মারুফ হোসেন, বান্দরবান থেকে ফিরে এসে।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভারতীয় মদদে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে অস্ত্রধারী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। এ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ভারতের তৈরি। অবৈধ অস্ত্র প্রশিক্ষণ অর্থ ও যাবতীয় সবকিছু দিয়ে এই সন্ত্রাসীদের বাঙালীদের বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।
দীর্ঘ ২৫ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন চট্টগ্রামের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) তথাকথিত শান্তিবাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে পয়ঁত্রিশ হাজার বাঙালি এবং তিন হাজারের অধিক উপজাতীয় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুলিশ-আনসারসহ প্রায় এক হাজারেরও অধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিহত হয়।
সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে ২-রা ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা তড়িঘড়ি করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক চুক্তি সম্পাদিত করে। এই চুক্তির মাধ্যমে সংঘাত কিছুটা পরিহার হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত শান্তি পাহাড়ে ফিরে আসেনি। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উপজাতি জনগোষ্ঠী তথাকথিত শান্তিবাহিনী ৭২ টি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি করেও শান্তির পথে ফিরে আসেনি। কিন্তু তারা সরকার থেকে চুক্তির প্রত্যেকটি শর্ত মোতাবেক সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। অথচ সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা না দিয়ে পুনরায় আরো অস্ত্র নিয়ে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে আসছে প্রতিনিয়ত। পার্বত্য চুক্তি সাক্ষর হয়েছে ২১ বছরেরও বেশি। এত বছর অতিবাহিত হলেও অস্ত্র পরিহার করেনি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। বরঞ্চ প্রতিনিয়ত ভারত থেকে অস্ত্র আমদানি করে এ অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির শর্ত মোতাবেক সরকার এ অঞ্চল থেকে বেশিরভাগই সেনাসদস্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে সমতলের ব্যারাকে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক তিন পার্বত্য জেলায় ৪টি সেনা বিগ্রেড ও স্বল্প নগণ্য সংখ্যক সেনা ক্যাম্প রয়েছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থাৎ বাংলাদেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য একদম নগণ্য।
এ অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লক্ষ বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি জুম্মল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠন করার পথে হাঁটছে। সন্ত্রাসীদের এই যাত্রায় সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সেনাবাহিনী। পাহাড় অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রত্যাহার করতে পারলে সন্ত্রাসীদের জয়জয়কার স্বপ্নের জুম্মল্যান্ড গঠন করতে আর কোন বাধা থাকবে না।
পার্বত্য চুক্তির শর্তের অংশ হিসেবে পার্বত্য এলাকার যে, সকলস্থান থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেসকল স্থানের সরকারী খাস জায়গায় সন্ত্রাসীরা দখলের জন্যে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেছে। আর এই বৌদ্ধ মন্দির দীর্ঘস্থায়ী করতে সন্ত্রাসীরা নিজেরাই বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গে সেনাবাহিনীর নাম দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও তথাকথিত মিডিয়া হচ্ছে তাদের অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করার প্রধান মাধ্যম। রাজপথে আন্দোলন করে সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইতোমধ্যে নানান নাটকের মঞ্চ তৈরি করেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কাজ করতে তারা তৎপর হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালীদের পাশে সহায়তাক হিসেবে দাঁড়াতে দেখা যায় না। তাদেরকে দেখা যায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। মূলত বাঙালী দালাল ও অবৈধ কাঠপাচারকারীদের সহযোগিতায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সমূহ সফল হয়েছে। মূলত সন্ত্রাসীদের আন্দোলন ও অপপ্রচারের ভয়ে সেনাবাহিনী অপবাদ মেনে নিয়ে সন্ত্রাসী কর্তৃক ভেঙে দেওয়া বুদ্ধমূর্তি ও বাড়িঘর পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের ছনের ঘর পুড়ে গেলে পাকা দালান ও টেনের ঘর নির্মাণ করে দেয় প্রশাসন। এরকম হাজারো প্রমাণ রয়েছে। এ রীতিনীতি শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্য বাঙ্গালীদের জন্য নয়। এ অঞ্চলের উপজাতি সন্ত্রাসীরা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দায়ভার সেনাবাহিনী ও বাঙালির উপর দেয়। আর প্রশাসন নতুন করে আবাসন নির্মাণ করে দেয়। এসকল কারণেই সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপর একের পর এক ষড়যন্ত্র মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং এতে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
