এম, এ রুহুল আমিন তৌহিন, রাঙ্গামাটি।
পার্বত্য বাঙ্গালীদের ১৯৭৯ ও ১৯৮৪ সনে সরকার কর্তৃক বন্দোবস্ত দেওয়া ৩/৫ একর ভূমি এখনো নিজেদের দখলে নিতে পারেনি বাঙ্গালীরা! এই বিষয়ে রাষ্ট্র যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্র তার নাগরিককে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সুরক্ষামূলক নীতি গ্রহণ করা কর্তব্য। এ পদক্ষেপ গ্রহণকে কেউ দ্বিমত পোষণ বা জাতিগত বিভেদ উপলব্ধি ভেবে ‘রাষ্ট্রীয় নীল নকশা’ যারাই অনুভব করবেই তারা মানুষ হিসেবে এখনো যথেষ্ট নয়। তাদের অন্তরে এখনো সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প রয়েছে, এরাই উগ্রবাদী ও দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক। মুখে মুখেই সম্প্রীতির বুলি থাকলেও অন্তরে চরম সাম্প্রদায়িকতা লালন করে। বাঙ্গালীদের রেকর্ডীয় ভূমি উপজাতীয়দের কথিত প্রথাগত প্রচলিত নিয়মেই দখলে। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী এদেশের সকল নাগরিকদের জন্য সমান অধিকার। এদেশের সকল নাগরিককে দেশের যে কোনো স্থানে বসতিগড়ার সম্মতি দেয় সংবিধান৷ অথচ ১৯৯৭ সালের অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ডিসি কর্তৃক বাঙ্গালীদের বন্দোবস্ত দেওয়া ভূমিতে বাঙ্গালীদের দখলে যেতে দিচ্ছে না। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। দেশের প্রচলিত ভূমি আইনকে অমান্য করে তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন দেখিয়ে তা আটকিয়ে দিচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করায় এর জটিলতা তীব্র হয়েছে। উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বাঁধার ফলে বাঙ্গালীরা নিজেদের ভূমিতে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। গুচ্ছগ্রামের বন্দিশালায় বছরের পর বছর ধরেই মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজার হাজার বাঙ্গালী। পার্বত্যাঞ্চলে জনসংখ্যার অনুপাতে উপজাতি-বাঙ্গালী প্রায়ই সমান। তবুও সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে একপেশে সব উপজাতীয়দের প্রাধান্য নিশ্চিতকরণ হয়েছে। অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে শুধুই নয়, ‘মানুষ হিসেবেও অন্য সবার মত তাদেরও নাগরিক-মৌলিক অধিকার অবশ্যই রয়েছে।’ সব বিবেচনায় তাদেরকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দ্বায়িত্ব। এটা নিয়ে কারোরই দ্বিমত পোষণ ও আপত্তি তোলা একপ্রকার অজ্ঞতা ও অনভিপ্রেত। কিন্তু দ্বিমত ও চরম আপত্তিটা বেঁধেছে এখানে, বেপরোয়াভাবে সংবিধান লংঘন পূর্বক উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার যেভাবে সরকার দিয়েছে, তা রাষ্ট্রের বাকী জনগণের নাগরিক-অধিকার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে পার্বত্য বাঙ্গালী ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশাল তফাৎ সৃষ্টি হয়। এ তফাৎ অনেক সময় সংঘাতের রুপ নেয়। পাহাড়ের প্রকৃত বাস্তবতা না জেনে যারাই ঢাকা-চট্টগ্রাম বসে সরগরম করে তারাই বর্ণচোরা, কতিপয় সুশীল এবং জ্ঞানপাপী ও বুদ্ধি ব্যবসায়ী।
