গত ১১ জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর একটি বড় অস্ত্র চালান প্রবেশ করে বাংলাদেশের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’। জুন মাসে অস্ত্র চালানে ছিল ৩ কোটি টাকা সমপরিমাণ মূল্যের অস্ত্র। ভারতের চাম্পাই জেলার জুট এলাকা ও মামিত জেলা হইতে অস্ত্রগুলো ক্রয় করে ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা প্রদীপন খীসা (৫২) ও উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা (৫০)। অস্ত্র চালানের খবরটা পার্বত্য চুক্তি বরখেলাপকারী ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি’ (পিসিজেএসএস) এর কমান্ডার অর্জুন ত্রিপুরার কাছে আসলে অর্জন ত্রিপুরা জেএসএস-এর উচ্চ পর্যায়ে জানালে অস্ত্র চালানটি ছিনিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়। অর্জন ত্রিপুরার নেতৃত্ব রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি-ভারত সীমান্তে জেএসএস অবস্থান নিয়ে ইউপিডিএফ এর অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে৷ এসময় দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, এবং ইউপিডিএফ এর দু’জন নিহতসহ দু’ গ্রুপের মোট ৬ সদস্য আহত হয়। সূত্রের তথ্য মতে এমনই জানা যায়।
অস্ত্র চালানে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবার গত ১২ জুলাই ও ১৮ জুলাই জেএসএস ইউপিডিএফ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যদিও সর্বত্র অস্ত্র চালান আসার খবরটা প্রচার হয়নি৷ ইউপিডিএফ এর একটি নির্ভরযোগ্য গোপন সূত্রের দাবি “ভারত ও মায়ানমার এর সাথে বাংলাদেশের যে, সীমানা রয়েছে৷ তার বেশিরভাগ সীমানা জেএসএস এর দখলে। বান্দরবান সীমানার পুরোটা জেএসএস এর দখলে। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি সীমান্তের আংশিক এলাক জেএসএস এর দখলে। ইউপিডিএফ বাঘাইছড়ি সীমান্তের বেশিরভাগ দখলে আছে। আর ভারত থেকে অস্ত্র নিয়ে আসার অন্যতম পথ কিন্তু বাঘাইছড়ি ‘সীমান্ত’৷ ভারত থেকে এ সীমান্ত এলাকা দিয়েই ইউপিডিএফ অস্ত্রের বিভিন্ন চালান দীঘিনালা ও পানছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পৌছান। মূলত ইউপিডিএফ এর অস্ত্র চালানের পথ আটকাতে জেএসএস ও ইউপিডিএফ মধ্যকার ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘন করে দীঘিনালা ও পানছড়ির কিছু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, এবং আরো কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সংঘাতের রূপ নিচ্ছে।
এদিকে ইউপিডিএফ যে, ভাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য কিছু জনসাধারণকে বাধ্য করে কর্মসূচী করাচ্ছে তা ভাঁওতাবাজি৷ জেএসএস ও ইউপিডিএফ দু’টি সংগঠন পাহাড়ীদের অধিকারের দোহাই দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রকতৃঅর্থে চাঁদাবাজি করছে; আদায়কৃত এ চাঁদার টাকা দিয়ে জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় নেতারা আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছে। তাদের ছেলে- সন্তানদি দেশ-বিদেশের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে। বস্তুত, জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড করে পাহাড়কে নরকের পরিণত করেছে৷
একটি সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের সাথে ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সাত রাজ্যের নিবিঢ় যোগাযোগ। বেশ করে মিজোরামের রাজধানী ‘আইজল’ ও ত্রিপুরার ‘আগরতলা’ এবং ‘অরুনাচল প্রদেশ’। রাজ্যগুলো থেকেই বেশিরভাগ অস্ত্র আসছে এদেশেই। অনেক সময় মিয়ানমার থেকে মিজোরাম হয়ে এসব অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে পার্বত্য এলাকায় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে যায়। ভারত ও মায়ানমারের ১৭৮ কিলোমিটার সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া নেই! পার্বত্য চট্টগ্রামের অরক্ষিত বিস্তির্ণ সীমান্ত দিয়ে অবাধে অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের যাতায়াতের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা।