পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি হয়েছে।

জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৮ হাজার নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে৷

0
ছবি: তথাকথিত শান্তিবাহিনী

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) হল বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এটিই মূলত উপজাতিদের অধিকার এর দাবি রেখে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা হলেও তার অন্তরালে রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা, অব্যাহত চাঁদাবাজি, সশস্ত্র কার্যক্রম, হানাহানি, খুন-গুম করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করে আসছে। বাংলাদেশের জন্মের পর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণেতাদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের দাবিসহ মোট চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো ছিল-

(ক) পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব আইন পরিষদ গঠন
(খ) সংবিধানে ১৯০০ সালের রেগুলেশনের অনুরূপ সংবিধির অন্তর্ভুক্তি
(গ) উপজাতীয় রাজাদের দপ্তর সংরক্ষণ
(ঘ) ১৯০০ সালের রেগুলেশন সংশোধনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের বসতি স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

ছবি: তথাকথিত শান্তিবাহিনী

দাবিগুলো সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী হওয়ার কারণে তৎকালীন দাবিগুলো প্রত্যাখান করেন। এটি মেনে নিতে না পেরে ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত প্রতিনিধি ও কর্মীরা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) প্রতিষ্ঠা করেন। যাত্রার প্রথম দিক থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি স্বায়ত্তশাসন ও জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি এবং পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতির অধিকারের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। তাদের দাবি ১৯৭৫ সালে পিসিজেএসএস এর সশস্ত্র সামরিক শাখা শান্তিবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। যদিও বিভিন্ন মাধ্যমের দাবি ১৯৭২ বা ৭৩ থেকে পিসিজেএসএস এর সশস্ত্র শাখা ছিল। তারা প্রথম রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর আক্রমণ শুরু করে ক্ষিরাম বন বিভাগের উপর হামলার মধ্য দিয়ে। এ হামলার মধ্য দিয়ে তারা তাদের উপস্থিতি এবং শক্তি সক্ষমতা জানান দেয়। এবং ১৯৭৭ সালে বান্দরবান সাঙ্গু নদীতে ৫ সেনা সদস্যকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের শক্তি ও হিংস্রতা প্রকাশ করে। মূলত তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একাত্তরের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই সদ্য স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রের আধিপত্য এবং উপস্থিতি মেনে না নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী একটি দেশের সরাসরি ইন্ধন ছিল।

ছবি: তথাকথিত শান্তিবাহিনীর কর্তৃক বাঙ্গালীদের পুড়িয়ে মারার লাশের বিভৎস ছবি

এই শান্তিবাহিনীর সদস্যদের লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ভিতরে তাদের শিকড় গেঁড়ে বসে। প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় তারা দ্রুত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়া দুঃসাহস প্রদর্শন করতে সামর্থ হয়েছে। তথাকথিত শান্তিবাহিনী সাধারণত সরকারি বাহিনী ও বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী হামলা শুরু করে। শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীদেরকে নিরস্ত্রীকরণ ও জে.এস.এসকে রাজনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যসহ উপজাতি জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়া পুরণের অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর সরকার একটি চুক্তি সম্পাদিত করেন। এ চুক্তি জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত হয়। চুক্তির পরবর্তীতে সময়ও জেএসএস তাদের সশস্ত্র শাখার তৎপরতা বন্ধ করেনি এবং সশস্ত্র সদস্যদের অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ করেনি। জেএসএস চুক্তির মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করেছে এবং নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চুক্তির ৭২টি ধরার- ৯৯ টি উপধারার সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছে। চুক্তির ৯৯ টি উপ-ধারার মধ্যে সরকার প্রায় ৬৯ টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন,১৫ টি আংশিক বাস্তবায়ন ও বাকি ১৫ টি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পক্ষান্তরে জনসংহিত সমিতির সন্তু বাবুকে শুধু দুটি ধারা কথা বলা হয়েছিল। একটি -তাদের সকল অস্ত্র আত্মসমর্পণ এবং দ্বিতীয়টি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা। কিন্তু তারা একটিও বাস্তবায়ন করেনি।

ছবি:তথাকথিত শান্তিবাহিনীর গণহত্যার শিকার বাঙ্গালীদের সারিবদ্ধ লাশ

বর্তমানে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজি, হানাহানি, রক্তরক্তি সংঘর্ষ ও অবৈধ অস্ত্রের জোর খাটিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ জেএসএস সৃষ্টি করেছে। এই জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৮ হাজার নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে৷ ২৭টি গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে চালিয়েছে৷ ভূষণছড়া, পাকুয়াখালী, লঙ্গদু সহ ২৭ টি গণহত্যায় নিহত হন প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ বাঙ্গালী আবাল, বৃদ্ধা-বনিতা, সন্তান সম্ভবা নারী এবং অসংখ্য শিশু। একই সাথে জেএসএস এই সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে বহু নিরীহ উপজাতি নারী-পুরুষও।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা ও জাতিগত ভেদাভেদ সৃষ্টি করে জেএসএস ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে।
অথচ পার্বত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় দিব্যি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বহন করে চলছে সন্তলারমা। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তার নিজস্ব জাতীয় আইডি কার্ড ও বাংলাদেশের পাসপোর্টও ছিল না। রাষ্ট্রদ্রোহী এই উপজাতি ব্যক্তি কে কেন আমরা লালন পালন করছি??
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জেএসএস যে, সন্ত্রাসবাদ, অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করেছে তা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার বাঙ্গালী হত্যার দায় ও সব ঘটনার দায় অবশ্যই জেএসএসকে নিতে হবে। এবং ইউপিডিএফসহ বাকী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপকর্মের দায়ও জেএসএসকে বহন করতে হবে। কেননা জেএসএস সৃষ্টি হয়েছে বলেই অন্যান্য আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল গুলোর হয়েছে।

লেখক- বিদ্যুৎ বড়ুয়া
বনরুপা, রাঙ্গামাটি
১২/২/২৩

আগের পোস্টকাউখালী-রানীরহাট সড়কে বেপরোয়া গতির জীপ গাড়ি কেড়ে নিলো ২টি তাজা প্রাণ।
পরের পোস্টজেএসএস পাহাড় থেকে বাঙ্গালীকে নিশ্চিহ্ন করতে গণহত্যা চালিয়েছে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন