অপ্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রাম- সোহেল রিগ্যান।

পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালি নির্যাতিত  হওয়ার মূল কারণ বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তি ও বাঙালি একটি পক্ষ মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াই

0
ছবি: মোঃ সোহেল রিগ্যান

পাহাড়ে মূল সমস্যা সংকট নিরসন, শান্তিবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, সেনাবাহিনীর জীবন যুদ্ধ, সরকারের নীরব ভূমিকা ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ হাসিল এবং স্থানীয় বাঙালীরা মীরজাফর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ। এই নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।

 

পার্বত্য সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা,পার্বত্য সমস্যা গোড়াপত্তনে কারা, পাহাড়ে বাঙালি ও উপজাতি আগম তথাকথিত সুশীল ও বুদ্ধিজীবিদের মনগড়া কল্পকাহিনি, গুচ্ছগ্রামে বন্দিশালায় মানবেতর জীবনযাপন, তথাকথিত শান্তিবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, সেনাবাহিনীর জীবন যুদ্ধ ও অবদান, রাজনৈতিক দলগুলোর ডাবল স্ট্যান্ডবাজি বা স্বার্থ হাসিল, পার্বত্য চুক্তির ক্ষতিকর প্রভাব, চুক্তির সুফল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান, এবং জাতির ক্ষতিসাধনকারীরা মীরজাফর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ, চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে জেএসএস ও সরকারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসব নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন-

বাংলাদেশের সরকার গঠন যেসব রাজনৈতিক দলগুলো করেন তারা কোনভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তরিকতায় ছিলনা। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটুকু সমাধান না করে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল এবং বিদেশিদের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার আশায় ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে খুশি রাখতে এ অঞ্চলের সমস্যাদি বরাবরই এড়িয়ে গেছে। পার্বত্য উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী দেশদ্রোহী দমন করা উচিত নয় হিতে বিপরীত হবে বরং রাজনৈতিক ভাবে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে। এ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবস্থা নিতে সম্পূর্ণ অপারগত ছিল। এর মূল কারণ ছিলো আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নিজেদের ভিতরে রাজনৈতিকভাবে কোন্দলে জর্জরিত এবং ক্ষমতা যাওয়ার জন্য উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজেদের কব্জায় রেখে ক্ষমতার আসনে বসার সু-পরিকল্পনা। বিএনপি মনে করছে উপজাতীয়দের খেদানো বাড়তি একটা ঝামেলা। একই পন্থা আওয়ামীলীগও অনুসরণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিকদল মনে করছে! পক্ষান্তরে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ব্যবহার করে ছেড়েছে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই পার্বত্য ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ।

পার্বত্য সমস্যা গোড়াপত্তন, সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি কারা করেছে বিষয়টি দেশপ্রেমিক জনতার ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত বলে মনে করি। না হয় বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার সচ্ছল ধারণা অপ্রকাশিত থাকবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী ছিনিয়ে এনে স্বাধীন একটি গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করে। যদিও বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাধীনতা লাভ করে। এ বিষয়টি সকলেরই জানা। ভারত সহযোগিতা না করলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে পেরে উঠতো কীনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। যাক ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে কাঙ্ক্ষিত জয় লাভ করে। সেটি আমরা অস্বীকার করছি না। আসি মূল কথায়-

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তখন ভারতের রাষ্ট্র পরিচালকদের ভিতরে একটি ধারণা জন্মে ছিল। সেটি ছিল অবশ্যই পূর্বপরিকল্পিত এবং সুদূর প্রসারিত বলা যায় অনায়েসে। ভারতের সরকার প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারকগণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে চক এঁকেছে ভারতের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য এ দেশের ভূখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতি জনগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের আঁকা সেই চকই পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্তি সৃষ্টি ও অশান্তির আগুনে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটির একদশমাংশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে যা বর্তমান চরম সংকটে উত্তীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংবিধান পূর্ণগঠন এবং দেশের জনগণের জীবন আচার সংবিধানের সম্পৃক্ততা করে। যদিও তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়ে বসবাস করা জাতিসত্বাকে বাঙ্গালী জাতিস্বত্বা হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য ঘোষণা করে৷ ভারত কৌশল পূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাকে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব শ্রেণীকে ভুলভাল বুঝিয়ে ভেটো দেয়। আর এমনিতে উপজাতি জনগোষ্ঠী পূর্ব থেকে ভারত প্রেমী। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় কিন্তু উপজাতিরা ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল। বাঙ্গালী ও চাকমা অনেক লেখকদের লেখাতে ফুটে উঠে এ প্রকাশিত সত্য। ৭২’ এ ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে রাজধানী নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ পাহাড়ে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি কিংবা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করবে এবং হত্যাযজ্ঞ চালাবে। এরূপ কথা শুনে পাহাড়ে বসবাস করা উপজাতীয় নেতাদের ভিতর ভয়ভীতি ও আতঙ্ক কাজ করে। ভারত এই সকল বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বের একটি পক্ষের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। উপজাতিদের কথা বলার জন্য পূর্ব থেকে এ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস বা জেএসএস নামক একটি সংগঠন ছিল। এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে ৭২’ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম. এন লারমা)-এর নেতৃত্বে সশস্ত্র শান্তিবাহিনী শাখা খোলে। তথাকথিত এই শান্তিবাহিনী দাবি তোলেন পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, আসাম ও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় ভারত। এসময় বাঙালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রতিহিংসামূলক ও বিদ্বেষমূলক ঘৃণা শিক্ষা দেয়। ১৯৭৫ সালে শান্তিবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০০০ হাজার। গোলাম মোর্তোজার শান্তিবাহিনী গেরিলা জীবন বই তথ্য সূত্র। ১৯৭৫ ও ৭৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলা হামলা চালিয়ে শান্তিবাহিনী তাদের শক্তি প্রদর্শন পূর্বক আত্মপরিচয় জানান দেয়। এছাড়াও পার্বত্যাঞ্চলে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে হামলা করে শান্তিবাহিনী।

