ঐতিহাসিক ভুলে কুকি-চিন জনগোষ্ঠী।

0

কুকিরা চীন, তিব্বত ও মঙ্গোলিয়া হইতে আগমণ করে মিয়ানমারের চীন প্রদেশের চীনা পাহাড়ে বসতিস্থাপন করে। প্রবাদে আছে কুকিরা মোঙ্গোলীয় মহাজাতির একটি শাখা। কুকি মূলত কোন একক নৃগোষ্ঠী নয়। প্রায় ৫০ টি জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে কুকি-চিন-মিজো জাতি গঠিত। এদের অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমারের চিন রাজ্যে বসবাস করে। এদের বড় একটি নৃগোষ্ঠী ভারতের মিজোরাম রাজ্যে মিজো জাতি যারা বাংলাদেশে বম, লুসাই ও পাংখোয়া নামে পরিচিত‌। এই জাতিগোষ্ঠীর একটি অংশ মিয়ানমার ও ভারতে থাডো নামে পরিচিত। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে ভারতের মিজোরাম জেলায় কুকি জো জাতির বসবাস বেশি। বাংলাদেশের বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল অঞ্চলে এদের বেশি বসবাস রয়েছে। এসব জাতিসত্তা নিজেদের বলে ‘জো’। বলা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক কুকি চিন জাতিকে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং দেশান্তরিত করা হচ্ছে তারজন্য সীমান্ত পার হয়ে কুকিরা মিজোরাম ও মায়ানমারের চিন প্রদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

ব্রিটিশশাসনামলে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বৃটিশ সরকার পাহাড়ী এলাকায় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে নি। কিন্তু ১৮৫৯-৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কুকিরা স্থানীয় সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ শুরু করে।

কুকিদের এই আক্রমণের ১৮৬ জন ব্রিটিশ প্রজা খুন হয় এবং ১০০ জনকে তারা বন্দী করা হয়। এছাড়া এরা অন্যান্য ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর উপরও অত্যাচার করে। প্রশাসনিকভাবে এ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি ত্বরান্বিত হয়।

১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কুকিদের শায়েস্তা করার জন্য ব্রিটিশরা নানান আইন প্রনয়ন করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ প্রশাসনের উপর কুকিরা দফায় দফায় আক্রমণ করে। এই আক্রমণ ঠেকাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা নয় অথাৎ যাদের এ অঞ্চলে জায়গা জমি নেই তাদের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি (১৯০০) আইনে বলা হয়েছে এখানকার বাসিন্দা হতে হলে নিজ নামে জায়গা-জমি থাকতে হবে। এবং জেলা প্রশাসক ডিসি’র বাসিন্দা সনদের ভিত্তিতে এ অঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে গণ্য হবে৷ তৎকালীন কুকিরা দল বেধে এসে আক্রমণ করতো মূলত কুকিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হেডম্যান রিপোর্ট অনুযায়ী ডিসি সনদের প্রচলন শুরু হয়। যা আজ বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে৷ এই কুকিরা ছিল বর্বর জাতি, তারা চাকমাদের মত অত্যাচারি এবং অকৃতজ্ঞ৷

পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মূল বিরোধ হচ্ছে চাকমাদের সঙ্গে৷ খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতকের দিকে আগত কুকিরা পরবর্তী অনুপ্রবেশ করা চাকমা কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়েছিল৷ ব্রিটিশরা চাকমাদের সহযোগিতায় কুকিদের দেশান্তরিত করেছিল৷ তার দায়ভার তো বর্তমান বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বহন করতে পারে না। এবং তারজন্য কুকিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে পারেনা৷

বাংলাদেশ ও তার বাঙ্গালী জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়া এবং চোরাগোপ্তা হামলা করা কুকিদের এক ঐতিহাসিক ভুল৷ কুকিরা এই রাষ্ট্র কর্তৃক কখনো দেশান্তরিত বা নির্যাতিত হয়নি। কুকিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বারবার ছাড়তে হয়েছে চাকমাদের কারণে। কুকিদের এই যুদ্ধ হওয়া উচিত চাকমাদের বিরুদ্ধে। তারা তা না করে এক ঐতিহাসিক ভুল করে বসেছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়ার কারণে কুকি সংগঠন ও তাদের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা অচীরেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হবে৷ একেবারে মাটিতে মিশে যাবে।

প্রসঙ্গটি এজন্য এনেছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে মিজোরাম অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আইজল থেকে এদেশে বসবাসরত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রবল সমর্থন দেখা যাচ্ছে। এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ বিরোধী নানান কুৎসা ও প্রোপাগান্ডা দেখা যাচ্ছে। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণ, বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় কুকি চিন জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি। অত্র অঞ্চলের কুকি চিন জনগোষ্ঠী একসময় চাকমা কর্তৃক বিতাড়িত হয়েছে। সেই পুরাতন ভয়কে পুঁজি করে এখানকার জনগোষ্ঠীর তথাকথিত দলনেতা এবং কর্ণধার পরিচয় বহন করা নাথান বম (কেএনএফ) প্রথমে সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে সশস্ত্র সংগঠন এবং জাতির অধিকারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চাঁদাবাজি অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। চাঁদাবাজির এই অর্থ দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছে। এই চাঁদাবাজ ও অস্ত্রবাজদের রক্ষা করতে আইজল সমর্থন জানাচ্ছে। যদিও সাধারণ কুকি-চিন জনগোষ্ঠী কেএনএফ এর মত সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করেনা এবং কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে না কেএনএফ তা সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট জানিয়েছে ৬টি জো জাতির প্রতিনিধিগণ।

আগের পোস্টনাথান বমের নিকট তার বন্ধুর খোলা চিঠি!
পরের পোস্টরাঙ্গামাটি সেনা জোনের কাউখালী ক্যাম্পের বিশেষ অভিযানে অবৈধ কাঠ উদ্ধার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন