একটি গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের মূল বাংগালী জনগোষ্ঠীকে নাগরিক ও মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।
পার্বত্যাঞ্চলে সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে বর্তমান অনেকটাই উন্নত জীবনযাপন করছে এখানকার উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা। এটা যেমন সুখময় তেমনই দুঃখময়। অত্যান্ত দুঃখজনক খবর যে, বারবার এ অঞ্চলের সবকিছুতে একটি গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের মূল বাংগালী জনগোষ্ঠীকে নাগরিক ও মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।একটি জাতি গোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে আরেকটি জাতির মৌলিক অধিকার হরণ করা আইনগত অপরাধ। বলাবাহুল্য, পার্বত্য চুক্তি যেহেতু সমতার ভিত্তিতে হয়নি সেহেতু নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের বাংগালীরা সরকারের অনেক সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়েছে৷
১৯৯৭-২- রা ডিসেম্বরের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উপজাতি কোটা পিছিয়ে পড়া উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবন মানন্নোয়নে অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে উপজাতি জনগোষ্ঠী অনেকটাই চালকের আসনে পৌছে গিয়েছে। সরকার যদিও এ চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের শান্তি স্থিতিশীল সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীক প্রাধান্য দিয়েছে, তা কালক্ষেপণ ছাড়াই বলা যায়। বলাবাহুল্য যে, চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে সকলেই অনিচ্ছার স্বত্বেও মেনে নিতে হচ্ছে! চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন চলমান সংঘাত বন্ধ করণে অত্যন্ত কার্যকারী ছিলো এটাও যৌক্তিক। প্রশ্ন হচ্ছে, চুক্তির সে কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা ও সুবাতাস কী বইছে পাহাড়ে? অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্তাক্ত পাহাড় এখনো পূর্বেকার ন্যায় নয় কী? তাই এই চুক্তিটি বিভিন্ন ধারা- উপ ধরা সংশোধন,পরিবর্ধন, পরিমার্জন সময় এখন। অন্যথায় এর ধারাবাহিক অপব্যবহারে ফলে একদিকে যেমন জাতিগতভাবে বাঙালিরা পিছিয়ে যাবে, অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হবে।
বর্তমান সমসাময়িক সময়ে কিংবা বিগত সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে, আধুনিক বিশ্বের বর্তমান বাংলাদেশের পরিধি, একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকবে, এটা কাম্য হতে পারেনা। আর একটি রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় সুদীর্ঘ ৫২/৫৩ বছর পাড়ি দিয়ে এসে একটা ক্ষুদ্রতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বা গণ্ডির মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তাকে রাজনৈতিক কারণেই হোক কিংবা সামগ্রিক স্বার্থে হোক, বিসর্জন দিতে হবে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তাই সময় এসেছে এই শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার। তা না হলে জাতিগতভাবে বাঙালি জাতিসত্তা ভূলন্ঠিত হবে। যে সুযোগের অংশ হিসেবে কুকিচিনের মতো আরও অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দলের সৃষ্টি হয়ে প্রত্যেকেই তাদের অধিকার নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বেড়াবে। জাতি হিসেবে এই দায় আমাদেরকেই বইতে হবে। আমরা তো কথায় প্রায়শই বলি “বাঙালি বীরের জাতি”। কিন্তু কই বাস্তবে তার সাথে কোন মিল নেই।
তাই গতস্য শোচনা না করে, নবধারা,নবউদ্দম নিয়ে অবস্থানগত,ভূ-রাজনৈতিকগত, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার সময় এখনই। তা না হলে বলতে হবে সময় থাকতে সাধন হলো না।