সীমান্ত সড়কের কাজ ঠেকাতে সশস্ত্র সংগঠন গুলোর বড় অস্ত্র ‘ধর্ষণ অপপ্রচার’!

0

ধর্ষণ, বর্তমান সমাজে একটি মারাত্মক ঘৃণীত অপরাধ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ধর্ষণকেই পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নিতে চায় একটি মহল। মাঝে মাঝেই ধর্ষণকে পুঁজি করে বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও নিরাপত্তাবাহিনীকে কাবু করার চেষ্টা করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে। পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর একটি বড় অস্ত্র এই ধর্ষণ ব্যবসা।

সম্প্রতি, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় স্থানীয় এক বাঙ্গালি যুবকের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে এ ঘটনায় স্থানীয় বিজিবি ব্যাটালিয়নের নাম জড়িয়ে অপপ্রচারও চালায় স্বার্থান্বেষী একটি মহল। তবে অনুসন্ধান বলছে, সীমান্ত নিরাপত্তায় গৃহীত সরকারের বড় একটি প্রকল্প সীমান্ত সড়ক ঘিরে একটি ষড়যন্ত্রেরই অংশ এই ধর্ষণ নাটক।

জানা যায়, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাস সংগঠন ইউপিডিএফ সমর্থিত অনলাইন পোর্টাল সিএইচটি নিউজ পোর্টাল, ইউপিডিএফেরই নারী সংগঠন হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদে সংগঠন দুটির বরাতে বান্দরবানের লামায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা অভিযোগ এনে সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়।

মিথ্যা ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাত সাড়ে ৭টায় খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মহালছড়ি উপজেলার মো. সাদ্দাম (২৮) নামে এক যুবক কর্তৃক নিজ বাড়িতে এক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। এতে বলা হয়, “মাটিরাঙ্গায় এলাকাবাসী ন্যায় বিচার পেতে হাতেনাতে ধৃত পাহাড়ী গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী মোঃ সাদ্দামকে চালিতাছড়া বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে বিজিবি সদস্যদের হাতে সোপর্দ করে। বিজিবি সদস্যরা গ্রামবাসীদের সেখান থেকে চলে যেতে নির্দেশ দেন ও ধর্ষণের চেষ্টাকারী মোঃ সাদ্দামকে কোন আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমার বরাত দিয়ে প্রকাশ করা ওই মিথ্যা সংবাদে উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে অনুসন্ধানে কোন সত্যতাও জানা যায় নি। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার পলাশপুর বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনস্ত চালতাছড়া এলাকায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে বলেও স্থানীয়রা জানে না।

স্থানীয় এক কার্বারি জানান, ‘আমার জানা মতে এ ধরনের কোন ঘটনা আমাদের এলাকায় ঘটেনি। হতে পারে ভিতর পার্টি (ইউপিডিএফ) কাউকে দিয়ে কোন মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে।’

ঘটনার বিস্তারিত জানতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমাকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি, এ বিষয়ে কোন তথ্য দিয়ে অপারগতা জানান। এমনকি ভিক্টিমের কোন পরিচয়ও বা ঘটনার তারিখ-সময় কিছুরই কোন তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেন নি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে বলে তার জানা নেই। যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সবার আগে তারই জানান কথা।

অনুসন্ধান বলছে, অরক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত সীমান্তগুলোতে নানাবিধ অপরাধ ঠেকানো ও সীমান্ত সুরক্ষার লক্ষে সরকারের বড় একটি চলমান প্রকল্প খাগড়াছড়ি-রামগড়-তানাক্কাপাড়া (মাটিরাঙ্গা) সীমান্ত সড়ক ঘিরে পাহাড়ের একটি সশস্ত্র স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরেই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।

নিজেদের অবাদ চলাফেরা, মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালানসহ অবৈধ ব্যবসায় ভাটা পড়ার কারণে সশস্ত্র ওই মহলটি দীর্ঘদিন ধরেই নানা বাহানায় একাধিকবার সীমান্ত সড়কের নির্মান কাজ বন্ধের জন্য অনেকগুলো ঘটনাও ঘটিয়েছে। সীমান্ত সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারীভাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করা হলেও সশস্ত্র ওই গোষ্ঠিটি সাধারণ পাহাড়িদের ভূমি জোর পূর্বক দখলের অভিযোগ এনে ইতিমধ্যেই বহু জলঘোলা করার চেষ্টা করেছে, তবে স্থানীয় সাধারণ পাহাড়িরা এসব ষড়যন্ত্রে পা না দেয়ায় তাদের এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

