মোঃ সোহেল রিগ্যান
মোঃ সোহেল রিগ্যান- পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) অঞ্চলে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পার্বত্য চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তু লারমার তথাকথিত ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর তৎকালীন সভাপতি ছিলেন প্রসিত বিকাশ খীসা৷ মূলত সন্তু লারমা ও চুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ প্রসিত মূল যাত্রা করে। ৯৭’ চুক্তির ১ বছরপর যাত্রা শুরু করে। আঞ্চলিক রাজনৈতিকদল হিসেবে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে তারা প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের রয়েছে সশস্ত্র শাখা৷ সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, হানাহানি, রক্তারক্তি সংঘর্ষ, জাতিগত ভেদাভেদ এবং দেশদ্রোহীতামূলক তৎপরতায় নিয়োজিত থেকে অত্র অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করে পার্বত্য চুক্তি বাধাগ্রস্ত করতে লিপ্ত রয়েছে।
ইউপিডিএফ যে নীতি কথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে নীতিকথায় এখন আর নেই। কথিত আছে তাদের নাকি গঠনতন্ত্র রয়েছে ২টি৷ ১টি জনসাধারণের নিকট প্রকাশ করলেও আরেকটি প্রকাশ করছেন না৷ এই নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ইউপিডিএফ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানান প্রশ্ন। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, সাধারণ পাহাড়ীদের উপর জুলুম অত্যাচার, অব্যাহত চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সম্পদের উপর হামলা এবং নির্বিচারে বাঙ্গালীদের উপর আক্রমণ মানুষ অতিষ্ঠ। মূলত এসব কারণে ইউপিডিএফ এর মধ্যে বারবার ভাঙ্গনের সুর৷ ২০১৮ সালে ইউপিডিএফ মূলত প্রসীত ত্যাগ করে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গঠন করে সংগঠনের শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি বর্মা ও জুলেয়া চাকমার তরুর নেতৃত্বে। বিভিন্ন সময় ইউপিডিএফ এর অনেক নেতাকর্মী অসহ্য ষন্ত্রণা নিয়ে সংগঠনটি ত্যাগ করে৷ বিগত বছরগুলোতে মহালছড়ি, নানিয়ারচর, কাউখালী, লক্ষীছড়ি, পানছড়ি, দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ি হইতে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র শাখা ও রাজনৈতিক শাখার অনেক জনবল সংগঠনটি ত্যাগ করে। কেউ রাষ্ট্রীয় ছায়াতলে আসে আবার কেউ অন্য সংগঠনে যোগদান করে৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫-তম বর্ষপূর্তি এবং ইউপিডিএফ এর ২৪-তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সময়ে বান্দরবান অঞ্চল ইউপিডিএফ এর দীর্ঘ দিনের লড়াকু ও ত্যাগী নেতা এবং জেএসএস কর্তৃক নির্যাতিত বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি ছোটন কান্তি তংচঙ্গ্যা পদত্যাগ করে। অদ্য ৩০ নভেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দে ছোটন কান্তি তংচঙ্গ্যা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ এর বিরুদ্ধে অপ্রকাশিত অনেক অভিযোগ করা হয়। এতে ইউপিডিএফ এর বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং তাদের অন্যায় অবিচার ফুটে উঠে। বর্তমানে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এ যোগদান করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছোট কান্তি তংচঙ্গ্যা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়ার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে তার পদত্যাগ করার সত্যতা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
ছোটন কান্তি তংচঙ্গ্যা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি পাঠকদের জ্ঞাতার্থে হুবাহু তুলে ধরা হয়েছে-