এর পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান সমতল থেকে বাঙ্গালীদের পাহাড়ে পুর্নবাসন প্রস্তুতি প্রক্রিয়া গ্রহণের চেষ্টা করে কয়েকটি দেশের সাথে পরামর্শ করে। যুক্তি পরামর্শ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি আরব। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্নবাসিত বাঙ্গালীদের খাদ্যের জন্য এবং ভবিষ্যত চিন্তা ভাবনা করে একটি অনুদান দেয় এ অনুদান কে হয়তো অনেকেই বর্তমানে সরকারি রেশন হিসেবে চিনেন বা জানেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম বাঙালী পুর্নবাসন করা হয় ১৯৭৯ সালে। বর্তমানে দেশের তথাকথিত সুশীল, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানপাপী ও বেশ্যাবৃত্তি করা মহল এবং সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন জায়গা-জায়গায় গালা বাজি আর মনগড়া গল্পকাহিনী বলে আসছে পাহাড়ে মূল সমস্যা সৃষ্টি নাকি সমতল থেকে ১৯৭৯ সালে বাঙালি নিয়ে পুনর্বাসন করার কারণে। অথচ উপরোক্ত বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সমতল থেকে বাঙালি পুনর্বাসন করার আগে থেকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নাশকতামূলক এবং দেশবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। এর সত্যতার পক্ষে আরো কিছু তথ্য যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় আরো কিছু তথ্য পাঠকমহলের জ্ঞাতার্থে যুক্ত করলাম। সমতল থেকে বাঙালি পুনর্বাসন করার পূর্ব থেকে পাহাড়ে বাঙালিদের বসবাস ছিল। এদেশের কিছু বিতর্কিত লেখক, গবেষক ও বর্ণিত তথাকথিত মহল বরাবরই উপজাতীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাবি করে আসছে, পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বাঙালির বসবাস ছিল না। কিন্তু এরা এসব বলে বলেই পাহাড়ের চাঁদাবাজির একটি অংশ লুফে নেয়। এরা বাঙালি আগমণ সহ বাঙালিকে পাহাড়ে সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী করে! অথচ ইতিহাস তা বলে না। আমরা দেশের বেশিরভাগই নাগরিক মনে করি পার্বত্য চট্টগ্রাম বলতে ‘চট্টগ্রাম’ কে বুঝানো হয়। ১৮৬০ সালের প্রক্কালে সমতল চট্টগ্রাম জেলা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে- খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত অঞ্চল। এই পাহাড় বেষ্টিত ৩টি জেলাকে নিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত। বাংলাদেশের প্রবীণ লেখক, গবেষকগণ এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশিষ্টজনের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুকাল থেকে বাঙালীদের বসবাস ছিল। রাঙ্গামাটির পূর্ব নাম (কার্পাসমহল) সহ কাপ্তাই এলাকায় বিপুল পরিমাণ বাঙালীর বসবাস ছিল। যে কাপ্তাই বর্তমানে জলরাশিতে বিস্তৃত এসব এলাকায় বাঙ্গালীদের বসবাস ছিল অহরহ। অবশ্যই তা উপজাতীয়দের তুলনায় নগণ্য। এখন একশ্রেণীর কথিত পণ্ডিতমশাই বলে আসছেন পাহাড়ে বাঙালি বসবাস ছিল না। বাঙালীরা সেটেলার, এমনকি বহিরাগত ইত্যাদি! সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বেকার বাসিন্দা নয়। তারা চীনের তিব্বত, মঙ্গোলীয়, ভারতের ত্রিপুরা ও বার্মার আরাকান রাজ্য থেকে যুদ্ধে বিতাড়িত হয়ে বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয়-প্রশ্রয় গ্রহণের জন্য এসেছিল। ১৭৩০ সাল থেকে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি এসকল উপজাতি বাংলাদেশে আগমন ঘটে ইতিহাসবিদদের মতে। পরবর্তী সময়ে উপজাতিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুমোদন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যাদেরকে আমরা ব্রিটিশ হিসেবে চিনি। হিলটেক্স রেজুলেশন নামে যে বিতর্কিত আইন করা হয়েছে যাকে আমরা ১৯০০ সালের সার্কেল আইন হিসেবে জানি। এ সকল তথাকথিত আইন ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত।

উপজাতিদের আগমনের ইতিহাস বিচার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি জনগোষ্ঠী এই অঞ্চল তথা এদেশের আদি বাসিন্দা নয় এমনকি নয় ভূমিপুত্র। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘ কিছু বিধিমালা বা সংজ্ঞা প্রণীত রয়েছে। আইএলও কনভেনশন ১৬৯ এর বিভিন্ন বিধিবিধান বা সংজ্ঞা মতে আদিবাসী বলতে বুঝানো হয় কোন একটি জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় নির্দিষ্ট স্থানে কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসিতেছে অথবা দুই থেকে আড়াই হাজার বৎসর উক্ত স্থানে বসবাসরত এইরূপ জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাস করা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ইতিহাস বিবেচনা করলে বুঝা যায় এদের বাংলাদেশে আগমন কেবলমাত্র ২৫০ থেকে ৩০০বছর। ৩০০ বছর বসবাস করে নিজেদের আদিবাসী দাবি করা যেমনি হাস্যকর তেমনি বোকামিও বটে। এসব দাবিদাওয়ার পেছনে কিছু বিদেশী দাতাসংস্থা ও ভারতীয়দের ইন্ধন রয়েছে।

এবার আসি ১৯৭৯ সালে পাহাড়ে বাঙালি আগমন সরকারের ভূমিকা ও উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে-

১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্র নায়ক মেজর জিয়াউর রহমান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায় যে, “বাংলাদেশের ভূখণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম আজকের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান দেশের সমতল ভূমি থেকে বাঙালী নেয়া হবে; বাঙালী গেলে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে; চাষাবাদ করার জন্য গরু মহিষ দেয়া হবে, এবং প্রত্যেক বাঙালি পরিবারকে ঘর বেঁধে দেওয়াসহ যথেষ্টভাবে যতদিন পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না ততদিন পর্যন্ত সরকার দায়দায়িত্ব বহন করে আসবেন। সংবাদপত্রে সরকার কর্তৃক এমন চমৎকার ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা, হাওর ও বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- নোয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, গাজিপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নরসিংদী, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, শেরপুর, পঞ্চগড়, চাঁদপুর, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকা থেকে বাঙালিরা পাহাড়ে আসার জন্য সাড়া দেয়। সাড়া দেওয়া বাঙ্গালীদের সরকার খরচে বিভিন্ন ধাপে ধাপেই পার্বত্য চট্টগ্রামে এনে সরকারি খাস ভূমিতে পুনর্বাসন করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের আয়তনের একদশমাংশ। আয়তনের তুলনায় এ অঞ্চলের জনসংখ্যা একদম অতুলনীয়। আর এই অঞ্চলের বেশিরভাগই ভূমি খাস যার মালিক আইনগত ভাবে সরকার। সমতল ভূমি থেকে আনা বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সরকার তার খাস ভূমিতে পুনর্বাসন করেছে। কোনো উপজাতি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমিতে পুনর্বাসন করেনি। বর্তমানে উপরোক্ত তথাকথিত মহল এবং উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী অভিযোগ করে আসছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীরা উপজাতিদের ভূমি বা জায়গা-জমিতে বসবাস স্থাপন করে পাহাড়ে শান্তি বিনষ্ট করছে। এই অভিযোগটি একদম মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদীত, মনগড়া এবং খামখেয়ালীপনা বটে। সরকার পার্বত্যাঞ্চলে যেসকল বাঙালিদের পুনর্বাসন করেছে সেসকল বাঙালিদের সরকার কবিলত বন্দোবস্ত দিয়েছে। সকল বাঙালীর ভূমির মালিকানার প্রধান শর্ত, খাজনার দাখিলা ও বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। অপরদিকে এ অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতিদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। উপজাতিরা কোন প্রমাণপত্র ছাড়াই বসবাস করে আসছে! এবং উপজাতিদের দখলে থাকা কোন ভূমি সরকার বাঙালি জনগণকে দেয়নি। বর্তমানে যে অভিযোগগুলো ওঠে আসছে পাহাড়ে বাঙালিরা উপজাতিদের ভূমি দখল করছে ও উপজাতি নারী ধর্ষণ করছে এবং পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করছে তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এই অভিযোগের কোন বাস্তবিক প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র বাঙালীকে এই অঞ্চল থেকে সরাতে তারা একের পর এক মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।

বাঙালী পুনর্বাসিত হওয়ার পরে ভারতের ইন্ধনে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা বাঙালীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাঙালি মা-বোনদের গণধর্ষণ করেছে, কোলের ছোট বাচ্চা শিশুদের হত্যা করেছে, আবাল বৃদ্ধা-বনিতা কেউ বাদ যায়নি এই নিষ্ঠুর নির্মম নির্যাতন থেকে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অদ্যবধি পর্যন্ত ১৮ বছর ৩৫ হাজারের অধিক নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীকে শান্তিবাহিনীর নামক সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তবে এই সময়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী ও সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করে। সেনাবাহিনী কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব হয়নি এই যুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত শতকের মত সদস্যের প্রাণহানি হয়েছে অপরদিকে শান্তিবাহিনীর ক্ষতি হয়েছে সামান্য। এখানে একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো শান্তিবাহিনীর জন্ম পাহাড়ের মাটিতে তাই তারা পাহাড়ের প্রতিটি আনাচে-কানাচে অভয়ে চিনেন। অন্যদিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনী পাহাড়ের পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অচেনা ও কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। সে দিক দিয়ে প্রশাসনকে বেগ পেতে হয়েছে আর নিরস্ত্র বাঙালী হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বেপরোয়া ভাবে। সরকার বাঙালিদের পাহাড়ে আনার ক্ষেত্রে যেসকল সুযোগ-সুবিধা দিবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে সেসকল সুযোগ সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শান্তিবাহিনীর আক্রমণে যেমন সরকার ব্যর্থ হয়েছে তেমনি বাঙালী হয়েছে বিধ্বস্ত। একদিকে শান্তিবাহিনীর আক্রমণ অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার আক্রমণ যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বাঙালি জনপদ বিধ্বস্ত ছিল দীর্ঘ ১৮ বছর। এ দীর্ঘ ১৮ বছর এর ভয়াবহতা আমার এই সামন্য জ্ঞানের লেখায় কোনভাবেই তুলে ধরা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে ৭১ সালে হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল সে একাত্তরের ফের অবতীর্ণ হয়েছে ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৭সাল অধ্যবধি। শান্তিবাহিনী নামক এ সন্ত্রাসী বাহিনী খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলার আনাচে-কানাচে এমন কোন জায়গা স্থান ছিলনা যে, তারা গণহত্যা, নির্যাতন-নিপিড়ন ও অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করেনি। এরা এতটাই বেপরোয়া ছিল এদের নির্যাতনের কয়েক হাজার বাঙালী ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল এর দিকে পাহাড় ছেড়ে পালিয়েছিল সমতলে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত কয়েকটি গণহত্যা রয়েছে। এ কয়েকটি গণহত্যা শান্তিবাহিনী ঘটিয়েছে। দিনে দুপুরে বা রাতের আঁধারে হঠাৎ এসে বাঙালী জনপদের ঘর-বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। গুলি করে বাঙালীদের হত্যা করেছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের কে গাছের সাথে বেধে নির্যাতন করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। আবাল বৃদ্ধা-বনিতা কাউকে ছাড় দেয়নি এই শান্তিবাহিনীর হায়নারা। হয়তো তৎকালীন বাংলাদেশের মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বের কারণে পাহাড়ের হত্যাযজ্ঞ কাহিনী বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হয়নি বা স্থান পায়নি ইতিহাসের পাতায়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- দেশের অনেক মানুষ জানে না পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী গণহত্যার ইতিহাস। তা আজো রয়ে গেছে সবার দৃষ্টির অগোচরে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী গণহত্যার কয়েকটি স্থানের নাম- পাকুয়াখালী গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যা, কলমপতি গণহত্যা, লৌহাং গণহত্যা, গোলক প্রতিমাছড়া গণহত্যা ইত্যাদি। মিডিয়ার নীরবতাসহ দেশের সুশীল সমাজ এই হত্যাযজ্ঞ এড়িয়ে গিয়েছেন। বাঙালির রক্তে লাল হয়েছে খাগড়াছড়ি চেঙ্গী, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, বান্দরবানের সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ইছামতিসহ অসংখ্য পাহাড়ি ঝিরি। পাহাড়ের নির্মম হত্যাযজ্ঞ বর্ণনা দেওয়া আমার SR মত নগন্য অভাগার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব নয়।

পাহাড়ে সেনাবাহিনীর জীবন যুদ্ধ-

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এমন একটি সময় সম্পাদিত হয় যে সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের জয়ের নিশান উঠাবেন। ১৯৯৭ সন তৎকালীন শান্তিবাহিনী অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে সেনাবাহিনীর অফিসার ও সদস্যরা অনেক কেঁদে ছিলেন সেনাবাহিনীর চোখের জল হৃদয় ভাঙ্গা আর্থনাত আজও সাক্ষী পাহাড়ের আকাশ বাতাস ও অসংখ্য বাঙালি। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকে অনেকে বসবাস করেন কিন্তু তারা ভুলে গেছেন সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগের কথা, বীরত্বের কথা এবং লড়াকু পার্বত্য বাঙ্গালীদের রক্তের কথা। এমনও সময় অতিবাহিত হয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর অনেক সদস্য জীবন বাঁচানোর তাগিদে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। পাহাড়ের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার দায়িত্ব কোন বাহিনী গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী ছাড়া। সেনাবাহিনী যখন ক্যাম্প থেকে টহল দিতে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতো তখন তারা চোখে অশ্রু ছাড়তেন আবার পুনরায় ক্যাম্পে ফেরত আসবে কীনা? পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বাঙালীদের সরকার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) তে নিয়োগ দেয়। এই ভিডিপি’র অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে পাহাড়ের জন্য। স্থানীয় হওয়ার ফলে তাদের ভৌগোলিক অবস্থান ভালো জানা ছিল তাই ভিডিপিতে সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা নিজের জীবন বাজি রেখে সেনাবাহিনীকে নিয়ে পাহাড়ে বাঙালী মা-বোনের জন্য নিরাপত্তা দিয়েছেন। পাহাড়ে সেনাবাহিনী ৪ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় অখণ্ড রক্ষার স্বার্থেআত্মত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। পাহাড় থেকে সন্ত্রাস মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী যে অবদান রেখেছে তার কোন বিনিময় হয়না। পাহাড়ে উন্নত চলাফেরার রাস্তা-ঘাট কিন্তু সেনাবাহিনীই করেছে। দুর্গম এলাকায় পাহাড়ীদের পানি সরবরাহ, প্রসূতি পাহাড়ী মায়েদের চিকিৎসা কিন্তু সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার করে দিচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পাহাড়ী বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী এবং কনকনে শীতের মাঝে শীতবস্ত্র সেনাবাহিনী একমাত্র পৌছে দেয়। তারপরও স্বজাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করা উপজাতি আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলো সেনাবাহিনীর দিকে আআঙ্গুল তোলার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীকে সরাতে নানান মিথ্যা ও বানোয়াট কল্পকাহিনি রচিত করে দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী পুনর্বাসিত করার পরে ১৯৮১ সালে অথাৎ তার ২ বছরের মাথায় মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালির ভবিষ্যত অন্ধকারে ধাবিত হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট এরশাদ পার্বত্য চট্টগ্রামের পুনর্বাসিত বাঙ্গালীদের হাল ধরেন মেরুদণ্ডহীন করার মতই। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার দেশদ্রোহী শান্তিবাহিনীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার একাধিকবার চেষ্টা করেন। জানা যায় সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও শান্তিবাহিনীর আন্তরিকতা ছিল না। তবে শান্তিবাহিনী ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে একাদিক বৈঠক হয় এসকল বৈঠকের তেমন একটা ফল হয়নি তবে এর মধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হয় সাফল্য এতটুকু। অধিকিন্তু এই জেলা পরিষদ আজ বৈষম্য, অনিয়ম ও সাম্প্রদায়িকতায় জ্বালা পরিষদের পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরশাদের গুচ্ছগ্রাম সৃষ্টি আজকের পার্বত্য বাঙ্গালীদের ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এরশাদ বাঙ্গালীদের রেকর্ডীয় ভূমির বসতভিটা থেকে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে গুচ্ছগ্রামের বন্দিশালায় এনে আটকে রাখেন। এখনো বাঙ্গালীরা গুচ্ছগ্রামে বন্দিশালায় আছেন মানবেতর জীবনযাপনে। তাদের ভূমি গুলো দখলে আছে উপজাতিরা!

১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। আওয়ামীলীগ সরকার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস বা জেএসএস) প্রকাশ তথাকথিত শান্তিবাহিনীর মধ্যকার তড়িঘড়ি আলোচনা পূর্বক আন্তর্জাতিক মহলের সম্পৃক্ততায় উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে এবং তথাকথিত শান্তিবাহিনীকে ৭২টি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ সংবিধান বিরোধী একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যাহা ২-রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামে পরিচিত। যে চুক্তির বেশিরভাগ ধারাই বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। চুক্তিতে সংবিধানিককে পাশ কাটানো হয়েছে। যদিও চুক্তির এই অসাংবিধানিক ধারাগুলোর খারাপ দিকগুলোর ভবিষ্যত সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল করা হয়নি অদৃশ্য কারণে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ বছরের সংঘাত, সহিংসতা ও জাতিগত ভেদাভেদ অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা সরকার।

১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সংসদের চীফ হুইফ হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি’র উপস্থিতিতে জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরুফে সন্তু অস্ত্র আত্মসমপর্ণ করেন। চুক্তিতে প্রধান মৌলিক শর্ত মোতাবেক শান্তিবাহিনীর সদস্যরা সন্তু লারমার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট অবৈধ অস্ত্র আত্মসমপর্ণ করেন। চুক্তির পূর্বের হিসাব অথাৎ ১৯৮৩ সাল থেকে আআত্মসমর্পণ করাসহ প্রায় ১৯০০ জন আত্মসমপর্ণ করেন। যদিও সকলের ধারণা শান্তিবাহিনীর বেশিরভাগই সদস্য অস্ত্র জমা দেয়নি। তারা কিছু সংখ্যক ভাঙা- মরিচে ধরা অস্ত্র জমা দিয়েই চুক্তি সাক্ষর করেছে। অথচ ১৯৭৫ সালের গোলাম মোর্তোজার শান্তিবাহিনীর গেরিলা জীবন বইয়ে শান্তিবাহিনীর সদস্য সংখ্যা- ৫০০০ বলা হয়েছে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান উল্টিয়ে কীভাবে ১৯০০ জন হয় তা আমার বোধগম্য নয়। ১৯০০ জনের মধ্যে সরকার ৭২৪ জন শান্তিবাহিনী সদস্যকে বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি দেন।

কথিত আছে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিবাহিনী প্রধান সভাপতি সন্তু লারমার সাথে চুক্তি সম্পাদিত করার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা রাষ্ট্রের স্বপক্ষের শক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনপদের সঙ্গে কোনপ্রকার আলাপ- আলোচনা করেনি। একপ্রকার তড়িঘড়ি করে এই চুক্তি করা হয়েছে। যা সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এই নিয়ে তৎকালীন বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীলীগকে কোনঠাসা করার জন্য রাজপথে পার্বত্য বাঙ্গালীদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কে কালো চুক্তি আখ্যায়িত করে লংমার্চ করে রাজধানী ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি অভিমুখে রওনা দেয়। এতে যোগ দেয় সমতল ভূমির মানুষের পাশাপাশি পাহাড়ের বাঙালিরাও। শুরু হয় রক্তপাত। চুক্তির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করার কারণে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ৪ থেকে ৫ জন বাঙালি নিহত হয় পুলিশের গুলিতে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় পাহাড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি ভিত্তিক একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন গঠিত হয়। যদিও এটি ছিল বিএনপি’র ইন্ধন আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা বলা যায়। অপরদিকে বিএনপি বাঙালীদেরকে বলেছে, “এই চুক্তি কালো চুক্তি, এই চুক্তি সংবিধানবিরোধী, দেশবিরোধী চুক্তি, রাষ্ট্র বিক্রির চুক্তি। আমরা ক্ষমতায় গেলে ঠিকই এই কালো চুক্তি বাতিল করব।” বিএনপি সেসময়ে বলেছিল পার্বত্য চুক্তির ফলে বাংলাদেশ পাহাড় স্বর্গভূমি হারাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা হবে নিজ দেশে পরবাসী। আমরা এই কালো চুক্তি মানি না মানবো না, ক্ষমতায় গেলে এই চুক্তি আমরা বাতিল করব। এটা ছিল বিএনপি’র রাজনীতির ডাবল স্ট্যান্ডবাজি।

অন্যদিকে জেএসএস সন্তু গ্রুপের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা চুক্তির বিরোধীতা করেন। এই প্রসিত বিকাশ খীসাকে ইন্ধন দিয়ে এবং সার্বিক সহযোগিতা করে বাঙালি মারার জন্য পাহাড়ে আরো একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ইউপিডিএফ নামক সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তৈরী করেছে। স্বায়ত্তশাসন দাবিতে ১৯৯৮ সনের ২৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাদের দাবিগুলোও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সংবিধান বিরোধী। ইউপিডিএফ একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। যারা প্রবল বাঙ্গালী ও সেনা বিরোধী। বামধারার কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাষ্ট্র ভাগের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করছে স্বায়ত্তশাসনের দাবি রেখেই। ২০০১ সালে রাঙামাটি নানিয়ারচর থেকেই তিন বিদেশী নাগরিককে অপহরণ করে ইউপিডিএফ ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করার মাধ্যমেই অস্ত্রভান্ডার এবং নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতা ও রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন গোপন সূত্রের তথ্য মতে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের ৭/৮ হাজার ভারী অস্ত্রধারী সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। যারা প্রতিনিয়ত বাঙ্গালী ও উপজাতি সম্প্রদায় হইতে চাঁদাবাজি করে। চাঁদার টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে অপহরণ পূর্বক খুন-গুম করে।

২০০১ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। বিরোধী দলে থাকাকালীন বিএনপি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করেছিল এবং ক্ষমতায় গেলে চুক্তি বাতিল করবে বলেও অঙ্গীকার করেছিল কিন্তু ক্ষমতায় এসেই সে বিএনপি “পার্বত্য চট্টগ্রাম কালো চুক্তির” বেশিরভাগ অসাংবিধানিক ধারা বাস্তবায়িত করেছে। পার্বত্য চুক্তিকে কালো চুক্তি ও দেশবিক্রির চুক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিএনপি ১৯৯৭ সনের ২-রা ডিসেম্বর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি অভিমূখে লংমার্চ করে। খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় সে লংমার্চে যোগদানকৃত ৫ জন নিরস্ত্র বাঙালীকে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সেদিন বিএনপি ক্ষমতার মোহে যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পার্বত্য চুক্তিকে দেশবিক্রির কালো চুক্তি বলে লাখ লাখ পার্বত্য বাঙালির বুকে আশা জাগিয়ে ছিল। সেদিন বিএনপির ডাকে সারাদেশের মানুষের পাশাপাশি পাহাড়ের বাঙালিরা লংমার্চে মাঠে নেমেছিল। সে বিএনপির পরবর্তী চরিত্র ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অরক্ষিত করে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সকল ছাউনি বা সেনা সদস্যদের সমতল ভূমিতে প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। পাহাড়ের কয়েক লক্ষাধিক বাঙ্গালী নিরাপত্তার ঝুঁকি সংশয় তৈরি হয়। সেনাবাহিনী ও তাদের ছাউনি প্রত্যাহার সময়ে বান্দরবান থানচি, রুমা, নাইক্ষংছড়ি ও লামায় সেনাবাহিনীকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় বাঙালিরা কান্নাকাটি করেছিল ছাউনি প্রত্যাহার না করার দাবিতে। তিন থেকে চার দিন সেনাবাহিনীকে বান্দরবানবাসী অবরুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু বিএনপি’র খালেদা জিয়া সরকারের প্রবল চাপে সেনাবাহিনী সরকারি আদেশ মানতে গিয়ে রাষ্ট্রের স্বপক্ষের শক্তি বাঙালিদের উপর কঠোর হয়ে ক্যাম্প ঘেরাও থেকে সরে আসতে বলে। বাঙালিরা সরে গেলে সেনাবাহিনী চলে যায়। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৮ লক্ষ বাঙালি। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ঘাটতি তৈরি হয়। সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ফলে পাহাড়ে শুরু হয় বাঙ্গালীর ওপর নির্মম নির্যাতন এবং উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আধুনিক বিশ্বের ভয়ংকর অস্ত্র প্রদর্শনী। বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। পার্বত্য বাঙ্গালীদের কান্না, প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত হয়ে দিগদিগন্তে দিশেহারার মতই ছুটেছিল বাঙালি জনতা। পাহাড় উপত্যকায় বসবাসরত বাঙ্গালীদের জনজীবন বিপন্ন হয়। প্রাণ পৌঁছেছে শেষ নিঃশ্বাসে। পাহাড়ের প্রত্যেকটি স্থানে শুধু বারুদের গন্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, গুলির শব্দ, রক্তে লাল হয়ে যায় কাপ্তাই লেক, খাগড়াছড়ি চেঙ্গী নদী ও বান্দরবানের সাঙ্গু নদী। পাহাড়ের বাঙ্গালীদের কান্না পৌছায়নি বিএনপি সরকার ও প্রশাসন সহ বিরোধী দল আওয়ামীলীগের কানে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সরকার ও প্রশাসন পার্বত্য বাঙালির সাথে কানামাছি খেলেছে।

আওয়ামীলীগ সরকার যেমন চুক্তির পূর্বে পার্বত্য বাঙ্গালীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা বা লাভ ক্ষতি বিবেচনা করেনি ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে তথাকথিত শান্তিবাহিনী প্রধান সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণের সাথে আলাপ-আলোচনা ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্তি পরামর্শ করেনি৷ এতে বাজে বিপত্তি। পাহাড়ে তৈরি হয় একাধিক সশস্ত্র দল-উপদল। তারা সবাই চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুমে সরাসরি জড়িত। বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানে গর্জে ওঠা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএন- নাথান বম)-এর বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরাও একই কায়দায় বাঙ্গালী দমনপীড়ন শুরু করে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে আলাদা কুকি রাজ্যের জন্য। রাজ্যের অন্তরালে আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন ছিল মূল উদ্দেশ্য। তারজন্য প্রতিবেশী দেশগুলো হইতে গ্রহণ করেছে গেরিলা প্রশিক্ষণ। জেএসএস সংস্কার এম.এন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বর্মা, মগ লিবারেশন পাটি (এমএলপি) সন্ত্রাসী গ্রপও একই। মোট ৬টি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পাহাড় পাহাড়ে চাঁদাবাজি করে বছরে ১০০০ কোটি টাকা উপরে। এসব টাকা দিয়ে তারা অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করে রাষ্ট্র ও বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন স্বপ্নের জুম্মল্যাণ্ড রাষ্ট্র গঠনের দিকে হাঁটছে। আর আমাদের রাষ্ট্র, প্রশাসন নতজানু নীতি অবলম্বন করার পাশাপাশি একদম এসব বিষয়ে বেখেয়ালি আচরণ করছে। যা দুঃখজনক এবং পরিতাপের বিষয়।

