জেএসএস পাহাড় থেকে বাঙ্গালীকে নিশ্চিহ্ন করতে গণহত্যা চালিয়েছে।

0
ছবি: জেএসএস তথাকথিত শান্তিবাহিনী

মোঃ সোহেল রিগ্যান– গণহত্যা হিংসার আক্রোশ, জাতিগত, বর্ণগত, ধর্মীয় হিসাবে বিবেচিত মানুষজনকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃত কার্য। ‘গণ’-এর অর্থ গোষ্ঠী এবং ‘হত্যা’র অর্থ সংহার। অর্থাৎ, গণহত্যা হলো কোনো গোষ্ঠীভুক্ত মানুষজনকে মেরে ফেলা। ইংরেজি প্রতিশব্দ জেনোসাইডের উৎসও একই। এটি গ্রিক জেনোস, অর্থাৎ মানুষ বা বর্ণ থেকে এবং সাইড অর্থাৎ মারা থেকে এসেছে। সেহেতু জেনোসাইডের বা গণহত্যার অর্থ “জাতিগোষ্ঠী, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা কার্য”। পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর মতে “পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী একটি আলাদা জাতি। বর্ণগত, ধর্মীয়ভাবে বাঙ্গালীরা উপজাতি বা বৌদ্ধ ধর্ম হইতে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এই ভিন্ন জাতি ধর্মের বাঙ্গালীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে একদম নিশ্চিহ্ন বা ধ্বংস করতে গণহত্যায় উত্তমপন্থা হতে পারে।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৯ সালে পুনর্বাসিত বাঙ্গালীকে জেএসএস সেলক্ষ্যে ধ্বংস করার নিমিত্তে গণহত্যা চালায়। জেএসএস এর বাঙ্গালীদের উপর এ গণহত্যা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নীল নকশা বাস্তবায়ন।

প্রতিবেশী দেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে তা নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয় এবং তারজন্যেই তাদের এই অবদান আমরা স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরও স্বীকার করে আসছি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও অন্তরালে থাকা প্রকৃত বাস্তব সত্যটি দেশ ও জাতির কাছে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে উন্মোচন করা সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেকে যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করলেও স্বাধীনতার যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত দেহ শুকানোর আগেই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সংবিধান প্রণেতার কাছে অসাংবিধানিক দাবিদাওয়া পেশ করেন। এমন সব দাবি পেশ করেন যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়৷ ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) বা জেএসএস প্রতিষ্ঠা করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করার মধ্য দিয়ে এ এদেশের এ অঞ্চলের উপজাতীয়দের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য ধরে রাখার কৌশল হিসেবে উক্ত সম্প্রদায়ের একটি অংশের নেতাকে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং কূটনীতিক সহযোগিতা প্রদান করেছিল।

দেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা যেমন হাস্যকর তেমনি কারো ক্ষতি করে সহানুভূতি দেখানো ও একি কথা। এটি মূলত কাটা ঘায়ে নুন ছিটানোর মত। বস্তুতঃ বিচক্ষণ লোকদের জন্য প্রবাদ এর সারমর্ম যথেষ্ট।

সচেতন মহলের প্রশ্ন আসতে পারে কে এই কুখ্যাত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা? তাই তার পরিচয়টা জেনে নেয়া যাক-
১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন লারমা। ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১১টি উপজাতি জনগোষ্ঠীর স্বঘোষিত প্রতিনিধি হিসেবে জনসংহতি সমিতি এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে মোট ৪ দফা দাবি পেশ করেন আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের জন্য। বাংলাদেশের খসড়া সংবিধানের বিরোধিতা করেছিলেন, যা বাঙালি সংস্কৃতিকে তথাকথিত আধিক্য দিয়েছিল এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী অবাঙালি নৃগোষ্ঠী এবং উপজাতি সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেয়নি বলে জেএসএস এর বক্তব্য। লারমা তথা জেএসএস সন্তুর দাবী তখন শেখ মুজিবুর রহমান তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এজন্যে ঐ বছরের ৩১শে অক্টোবর লারমা সংসদ ত্যাগ করেন সংবিধানে পাহাড়ীদের বাঙালী বলার প্রতিবাদে। যদিও বাঙ্গালী বলার কারণে সংসদ ত্যাগ করার বিষয়টি সত্য নয়। প্রকৃত সত্য হলো সংসদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা এবং বিকল্প পথ বের করার কৌশল অবলম্বন। কথিত আছে লারমা উপজাতীয়দের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। যদিও এটাকে তারা পুঁজি ও সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে খবর রাখে এমন সূত্রগুলোর দাবি লারমা মূলত উপজাতিদের অধিকারের লড়াই চালিয়ে যান প্রতিবেশী দেশের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্দনে এবং আর্থিক সহযোগিতায়।
১৯৭৩ সালে নির্বাচনে লারমা আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের সংসদ প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেন ইংল্যান্ডে। ১৯৭৫ সালে বাকশালেও যোগদান করেছিলেন।
১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলে পরের দিনই আত্মগোপনে চলে যান এবং গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা তথাকথিত শান্তি বাহিনী। একই সাথে গড়ে তুলেছিলেন মহিলা সমিতি, জুমিয়া সমিতি, যুব সমিতি ও গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী। স্থানীয় অধিবাসীদের তথ্য মতে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত হয় শান্তিবাহিনী। লারমা সম্পর্কে জানা যায়, সে মার্ক্সীয় আদর্শ ধারণ করেছিলেন তার আন্দোলনের জন্য। পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দেশের অখণ্ডতার স্বার্থ বিবেচনায় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের লাগাম টেনে ধরার অংশ হিসেবে সমতল থেকে নতুন বাঙ্গালীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম- খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলে পুনর্বাসিত করলে লারমার প্রতিষ্ঠিত জেএসএস এর সন্ত্রাসী তৎপরতা তীব্র হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে ওঠে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দলে সৃষ্টি হয় আন্তঃকোন্দল। চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং নেতৃত্বে ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে বিশাল বিরোধ তৈরি হয়। পক্ষ-বিপক্ষ দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। ২টি গ্রুপ এম এন রায় গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮২ সালেও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। কথিত আছে ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর লারমা প্রীতি গ্রুপের দলের আক্রমণে ৮ জনসহ নিহত হন খাগড়াছড়িতে।
লারমার মৃত্যুর পর নেতৃত্বে আসে তারই আপন ছোটভাই মানবজাতির রক্তপিপাসু এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের উপর দফায় দফায় গণহত্যার নেতৃত্বদাতা কুখ্যাত খুনি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। ১৯৯৭ সনে সরকার ও জেএসএস সন্তু লারমার মধ্যকার সম্পাদিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। এর আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হন সন্তু লারমা। যা প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পারিবারিক পরিচয় হলো-
তার মাতার নাম ছিল সুভাষিণী দেওয়ান এবং বাবার নাম চিত্তকিশোর চাকমা। তার সহধর্মিনীর নাম পঙ্কজিনী চাকমা এবং ছেলে জয়েস লারমা, মেয়ে পারমিতা লারমা। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা, ভাই শুভেন্দু প্রভাষ লারমা এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। সন্তু লারমার বড়ভাই লারমাকে সংক্ষেপে অনেকেই এম.এন লারমা বলে থাকে। জেএসএস প্রতিষ্ঠা হওয়ার পূর্বের কর্মজীবন সম্পর্কে জানা যায়-
কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে আইনজীবী কাজ শুরু করেন। তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়- ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মাওরাম (মহাপুরম) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা এখন কাপ্তাই বাঁধের কারণে কাপ্তাই হ্রদের তলে ডুবে রয়েছে।
তার জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে জানা যায়-
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু)
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ মহাপ্রুম গ্রাম, ইউনিয়ন: বুড়িঘাট, উপজেলা: নানিয়ারচর, জেলা: রাঙ্গামাটিতে জন্ম। অনেকের ধারণা প্রতিবেশী দেশে তার জন্ম হয়।
১০ নভেম্বর ১৯৮৩ (বয়স ৪৪)
খেদারা ছড়ার থুম, উপজেলা: পানছড়ি, জেলা: খাগড়াছড়িতে মৃত্যুবরণ করে৷
লারমা মৃত্যুর পর জেএসএস সন্তু গ্রুপ একটিবারও লারমা হত্যার বিচার দাবি করেনি। ইউপিডিএফও লারমা হত্যা বিচার দাবি করেনি। অথচ এরাই পার্বত্য চট্টগ্রামে পান থেকে চুন খসলে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে।

এই কুখ্যাত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (মঞ্জু) যদি সেদিন প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে বাংলাদেশের অভ্যন্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেএসএস কিংবা তার সশস্ত্র শাখা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর আত্মপ্রকাশ না করতেন তাহলে অত্রাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ, হানাহানি, জাতিগত ভেদাভেদ এবং ৩৮ হাজার নিরস্ত্র বাঙ্গালীসহ আরো হাজারো পাহাড়ীর জীবন বলি দিতে হতনা। লারমার মৃত্যুর পর তার ছোটভাই সন্তু লারমা সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালীদের নিশ্চিহ্ন এবং ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে বেছে বেছেই বাঙ্গালী আবাল, বৃদ্ধা-বনিতা এবং জেএসএস বিরোধীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম এবং বর্বরোচিত গণহত্যার অন্যতম একটি৷

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস, পাহাড়ে পূর্নবাসিত বাঙ্গালী মা-বোনদের ইজ্জত হরণ করেছে৷ বাঙ্গালী যুবকদের গুলিবর্ষণের পর হাত-পা কেটে টুকরো টুকরো করেছে। বাঙালি শিশুদের গলা টিপে ও আছাড় মেরে হত্যা করেছে। বৃদ্ধ বাঙ্গালীদের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে৷ বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি ও গৃহপালিত পশু কে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করেছে। এভাবে গ্রামের পর গ্রাম গণহত্যা পরিচালনা করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর মলয় চাকমা ও রাজেশ চাকমাসহ অসংখ্য মানবাকৃতির দানব। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার অন্যতম হল পার্বত্য বাঙ্গালী গণহত্যা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা পরিচালনা করার বেশকিছু কারণ ছিল। তার মধ্যে অপ্রকাশিত কিছু কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত মিলে তার বিশ্লেষণ করে যা জানা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো-

১. পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হইতে বিচ্ছিন্ন করে জুম্মল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠন করা।

২. পার্বত্য চট্টগ্রাম-কে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা।

৩. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রতিবেশী দেশের বীজ বপন করা এবং এর মাধ্যমে এদেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর যদি অদূরভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের জন্য যেনো কাঁটা না হয়। তাই এদেশে প্রতিবেশী দেশ একটি শক্তিশালী এজেন্ট তৈরি করেছে। এরজন্য দাবার গুটি হিসেবে এদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠীর একটি উগ্রবাদী সমর্থক গোষ্ঠীকে খুঁজে নিয়েছে।

৪. উপজাতি নেতৃত্বশ্রেণী লারমা ও তার ভাই সন্তুর ধারণা ছিল- মুসলিম দেশ বাংলাদেশের সাথে থাকার ফলে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং জাতিগত পরিচয় মুছে যাবে এবং একটা সময় তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে দেশান্তরিত হবে। তাদের এই ধারণা তৈরি হওয়ার অমূল্যক প্রধান কারণ ছিল- চাকমারা কোনকালেই পৃথিবীর কোনোদেশে স্থায়ী বসতি গেড়ে দীর্ঘদিন থাকতে পারেনি। একমাত্র তাদের স্বভাব সুলভ আচরণে কারণেই। তারা ভেবেছিল হয়তো মুসলিম দেশ অদূরভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসন চালাবে- এর মাধ্যমে অত্রাঞ্চলে তাদের নেতৃত্ব ধ্বংস হবে, তাদের বিশ্বাসঘাতকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির গোমর ফাঁস হবে। রাজপ্রথাও চলে যাবে। তাই নিজেদের তাবেদারি টিকিয়ে রাখার জন্য দেশের সর্ব বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীর প্রতি জুলুম, নির্যাতন ও অন্যায়- অবিচার তাদের বিবেকে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