এরই প্রেক্ষিতে, অনেকটা মরিয়া হয়ে ‍উঠে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। সর্বশেষ, বাঙ্গালী যুবক কর্তৃক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের কল্পিত অভিযোগ এনে তার সাথে জড়িয়ে দেয়া হয় বিজিবি সদস্যদেরও।

তবে বিজিবির পক্ষ হতে বলা হয়, অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্য নেই তাদের কাছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বরাতে সিএইচটি নিউজ কর্তৃক মিথ্যা অভিযোগ তোলার পর সংবাদ বিবৃতি দিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবির পলাশপুর ব্যাটালিয়ন। বিবৃতিতে, বিজিবির বিরুদ্ধে প্রদত্ত বিবৃতিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করা হয়। খেদাছড়া ব্যাটালিয়ন (৪০ বিজিবি) এর অধীনস্থ চালিতাছড়া বিওপি অথবা অন্য কোন বিওপি/ক্যাম্পে এ ধরনের কোন অভিযোগ কেউ করতে আসেনি বা করেনি বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। বিজিবি দাবি করে, প্রকাশিত এ মিথ্যা সংবাদটি করা হয়েছে বিজিবি এবং পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য, যা মোটেই কাম্য নয়। এতে বেসামরিক পরিমন্ডলে বিজিবির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও দাবি পলাশপুর ব্যাটালিয়নের।

অনুসন্ধান বলছে, এর আগেও একাধিকবার, নিরাপত্তাবাহিনী ও বাঙ্গালী সম্প্রদায়কে নিয়ে উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে পোর্টালটি। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে অনলাইন পোর্টালটির বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এরপর মূল অনলাইন পোর্টালটি বন্ধ হয়ে গেলে একটি ব্লগ সাইট তৈরী করে পুনরায় মিথ্যাচার চালায় পোর্টালটি। ধারাবাহিক অপপ্রচারের অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন পলাশপুর বিজিবির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালায় সিএইচটি নিউজ। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিজিবি কর্তৃক এক পাহাড়ি যুবককে মারধরের অভিযোগ তোলে সিএইচটি নিউজ। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানে উঠে আসে মূল ঘটনা।

মূলত, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি ও শান্তির পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে ইউপিডিএফ সমর্থিত এই অনলাইন ব্লগটি।

একই ভাবে, ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওরাছড়ি গ্রামে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। ঘটনার পরের দিন জেএসএস’র পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় যে, ওই এলাকায় দু’কিশোরীকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনার পর থেকে পাহাড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

কিন্তু পরবর্তীতে এ ঘটনাকে নিয়ে নানা রকম জণঘোলা করলেও নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে নি জেএসএস। উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই কিশোরীর মেডিক্যাল পরীক্ষার পর বেরিয়ে আসে ঘটনার উল্টো চিত্র। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পন্ড করতেই অভিযোগ তোলা হয় ধর্ষণের।

পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও নিরাপত্তাবাহিনীকে পাহাড় হতে অপসারণের সুদীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অস্ত্রের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে পাহাড়ি নারীদের ব্যবহার করছে সশস্ত্র আঞ্চলিক দলের পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। কখনো নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে লাঠি হাতে নারীদের দেখা যায় রাজপথে, আবার কখনো নিষ্পাপ পাহাড়ি তরুণীদের ভিক্টিম সাজিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা নাটক মঞ্চস্থ করে কলুষিত করার চেষ্টা করা হয় নিরাপত্তাবাহিনীর সম্মান। তবে এসব কাজে যে পাহাড়ি নারীদের জিম্মি ও বাধ্য করা হয় তাও সহজেই অনুমেয়।

আগের পোস্টদুই পাহাড়ি নারী ধর্ষণ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদীত।
পরের পোস্টরাঙ্গামাটি রিজিয়ন কর্তৃক স্থানীয় জনসাধারণকে আর্থিক অনুদান প্রদান।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন