক্তিপণ পেয়েই ছেড়েছে। এখন মুক্তিপণের বিষয়টি গোপন রাখা হচ্ছে মুক্তি দেওয়ার পূর্বে ইউপিডিএফ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণেই মুক্তিপণ ৩০ লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।
লেখক মানিকছড়ি হতে নুর মোহাম্মদ
মুক্তমতামত লেখা সম্পূর্ণ লেখকের স্বাধীন মুক্তমত প্রকাশের অংশ। এর সঙ্গে হিল নিউজ বিডি সম্পাদকীয় নীতি এক নয়।