মোঃ সোহেল রিগ্যান- কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ এর ভয়ে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মুয়ালপি পাড়া কারবারিসহ প্রায় ৪০ টি পরিবারের ১৪৬ জনের মত নারী-পুরুষ ও শিশু পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে রুমা বাজারে। তারা বেশ কয়েকদিন থেকে কেএনএফ কর্তৃক অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল বলে জানান পাড়া কারবারি। স্থানীয় মারমা সম্প্রদায় ও এক বৌদ্ধ ভিক্ষু তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ভিডিও…
সেনাবাহিনীর সাথে কেএনএফ এর গোলাগুলিতে ৩/৪ জন কেএনএফ সদস্য নিহত হওয়ার গুঞ্জন শোনা গেল আজ পুলিশ একজনের লাশ উদ্ধার করেছে।
সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ তাদের পূর্বের হিংসাত্মক মুখোশ উন্মোচন করেছে। এই কুকি চিন জাতিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৭০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে জাতিগত দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও আক্রমণাত্মক হামলা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন উপজাতিদের নানানভাবে অত্যাচার করেছিলো। তাদের অত্যাচারের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে তাদের এই আক্রমণ ঠেকাতে এবং তাদের সনাক্ত করতে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন আমলে এক কঠিন আইন জারি করা হয়। যে আইনের গ্যারাকলে বর্তমানে পার্বত্য বাঙ্গালীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজ নামে বৈধ জমি ও কাগজপত্র থাকার পরেও মানুষ হেডম্যান রিপোর্ট ও ডিসির বাসিন্দা সনদের জন্য জুতা ক্ষয় করতে হয় আর যারা ভূমিহীন তাদের তো দুর্ভোগের শেষ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী বাসিন্দা হতে হলে হেডম্যান রিপোর্ট ও ডিসির বাসিন্দা সনদের প্রচলন রয়েছে। তৎকালীন কুকিদের চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে করা হয়েছিলো এ আইন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ আইন এখন শুধুমাত্র বাঙালিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এখানকার হেডম্যান ও ডিসিরা। তৎকালীন কুকিরা বার্মা হতে অবৈধভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করে উপজাতি ও ব্রটিশ আমলাদের উপর হামলা করার পর পুনরায় তারা আবার বার্মা ফিরে যেত। তাদের বিরুদ্ধে করা এই আইন আজ বাঙালিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়! তৎকালীন এখানে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন উপজাতিরা কুকিদের চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে কুকিদের কঠিন শাস্তি দেয়। এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছিল যে শাস্তির ভয়ে কুকিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। সময় কাল বির্বতনের ফলে কুকিরা আবার পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে এসে শান্তিতে বসবাস শুরু করে৷ তবে তাদের শান্তির এই বসবাস অতীতকাল টিকেনি৷ তারা সে তাদের পুরানো স্বরুপে ফিরে এসেছে। তা প্রমাণ করে তাদের সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। তারা তাদের জাত চেনানোর জন্য খোলস ছাড়িয়েছে এবং উন্মোচন করেছে তাদের হিংসাত্মক থাবা। সাম্প্রতিক সময়ে কুকি চিন অথাৎ নাথান বম এর সন্ত্রাসীরা বান্দরবানের রুমাসহ বেশকিছু এলাকাতে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা কুকি রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি তুলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা প্রদর্শন এর দুঃসাহস দেখিয়েছে। তাদের এই দুঃসাহস দেখানোর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হবে তা তারা আচঁ করতে না পারলেও অচিরেই ঠিকই আঁচ করতে পারবে বলে প্রাথমিকভাবেই প্রতিয়মান হয়। পূর্বের মতো তাদের বিষদাত উপড়ে ফেলা হবে।
কুকিদের সাম্প্রদায়িক সময়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে জানা যায়, কুকিরা খুব হিংস্র এবং উগ্র স্বভাবের জনজাতি। তাদের মধ্যে মানবতাবোধ ও সহাবস্থানে বসবাসের বিন্দুমাত্র লেশ দেখা যায় না। বান্দরবানে চলমান অস্থিরতা সৃষ্টি করে কুকিরা সাধারণ মানুষদের জনজীবনে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। সাধারণ মানুষদের তারা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেরা আশ্রয়-প্রশয় ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। সাধারণ মানুষ কুকি চিন এর সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এভাবে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কুকি চিন যা করছে সত্যি তা দুঃখজনক এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার শামিল। মানুষ এখন কুকি চিনকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে দেখছে। সাধারণ মানুষদের খাবার, পানি ও অর্থ সম্পদ কেড়ে নিয়ে তারা পাহাড়ে লুকিয়ে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর চোরাগোপ্তা হামলা করছে। সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তার কথা বিশেষ বিবেচনা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে যায়নি৷ এটা তাদের প্রতি রাষ্ট্রের উদারতার পরিচয় বলা যায়৷ কিন্তু তারা এটাকে রাষ্ট্রের দুর্বলতা ভাবে! আমাদের সেনাবাহিনীর রয়েছে সুদীর্ঘ অতীতকাল। সেনাবাহিনী একটি মানবতাবাদী বাহিনী৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর সুবিশাল প্রশংসা অর্জন রয়েছে৷ শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভেবে সেনাবাহিনী ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ যদি তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসে সেনাবাহিনী কঠোর হতে বাধ্য হবে।