পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯৭ সালের ২- ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের প্রতিনিধি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি এবং উপজাতিদের পক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। প্রায় ২ যুগ ধরে পাহাড়ে চলে আসা সংঘর্ষ কাগজে কলমে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কাগজে কলমে বন্ধ হলেও পাহাড়ে উপজাতি নৃ-গোষ্ঠী – বাঙালি সংঘর্ষ কিংবা সেনাবাহিনীর সাথে জেএসএসসহ অন্যান্য আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ এখনো থেমে যায়নি। একই সাথে ’৭৫ এর পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিকের মত গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। বেশিরভাগ গণহত্যায় বাঙ্গালীরা নিহত হয়েছে। চুক্তির ২৪ বছর অতিক্রম করেও এখনো বাংলাদেশ সরকার থেকে সদ ইচ্ছে থাকার পরও এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রতিশ্রুতি পালন করেছে সন্তুলারমা তা বিবেচনার বিষয়, আত্মঘাতি হামলা আর হত্যা, গুম ও অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ কি বন্ধ করতে পেরেছে সন্ত্রাসী দলগুলো? পাহাড়ে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে সমস্যা। কারণ নিরাপত্তার অভাব। গহীন জঙ্গলে অহরহ অপকর্মে জড়িত হচ্ছে উপজাতি সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী দলগুলো। বিরাজমান বাস্তবতা দেশের বাহিরের জেলার জনগণ জানতে আগ্রহ হয়ে উঠেছে। সেনাহত্যা সহ বিভিন্ন অপকর্ম এক ভয়ংকর রুপে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত অনিরাপদ পাহাড়ি জনপদ। কখন এর সমাধানে সরকার পদক্ষেপ নেবে এটা আলোচ্য প্রশ্ন। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বাঁধাই তা হয়ে ওঠে না।
পার্বত্য চুক্তির ৯০% সরকার বাস্তবায়ন করলেও জেএসএস চুক্তির মৌলিক শর্ত এখনো লঙ্ঘন করে আসছে। ২৪ বছরেও তারা অবৈধ অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি! পাহাড়ের আনাচে-কানাচে এখনো তাদের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে দেখা যায়৷ যতদিন জেএসএস অবৈধ অস্ত্র পরিহার করবে না সরকারের উচিত ততদিন পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না করা এবং চুক্তির সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া৷ সন্তু লারমা একজন চুক্তি বরখেলাপকারী৷ সেই সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি নিয়ে ভাঁওতাবাজি করেছে যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সমান। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন হয়নি৷ সন্তু লারমার দলসহ একাধিক সন্ত্রাসী দলের চাঁদাবাজিতে পাহাড়ের মানুষ আজ দিশেহারা৷ ৪টি সন্ত্রাসীদল পাহাড়ে মানুষ থেকে চাঁদা নিচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা সরকারের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। তাই পার্বত্য চুক্তি নিয়ে সরকারকে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং এই চুক্তির অসাংবিধানিক ধারাগুলো সংশোধন করে এ অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: সেই সাথে পাহাড়ের সন্ত্রাসী দলগুলো থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।