সরকার তৎকালীন সন্ত্রাসীদের আক্রমণ হতে রক্ষা করার তাগিদে দ্রুততার সাথে যে, গুচ্ছ গ্রাম সৃষ্টি করেছে, সেসব গুচ্ছগ্রামগুলো নূন্যতম মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়। ১০০/২০০ পরিবারের গুচ্ছগ্রামে এখন হাজার হাজার বাঙ্গালী বসবাস করে আসছে৷ দিনমজুর, হতদরিদ্র, নিপীড়ন-নির্যাতিত ও শোষিত বাঙ্গালীদের তিন বেলা খাওয়ার জুটে না সময় সময়েই৷ গোয়াল ঘরের মধ্যে বসবাস করে দিন অতিবাহিত করতে হয় জীবনের নিয়মেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও প্রকৃতির নিদর্শন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙ্গালীর জন্য এক অভিশপ্ত অঞ্চল। তবুও দেশপ্রেম ও দেশের মাটিকে ছায়াতল ভেবে পার্বত্য মাটিকে রক্ষার দাগিতে নিজের সবকিছু বির্সজন দিয়ে বছরের পর বছর ধরেই রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার হচ্ছে পার্বত্য বাঙ্গালীরাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের এই চরম বাস্তবতা অপ্রকাশিত থেকেই যায়!গুচ্ছগ্রামগুলো যে মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়, তা স্বচোখে প্রত্যক্ষ না করলে তার বাস্তবচিত্র অনুমেয় হবে না। পানির তীব্র সংকট রয়েছে গুচ্ছগ্রাম গুলোতে। সরকার নাগরিক সুবিধার্থে নেওয়া পদক্ষেপ গুলো হতে গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীরা প্রায়ই বঞ্চিত। সরকারী পর্যাপ্ত সহযোগীতা কোনো এক অদৃশ্য কারণেই পৌছায় না গুচ্ছগ্রাম গুলোতে। শৌচাগার গুলোর দুর্গন্ধ, পানি ও বর্জ পরিহার করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার বাঙ্গালী শিশুরাই নানান রোগবালাই আক্রান্ত হয়। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অনেক শিশু শারীরিক মানসিক বিকাশের বাধাগ্রস্ত হয়। চুক্তির অনুযায়ী এখানকার ৯০% এর অধিক সুযোগ-সুবিধা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ। বাকী ১০% সুযোগ-সুবিধা বাঙ্গালীদের প্রদান করতে তালবাহানা করা হয়! পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, ও তিন পার্বত্য জেলার জেলা পরিষদের বরাদ্দ ও প্রকল্প বাঙ্গালীদের জন্য নয়। এ অঞ্চল নিয়ে কাজ করা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, দাতাসংস্থা ও এনজিও অনগ্রসর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি বিকাশ অগ্রসর করে যেমনটা ভূমিকা রাখছেই তেমনটা রাখছে না বাঙ্গালীদের বেলায়। বাঙ্গালীদের দমিয়ে রাখার যতো নীল নকশা আছে সব বাস্তবায়ন করছে তারা।
অর্থনীতিক চালিকাশক্তি বৃদ্ধির নিমিত্তে নানান কর্মমুখী জনবান্ধন প্রকল্প বরাদ্দ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়। এসমস্ত প্রকল্প গুলো বন্টন করে বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে দেওয়া হয়। এসমস্ত জনবান্ধব প্রকল্প প্রসারিত করার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুসারে উপজাতীয়দের হাতে থাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলো। বাঙ্গালীদের প্রাপ্য অধিকারটুকুও বাঙ্গালীকে দিতে নারাজ বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলো! চরম সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্য তৈরির কারিগর প্রতিষ্ঠানগুলো। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করা এনজিও, দাতাসংস্থা ও মিশনারী প্রতিষ্ঠানগুলোই উপজাতীয়দের অর্থনীতি সচ্ছল, শিক্ষা নিশ্চিতকরণ সহ উন্নত জীবনযাপনে সহযোগিতা প্রদান করছে। তবে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অধিকারের দোহাই দিয়ে গর্জে উঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, খুন-গুম ও আধিপত্য বিস্তার করার পাশাপাশি বন্দুকের নল দেখিয়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একতৃতীয়াংশ লুটপাট করে খাচ্ছে। আর এই দায় তো পার্বত্য বাঙ্গালী তথা রাষ্ট্রের নয়। রাষ্ট্র দিচ্ছে তা চুষে খাচ্ছে তাদের কর্ণাধার পরিচয়দানকারীরা। উপজাতিরা যেসমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তার রেশমাত্রও যদি এখানকার বাঙ্গালীরা ভোগ করতেন তাহলে বাঙ্গালীদের চরম দুঃখ-দুর্দশ হয়তো কিছুটা হলেও অবসান হতো।