মোঃ সোহেল রিগ্যান- বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ প্রায় সময় বিভিন্ন অজুহাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা করে পার পেয়ে যায়! বিষয়টি নিয়ে সরকার তথা রাষ্ট্রকে গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
গত ১৪ আগস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (রবিবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন।
বিমানবন্দরে মিশেল ব্যাশেলেকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কোনো হাই কমিশনারের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেল পার্বত্য চট্টগ্রাম (CHT) সফর করার কথা ছিল৷ কিন্তু সরকার তার পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের অনুমতি দেয়নি৷ যার অন্যতম কারণ- পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকের পরিণত করে রেখেছে এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি করেছে। তাদের অব্যাহত চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অস্ত্রবাজি, হানাহানি, অপহরণ ও খুন-গুমে অধিকিন্তু এ অঞ্চল নিরাপত্তাহীনতার তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই নিরাপত্তা স্বার্থে সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেল-এর পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরের অনুমতি প্রদান করেনি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এবং সরকার যা করেছে তার অবশ্যই যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷
এ ঘটনাকে ইস্যু করে গত ১২ আগস্ট থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা পাহাড় জুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে৷ তারা পুলিশের উপর চড়া হয়েছে। তারা এর আগেও তাদের স্বার্থ হাসিল এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্য অনুমতি ছাড়া জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি করতে গিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ নিরস্ত্র উপজাতি ও বাঙ্গালীর উপর চড়া হয়েছে। বারবার তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নিরস্ত্র মানুষের উপর হাত তোলার এই দুঃসাহস কোথায় পায়? রাষ্ট্র বা কেন তাদের বিষয়ে এতো নমনীয়তা এবং নতজানু নীতি গ্রহণ করছে! এভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর হাত তোলার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করার দুঃসাহস বারবার তাদের দিলে অচীরে তারা আরো বড় ঘটনা জন্ম দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। তাদের বিগত বছরের কর্মকাণ্ডগুলো তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
গত ১৩ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরে ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কোনপ্রকার পূর্বানুমতি ছাড়াই বিশৃঙ্খলা তৈরির অংশ হিসেবে অসৌজন্যমূলক আচরণের ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অনুমতি ছাড়া বেআইনীভাবে বিক্ষোভ মিছিল কেন করে পুলিশ তার কারণ জানতে চাইলে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা পুলিশের দিকে তেড়ে আছে এবং পুলিশের গায়ে হাত তোলে। পুলিশের গায়ে হাত তোলা এবং পুলিশ নির্বিকার থাকা নিয়ে জনমনে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে পার্বত্যবাসী নেতিবাচক হিসেবে দেখছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশের উপর যেভাবে উপজাতি সন্ত্রাসীরা হামলা করে তা যদি দেশের সমতল জেলাগুলোতে করতো তখন কী পুলিশ এভাবে নীরব থাকত বা হামলাকারীরা এভাবেই ছাড়া পেয়ে যেত? বিষয়গুলো অবশ্যই প্রশ্নের দাবি রাখে৷
এবার আসি মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে-
ইউপিডিএফ যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে তার সত্যতা কতটুকু? সত্যতা যদি বলতে হয় তাহলে আগে বলতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে গণমাধ্যমগুলোর রহস্যজনক ভূমিকা পালন কেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, তারা বৈদেশিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাঁদাবাজির কিছু অংশের তারাও ভাগিদার হচ্ছে। যদি তা নয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চরম বাস্তবতা তাদের উন্মোচন করতে অনিহা এবং রহস্যজনক ভূমিকা লক্ষণীয় কেন? মূলত বাংলাদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর নীরবতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী নেতৃত্ব শূন্য থাকায় এ অঞ্চলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সম্পৃক্ত মূল গোষ্ঠীগুলো রেহাই পেয়ে যাচ্ছে এবং একই অভিযোগে অন্যকে অভিযুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। ইউপিডিএফ সেনাবাহিনী সম্পর্কে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে তার কোন সত্যতা নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। ৬টি উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাৎসরিক প্রায় ১০০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজির টাকার জন্য তারা অপহরণ, খুন-গুম ও ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ পর্যন্ত করে থাকে। HBF ও HWF এর তথ্য অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরবর্তী সময় সংগঠনগুলো ২৯৮০ জন উপজাতি ও বাঙ্গালীকে হত্যা করে। অপহরণ করে ৬৭৪৫ জনকে। ধর্ষণ করে ২৪৩৫ জন নারীকে। গুলি ও নির্যাতন পূর্বক আহত করে ১০৩৭০ জনকে। এ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। অথচ আজ তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেল এর সফরের অনুমতি না দেওয়ার কারণে সেনাবাহিনী তথা সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে। এই বিষয়কে ইস্যু করে তারা যে লোক দেখানো বিক্ষোভ মিছিল বা প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার প্রচেষ্টা করছে তা কিন্তু প্রতিয়মান৷ তারা যে ভাবে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদ করে রাষ্ট্রের সমালোচনা ও বিরোধিতা করে তা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।
তাদের রাষ্ট্রদোহিতা মূলক কর্মকাণ্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক সময় যদি রাষ্ট্র তাদের দমন না করে অচিরেই তারা রাষ্ট্রের মানহানি করার জন্য এবং রাষ্ট্র ভাগ করার চূড়ান্ত পর্বে অবতীর্ণ হবে৷