৫. লারমা ও তার ভাই সন্তুর বাঙ্গালী মুসলমানদের প্রতি গণহত্যা পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে উগ্র চিন্তাধারা ও অন্য জাতি ধর্মের প্রতি তাদের ঘৃণা ও আক্রোশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল বৌদ্ধ ধর্ম এবং ত্রিপুরা হিন্দু ধর্ম। অন্যান্য ধর্মের লোক ছিল অতি নগণ্য। অত্রাঞ্চলের জাতিরা সম্পূর্ণভাবেই মুসলিম ধর্ম ও বাঙ্গালী জাতি থেকে আলাদা। সন্তু গংদের ধারণা ছিল এই মুসলিমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমণ করে তাহলে এখানে সরকারের আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে। এরই মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা, দেশদ্রোহিতা মূলক কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, রাজপ্রথা বিলুপ্ত ও পরিবার কেন্দ্রীক নেতৃত্বের অবসান হবে। তাই তারা ভারতের ইন্ধনে অস্ত্রহাতে নিয়ে সশস্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের উপর নৃশংস গণহত্যা পরিচালনা করতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

উপরোক্ত তথ্যের আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে অনুমেয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস কর্তৃক বাঙ্গালীদের উপর গণহত্যা চালানোর বিভিন্ন কারণ থাকলেও মূল কারণ বিষয় ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত।

জেএসএস অতীতের মত বর্তমানেও সমস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকে পরিণত করেছে। ১৯৯৭ সনের ২-রা ডিসেম্বর এর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্ত মোতাবেক সরকার জেএসএস সন্তুর ৭২টি ধারার দাবিদাওয়ার অধিকাংশ বাস্তবায়ন করেছে। দুঃখজনক যে, জেএসএস সরকারকে চুক্তি সম্পাদিত করার পূর্বে বহু কঠিন শর্ত দিয়েছিল। সরকার জেএসএসের সবকটি কঠিন শর্ত মেনেই চুক্তি সম্পাদিত করেন। সরকারের পক্ষ হইতে জেএসএস সন্তুর প্রতি একটিমাত্র শর্ত ছিল। চুক্তির ১টি মাত্র মৌলিক শর্ত ছিলো জেএসএস সদস্যদের সম্পূর্ণভাবে অবৈধ অস্ত্র পরিহার পূর্বক স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। হতাশার কথা হল- জেএসএস এই ১টি মাত্র শর্তই মানতে পারেনি! যারমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বরখেলাপ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির লঙ্ঘনের দায়ে জেএসএস এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা উচিত।

এই জেএসএস বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পার্বত্যবাসীরা সার্বক্ষণিক জেএসএসের চাঁদাবাজি, হত্যা, খুন-গুম এবং হয়রানির আশঙ্কায় থাকে। ১৯৭৩ সালে যদি এই জেএসএস প্রতিষ্ঠা না হত পার্বত্য চট্টগ্রামে এ অরাজকতার পরিবেশ এবং ৩৮ হাজার নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা গণহত্যার শিকার হতনা। অত্রাঞ্চলের মানুষের অধিকার, সুখ-শান্তি ও উন্নয়ন জেএসএস কেড়ে নিয়েছে। জেএসএস এর চাঁদাবাজি ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখানে দল- উপদল সৃষ্টি হয়েছে। জেএসএস এম.এন লারমা গ্রুপ, ইউপিডিএফ প্রসিত বিকাশ গ্রুপ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বর্মা গ্রুপ কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে প্রতিনিয়ত, রাষ্ট্র ও বাঙালির বিরোধিতা করে যাচ্ছে। জেএসএস পাহাড়ের সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির মূল হোতা।

আগের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
পরের পোস্টস্বজাতি কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ নারী নির্যাতন- নারীবাদী ও তথাকথিত সুশীল কোথায়?

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন