মোঃ সোহেল রিগ্যান– পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ প্রসিত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী গত ১ আগস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ হইতে পার্বত্য খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি জেলা ও উপজেলার হাই স্কুল সমূহের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা হতে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যচিত্র অনুযায়ী, ইউপিডিএফ হাই স্কুল লেভেলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সন্ত্রাসী তৎপরতামূখী করার জন্য কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রশাসন, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনুমতি ছাড়াই জোরপূর্বক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করিয়ে আসছে। যা খুবি দুঃখজনক। হাই স্কুলের মধ্যে এধরণের রাজনীতি প্রবেশ করানোর মধ্য দিয়ে এ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে বাঙ্গালী ও সেনা বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণে চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে জেএসএস সন্তু লারমার বিরুদ্ধে কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন করার মধ্য দিয়ে গ্রহণ যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়৷ এটা ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অভিনব কৌশল৷ সন্তু লারমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাপ্ত বয়স্কদের অভাব পড়ছে? ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকতে এবং চাঁদাবাজির অগণিত টাকা থাকতে কেন হাই স্কুল লেভেলের বাচ্চাকাচ্চা বেছে নিতে হবে? ইউপিডিএফ এর এধরণের ভাঁওতাবাজি ইতোমধ্যেই সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে। জনগণ এখন আগের মত আর এত অবুঝ নাই। জনগণ এখন ইউপিডিএফ এর চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হত্যা, অপহরণ ও খুন-গুম সম্পর্কে অবগত। ইউপিডিএফ তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা ডাকতে বিভিন্ন সময় এভাবে কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নিজেরাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করেছে এবং সাধারণ মানুষের মন অন্য দিকে সরিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ ও জেএসএস চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের এই ভারী অস্ত্রের সংঘর্ষে প্রাণও যাচ্ছে অনেকের৷ বিষয়টি দামাচাপা দিতে এবং সম্পূর্ণ দায়ভার জেএসএস এর আরোপিত করছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান শুধুমাত্রই নাটক মঞ্চ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ কর্তৃক চাপ সৃষ্টি করে পালন করা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনগুলো তুলে ধরা হল-
জেএসএস (সন্তু)-এর প্রতি কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গুইমারা উপজেলাধীন প্লাকশ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করানো হয় জোরপূর্বক।
গত বুধবার (৩ আগস্ট ২০২২) সকাল ১০টায় এক মানববন্ধন করে তারা এ আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে তারা “জেএসএস ভাইয়েরা কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করুন, জেএসএসকে বলছি নিজের ভাইয়ের বুকে গুলি চালাবেন না, যারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত করে তাদের নিন্দা জানাই” ইত্যাদি শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
আজ বৃহস্পতিবার,৪ আগস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ সকাল সাড়ে ১০টায় একযোগে উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়, খিয়াংঘাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জারুলছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন করে কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস প্রতি আহ্বান জানান ইউপিডিএফ।
মানবন্ধনকালে তারা কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন বলে সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়।
কাউখালী উপজেলার পৃথক দুই স্থানে কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করানো হয়েছে। ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে এ কর্মসূচী পালন করিয়েছে বলে সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়।
বেতবুনিয়া ও ফটিকছড়ি ইউপি’র শিক্ষার্থীদের আয়োজিত মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে এসএসসি পরীক্ষার্থী মিসাইচিং মার্মার উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন দশম শ্রেণীর ছাত্র অংহ্লাচিং মার্মা ও নবম শ্রেণীর ছাত্রী সানুমা মার্মা। বৃক্ষবানুপর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচী করেছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে, ঘাগড়া ইউনিয়নে আয়োজিত মানবন্ধনে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী পাপেল চাকমা ও বৈশালী চাকমা উপস্থিত ছিলেন। লেভারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচী পালন করেছে বলে জানা যায়।
জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমার কাছে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের মাচলং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের ক্লাস চলাকালীন সময় জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে মানববন্ধন করতে বাধ্য করেন ইউপিডিএফ।
গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট ২০২২) সকাল ১০টায় নিজেদের বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে এ আহ্বান জানান।
মানববন্ধনের ব্যানারে তারা লেখেন, “জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমাকে বলছি এখনই ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি থামান”। এছাড়া তারা কথিত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন ইউপিডিএফ এর চাপে পড়ে।
এসময় ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে বাধ্য করে বলানো হয়,“আমরা আর আমাদের প্রাণ প্রিয় বাবা ও ভাইদের হারাতে চাই না। কোন মায়ের বুক যেন খালী না হয়। সন্তু লার্মার উচিত অচিরেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করা”।
বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ এর আগেও সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি করতে এবং বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী বিরোধীতা করতে স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঠে নামিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম করিয়েছে। বর্তমানে সন্ত্রাসী তৎপরতার অংশ হিসেবেই চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হত্যা, অপহরণ এ খুন-গুম এবং সাংগঠনিক মজবুত রাখতে স্কুলের কোমলমতি নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কর্মসূচী করিয়েছে। যা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের দাবি হাই স্কুল লেভেলে এভাবে রাজনীতিতে জড়ালে তাদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যত নষ্ট হবে এবং মনমানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে৷
অভিভাবক মহল ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, স্কুলের ১০ থেকে ১৬ বছরের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের এভাবে ব্যানার, ফেস্টুন ধরিয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী জেএসএস এর টার্গেটে পরিণত করা বিপদজনক। এর মাধ্যমে তাদের যেমন পড়াশোনা, ভবিষ্যত নষ্ট হবে তেমনি জীবনও হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই ইউপিডিএফ কে এই ধরনের কর্মসূচী থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। ইউপিডিএফ কে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভয় লাগানোর মত জঘন্য কাজ পরিহার করতে বলেন।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীকে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যবহার করাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজনীতি করতে পারে এটা তাদের অধিকার৷ এজন্য তাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে এবং রাষ্ট্র তাদের সে অধিকার দিয়েছে৷ কিন্তু হাই স্কুল পর্যায়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ নোংরা রাজনীতি ও অস্ত্র লড়াইয়ের রাজনীতি করতে ইউপিডিএফ-কে অধিকার দিয়েছে কে? তারা উপজেলা নির্বাহী প্রশাসন, শিক্ষা অফিস বা স্কুলের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক থেকে কী অনুমতি নিয়েছে? আরেকটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দলের প্রদানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য কেন হাই স্কুল পর্যায়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্র-ছাত্রীদের বেছে নিতে হবে? যদি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে অনুমতি নিয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট মহলকে এর কঠোর জবাব দিলে হবে আর যদি অনুমতি না নিয়ে থাকে তাহলে ইউপিডিএফ এমন দুঃসাহস কী করে দেখায় তজ্জন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের সর্বধরণের রাজনৈতিক কর্মসূচী নিষিদ্ধ করতে হবে, সে সাথে তাদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।