হান্নান সরকার, ব্লগার মুক্তমত
পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বড় বাধাগুলোর খোলাসা মতামত সরকার থেকে পাওয়া না গেলেও এর বাধাগুলো সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা পাওয়া গেছে সরকারের পার্বত্য মন্ত্রীর বক্তব্যে।
সরকার পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করছে না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর পক্ষ হতে করলেও সরকার তার পাল্টা জবাব কখনো দেয়নি বা অভিযোগের প্রতিবাদ করেন নি। সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় পিসিজেএসএস-এর এমন একটা কমন অভিযোগ সবসময় থাকেই। এরপরও সরকারকে দেখা গেছে নমনীয় সুরে। অবশেষে সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর (এমপি বান্দরবান) পিসিজেএসএস-এর সব অভিযোগ উঠিয়ে দিয়ে গত ১৬ জানুয়ারী ২০২২ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সারা বিশ্বে আজকে আয়ারল্যান্ড বলেন নেপাল বলেন বিভিন্ন জায়গায় আমরা দেখি পূর্ণাঙ্গভাবে শান্তুিচুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে একথা কেউ বলতে পারবেনা। যারা আন্দোলন করছেন, তারা ক্ষমতায় আছেন, তারা সরকার প্রধানও হয়েছে তাতে কিন্তু কারণ কিন্তু বলা ও বাস্তবতা কিছুটা তফাৎ আছে। Practical একটা ব্যাপার আছে। সেই জায়গা আমরা কিন্তু হাটি হাটি পা করে এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ এটি একটা চলমান প্রক্রিয়া এবং যে জায়গা আমাদের সমস্যা দেখা দিবে সেটার জন্য তো আমাদের বাস্তবায়ন কমিটি আছে। আমরা আলোচনা করতে পারব কিন্তু শান্তি চুক্তির কোন ধারায় লেখা নাই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেরি হলে খুন করা হবে, কিডন্যাপ করা হবে, চাঁদা নেওয়া হবে, এটা লেখা কিন্তু নাই। যদি বলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নাই একটি খুন করলাম কালকে দ্রতু শান্তিচুক্তির একটি ধারা বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। তাহলে সব শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে যদি বীর বাহাদুরকে হত্যা করা যায়, খুন করা যায় তাহলে শান্তি চুক্তি রাতারাতি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। তাহলে আমি আপনাদের সবার সামনে ওয়াদা দিয়ে বলছি আমাকে হত্যা করা হোক, খুন করা হোক। এরপর আর কোনো খুন করা যাবে না, হত্যা করা যাবে না। শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে ধরে নেওয়া যাবে।
কাকে খুন করছেন? কাকে মারছেন?? শান্তি চুক্তি করার সময় জন সংহতি সমিতি একটি। সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির একটি চুক্তি হয়েছে এবং সবাই মেনে চুক্তিতে গিয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন দ্রুত হয়নি, দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এটার তর্ক-বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু কি কি বিষয়ে শান্তিচুক্তি হয়েছে তা তো একটি নোট হয়ে গেছে। রেকর্ড, এর ‘দাঁড়ি কমা’ তো আর ভুল হবে না। এই নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা, তর্ক-বির্তক মান-অভিমান, অনেক কিছু দেখানো যাবে। এই চুক্তিতে যা লেখা আছে তা নিয়ে আমি কথা বলতে পারব, বারকেটিং করতে পারব কিন্তু আমরা যে অস্ত্রগুলো জমা দিয়েছি শান্তির জন্য। তাহলে আজকে শান্তিচুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলেই যে অস্ত্রগুলো ঝনঝনানি হচ্ছে এই অস্ত্রগুলো কী বৈধ?? যদি বৈধ না হয়ে থাকে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ও দায়িত্ব আছে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করার। তাহলে বৈধ নো তো! কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে যেখানে অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর তো অস্ত্র থাকার কথা নয়! জন সংহতি সমিতি হলো। এখন শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে ওখানে আরো ৪/৫ টি সংগঠন হয়ে গেলো এটি কি শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে। আচ্ছা শান্তিচুক্তি মানিনা একটা পক্ষ। ওটা আবার ৩/৪ টা হল কেন? তারা তার দাবিকে মানিনা বলে আবার সংগঠন হল? উদ্দেশ্য কী? অনেক গ্রুপে বিভক্ত কিন্তু চাঁদা সংগ্রহের বেলায় তো একটাই আছে এক গ্রুপ সব! কিডন্যাপ করা এই ক্ষেত্রে কোন বাধা ধারা তো নাই সবাই তো এক, ওই জায়গায়। অবশ্য উন্নয়ন ও দরকার আছে আপনারা বললেন উন্নয়ন। শান্তিচুক্তির আগে কী এই উন্নয়নগুলো হয়েছিল আমাদের এখানে? মানুষের রুজি-রোজগার আয় কি বেড়েছে? আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার হার কি বেড়েছিল ওই সময় ১৯৯৭ সালের আগে? আমাদের লোকদের হাতে কী মোবাইল ছিল? আমাদের হাতে কী টেলিভিশন ছিল? আমাদের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার কী ব্যবস্থা ছিল? আজকে ৯৭ সাল ২-রা ডিসেম্বর হল, একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলো। ওই যে আবার সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ফিলিপ বললেন, আগে থানচি থেকে আসতে লাগতো ৩দিন যাইতে লাগতো ২দিন, ৫দিন। একটা হাইস্কুল ছিল না পড়ার জন্য। পরীক্ষার সেন্টার ছিল না সেখানে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার জন্য। বান্দরবান আসতে মিনিমাম ১ বিশ হাজার টাকা খরচ হতো একমাস থাকতো গেলে আর মেয়ে হলে মাকেও থাকতে হবে। তারপরে সবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আজকে চুক্তির ফসল হিসেবে একটি পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কারণে সেখানে স্কুল হয়েছে, কলেজ হয়েছে, মেয়েদের স্কুল হয়েছে, হাসপাতাল হয়েছে, বিদ্যুৎ হয়েছে, ব্রীজ হয়েছে, অজস্র বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলকে সরকারিকরণ হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর পিসিজেএসএস-এর বিরুদ্ধে এভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেন। এরপর হতে পিসিজেএসএস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইনিয়ে বিনিয়ে নিজেদের অপকর্ম ডাকার চেষ্টা করছে। পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পরেও অবৈধ অস্ত্র পরিহার না হওয়ার বিষয়ে সরকারের আরো আগে উচিত ছিল পরিষ্কার করার কিন্তু সরকার তা কালক্ষেপণ করে। যদিও অবৈধ অস্ত্র যে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন বড় বাধা তা সরকার পরিষ্কারভাবে খোলাসা করেন নি।