পার্বত্যাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে সরাতে উপজাতি নারীদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। সেনাবাহিনী ও বাঙালি জনপদের বিরুদ্ধে সরাসরী ধর্ষণের অভিযোগও তোলা হয়। এ অঞ্চলে সেনাবাহিনী তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে সেনাবাহিনী গায়ে ধর্ষণের তমকা দেয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে বাদেই যাচ্ছেনা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’ও পুলিশ সহ আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বারবার সেনাবাহিনী চক্রান্তের শিকার এর জন্য অবশ্যই তথাকথিত পার্বত্য রীতিনীতি ও প্রশাসনের অদক্ষতায় দায়ী। যে সকল প্রশাসনের কর্মকর্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকরি করতে আসেন তারা কেউ পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে অবগত নয়। সরকারের ভূল নীতি পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়। প্রশাসন নতজানু হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে স্ট্যাডি নেই এমন সব কর্মকর্তা কে ডিসি, এসপি, ইউএনও হিসেবে এই অঞ্চলে পাঠানো হয়। এই সকল কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় সেনাবাহিনী ও বাঙালি জনগোষ্ঠী বিপাকে পড়ে। সরকারের ভুল নীতি ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সেনাবাহিনী বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। সরকারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকরি করতে আসার পূর্বে সরকারি কর্মকর্তাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও জ্ঞান প্রশিক্ষণ দেওয়া। যাতে সঠিক সময় পদক্ষেপ নিতে পারে। এখন পাহাড় সবচেয়ে লক্ষনীয় হচ্ছে সেনাবাহিনী মেরুদণ্ডহীন। সেনাবাহিনীর পূর্ব ক্ষমতা নেই পাহাড়ে। যার কারণে সন্ত্রাসীরা মাথা চড়া দিয়েছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত। সন্ত্রাসীদের কথার অবাধ্য হলে নতজানু হতে হয় এখানকার সর্ব মহলকেই।
উপজাতি সন্ত্রাসীদের এই সকল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য পরোক্ষভাবে কাজ করছে স্থানীয় বাঙালি কিছু কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির লোক ও দালাল মীরজাফর বংশধররা। সন্ত্রাসীদের চাঁদা আদায় কার্যক্রম ও সাংগঠনিক তৎপরতা স্থানীয় বাঙালিরা করে থাকে। এই অঞ্চলের জাতীয় রাজনীতি করা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র একটি অংশ সন্ত্রাসীদের গোলাম হিসেবে কাজ করে। এতে বিনিময় সামান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। এই অসাধু বাঙালি চক্র সন্ত্রাসীদের শক্তির মূল উৎস।
সরকার কর্তৃক বনাঞ্চল রক্ষার্থে এই অঞ্চলের সব ধরনের গাছ কর্তন নিষিদ্ধ করেছে। সন্ধ্যা নামলে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন ইউপিডিএফ ও জেএসএস সহ বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঠের গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করে। এই কাঠের চাঁদার টাকায় ইউপিডিএফ ও জেএসএস অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে বাঙালীও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে উপজাতি সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সহযোগিতায় বনাঞ্চল নষ্ট করে গাছ কর্তন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন কয়েকশো কোটি টাকার অবৈধ কাঠ পাচার করে স্থানীয় বাঙালি নামধারী কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি। নিরিহ বাঙালীদের অভিযোগ তার সাথে সরাসরি যুক্ত কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি। তাদেরকে গাড়ি প্রতটি ১২০০ থেকে ২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে সড়কে গাড়ি পার করতে হয়। অথচ এই কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি অবৈধ কাঠের পারমিশন দেওয়ার কোনো বৈধ কর্তৃপক্ষ নয়। সেনাবাহিনীর চোখের সামনে প্রকাশ্যে কোটি কোটি টাকার অবৈধ কাঠ পাচার হচ্ছে। সেনাবাহিনী একটু তৎপর হলে এসকল অবৈধকাঠ পাচার এবং পরিবেশ ধ্বংস করা ক্ষণিকের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। এ অঞ্চলের একটি সুবিধাবাদী মীর জাফরদের ব্যবসায়িক স্বার্থে অবৈধকাঠ পাচার বন্ধ হচ্ছেনা। অথচ এই মীরজাফর বাঙালি চক্ররা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করে আসছে।
দেশের অখন্ডতা রক্ষা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশ লক্ষাধিক মানুষের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। পাহাড় থেকে সামরিক বাহিনী সরে গেলে এ অঞ্চলের নিরিহ পাহাড়ি-বাঙালি জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। বাংলাদেশ হারাবে একদশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেনাবাহিনী রয়েছে বিধায়ী এ অঞ্চলের মানুষ এখনো বেঁচে আছে অন্যথা রোহিঙ্গাদের মতো পরিণতি হত।
পার্বত্য বাঙালির জন্য সেনাবাহিনীর অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে যা ভুলে যাওয়ার নয়। অথচ এই বাঙালিরা সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ না করে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে বাঙালি নেতা ও বাঙালিদের ছেলেমেয়েদের অবস্থা দেখলে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুখী তারা। পাহাড় থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকায় চাকরি, পড়ালেখা করতে গিয়ে উপজাতি ছেলে-মেয়েরা জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে এবং সেনাবাহিনী ও বাঙালি বিরুদ্ধে সমতল বাসীদের ব্রেন ওয়াশ করেন। আর পার্বত্য বাঙালিদের ছেলে-মেয়েরা চট্টগ্রাম-ঢাকায় চাকরির পড়ালেখা করতে গিয়ে সত্য কথা উন্মোচন করতে লজ্জাবোধ করে। বিনিময় ছাড়াই সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালির পক্ষে কথা যারাই বলে তাদেরকে সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দেয়া হয়। সেনাবাহিনীর এই বিপদে এগিয়ে না এসে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মীরজাফর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।