“আমি ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, পিতা- মৃত শশী, মাতা- মৃত চৈমালা তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- বালাঘাটা তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, ০১নং ওয়ার্ড, বান্দরবান পৌরসভা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা। ১৯৯৭ ইং হতে প্রসিত বিকাশ খীসা চুক্তি পরিপন্থি সংগঠনের দিকে ঝুঁকে পরে পরবর্তীতে ১৯৯৮ ইং হতে ২৬ শে ডিসেম্বর ইউপিডিএফ নামক নতুন সংগঠন গঠন করা হলে বান্দরবান জেলা ইউনিট আহব্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হই। দীর্ঘ দিন ধরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে প্রসিত বিকাশ খীসা পূর্ণস্বায়ত্বশাসন দাবি করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাত্তিঘাতি শুরু হয়। ইতিমধ্যে এর ব্যাপকতা আরো বৃদ্ধি পায়। পার্বত্য চুক্তি দেশীয় ও আন্তরর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক সমর্থন থাকলে ও চুক্তির বিরোধিতার ব্যাপক প্রচার করতে থাকার চুক্তির বাস্থবায়নে বিলম্ব হয় ও অধিকার বঞ্চিত জনগন চুক্তির বহুবছর পরেও শান্তির মূখ দেখতে পাইনি। এমনকি আন্দোলন কারী সংগঠন গুলিতে বিভক্তি বেড়ে গিয়ে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক পরিস্থিতি অত্যান্ত নাজুক অবস্থায় আছে। উক্ত পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হবে ততো অধিকার বঞ্চিত জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে ও সমস্থ আসার আলো চিরতরে ধ্বংস হওয়ার সম্ভবনা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিদায় এহেন স্বদ্ধ পরিহার করে ঐক্য স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে আমার শারিরীক অবস্থা অত্যান্ত নাজুক ও ভঙ্গুর উচ্চ রক্তচাপ ও লিভার শীরোশিষ রোগে ভুগিতেছি। তাই আমি সেচ্ছায় প্রসিত পন্থি ইউপিডিএফ হতে সকল পদবী ও অর্পিত দায়িত্ব হতে সম্পূর্ণ অব্যাহতি নিচ্ছি। এই বিষয়ে আজ হতে সংগঠনের কোন জবাব দিহিতা ও দায়িত্ব কর্তব্য পালনে বাধ্য থাকিব না।
সকলকে ধন্যবাদ ছোটন কান্তি তংচঙ্গ্যা।”
একটি সূত্র জানিয়েছে ইউপিডিএফ প্রসিত খীসা গ্রুপের প্রশাসনিক শাখা ও সশস্ত্র শাখার অনেক নেতাকর্মী সংগঠনটি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে এবং অন্য সংগঠনে আসতে মুখিয়ে আছে। রাষ্ট্র প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ উদ্যোগ গ্রহণ করলে ইউপিডিএফ ত্যাগ করার মহা হিড়িক বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে নানান মহলে প্রশ্ন উঠছে জেএসএস সন্তু সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত করে চুক্তির শর্ত মোতাবেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে; তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতৃত্ব এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের একমাত্র সংগঠন যদি হয়ে থাকে ইউপিডিএফ কোথায় থেকে আসলো? জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এর মধ্যে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যে দীর্ঘ ২ যুগ এর বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে তা পার্বত্য চুক্তি পূর্নবাস্তবায়নে বাধা। কিন্তু জেএসএস তাদের এই দলাদলি এবং হানাহানি ও চাঁদাবাজির বিষয়গুলো গোপন রেখেই বারবার সরকার চুক্তি পূর্নবাস্তবায়ন করছে না বলে উদ্দেশ্য প্রণোদীতিভাবে অভিযোগ করছে। উপরোক্ত বিষয়বস্তু গুলো পর্যাবেক্ষণ ও বিচার- বিশ্লেষণ করলেও অনুমেয় যে, সরকার চুক্তির অধিকাংশ ধারা-উপধারা বাস্তবায়ন করেছে এবং অবশিষ্ট ধারা-উপধারাগুলো বাস্তবায়ন করতে আন্তরিক৷
চুক্তি বাস্তবায়নে আরেকটি যে সমস্যা বিদ্যমান এবং প্রকট সমস্যা লক্ষণীয় সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে অসাংবিধানিক অনেকগুলো ধারা রয়েছে৷ যা বাংলাদেশ সংবিধান অবমাননা করার শামিল। তাই সংবিধান বিরোধী ধারাগুলো সংশোধন পূর্বক চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক৷