সাংবিধানিক গঠনমূলক সমালোচনার পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবদান অতুলনীয় বলতেই হয়। পার্বত্য চুক্তির সুফল অবশ্যই আছে। চুক্তির ফলে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধিত হয়েছে- রাস্তা-ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার হয়েছে, হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজের মাধ্যমে এখানকার মানুষ শিক্ষিত হয়েছে এবং উন্নত জীবনের ছোঁয়া পেয়েছে। সেটা হোক না উপজাতি সম্প্রদায় তাতে কী? পিছিয়ে পড়া একটি জাতি অগ্রসর হয়েছে এজন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধুবাদ প্রাপ্য। এখানে শেষ নয় পার্বত্য চুক্তির সুফল হিসেবে আরো বলা যায়, পাহাড়ে রক্তারক্তি সংঘর্ষ কমেছে, পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভেদাভেদ বা দূরত্ব কিছুটা হলেও কমেছে। শান্তির সুবাতাসও আস্তে আস্তেই বইছে। আগে পাহাড়ের মানুষ নিরাপত্তার অভাবে পাহাড়ে আসার সুযোগ ছিল না কিন্তু এখন চুক্তির ফলে সমতলের মানুষ পাহাড়ে আসার পথ খুলেছে। শান্তি-সম্প্রীতি উন্নয়ন চাইলে অবশ্যই অরক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই এটা আমাদের মানতেই হবে। এজন্যেই সেনাবাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি কমবে।

সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সহযোগী অঙ্গসংগঠন তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি’র) তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা সন্তু লারমা ও সরকারের মধ্যে হওয়া চুক্তি কোনভাবেই মেনে নেয়নি। চুক্তির প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিক ১৯৯৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফন্ট (ইউপিডিএফ) নামে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী একটি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করে। উক্ত সংগঠন বেশ কয়েকটি দাবি দাওয়া নিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। ইউপিডিএফ সংগঠন স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করলেও বাস্তব পক্ষে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের চালিয়েছে বাঙালি দমন-পীড়ন খুন অপহরণ চাঁদাবাজি হত্যাযজ্ঞ ও অস্ত্র সংগ্রহের হিড়িকে। অপরদিকে সরকারের সাথে চুক্তি পক্ষের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথাকথিত শান্তিবাহিনী চুক্তি স্বাক্ষর করে শান্তির পথে ফিরে আসেনি সেই পুরনো রূপে পাহাড়ে অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় চাঁদাবাজি, অপহরণ ও নির্যাতন চালিয়েছে। ২ টি সংগঠন আলাদা আলাদা হলেও কিন্ত তাদের নীতি আদর্শ সবকিছুই একই। এদের মূলত উদ্দেশ্য বাঙালি দমন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা।

পার্বত্য চুক্তির লাভ-ক্ষতি নিয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি-

সরকার ও জেএসএস সন্তু লারমা মধ্যকার চুক্তির ৭২টি মূল ধারা ও উপধারা সর্বমোট ৯৯টি ধারা মোতাবেক লিখিত চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ধারাগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রের নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন হয় এ ধরনের বেশ কয়েকটি ধারা রয়েছে৷ যার কিছু ধারা-উপধারা নিয়ে আলোচনা করব।সরকার জনসংহতি সমিতি থেকে কী চেয়েছে এবং কী কী দিয়েছে, এসকল বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত-

সরকারের পক্ষ থেকে জেএসএস এর উপর শুধুমাত্র একটিমাত্র মৌলিক শর্ত ছিল, তা হলো-

১. সরকারের নিকট জেএসএস সম্পূর্ণ অস্ত্র জমা দিতে হবে।

২. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে সেনাবাহিনীর ৪টি বিগ্রেড কাজ করবে এবং ৪টি বিগ্রেড পাহাড়ে থাকবে।

৩.পার্বত্য চট্টগ্রাম জেএসএস সদস্যরা সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে।

এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধরনের সংঘাত বন্ধ করতে হবে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখিবে।

৪. পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে যা কিছু থাকুক না কেন সরকারের দেওয়া প্রদত্ত সুযোগ সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের দপ্তরসমূহ সরকারের অধীনে চলবে। সরকার চাইলে যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবেন বা বাতিল করিতে পারবেন।

উক্ত ৪-টি শর্ত ছিল সরকারের।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ( জেএসএস), উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার বা সুবিধা আদায়ের কিছু অংশ-

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে প্রথম দাবি হচ্ছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন হবে উক্ত পরিষদের চেয়ারম্যান হবে একজন উপজাতি এবং পরিষদের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি হতে হবে। বাঙালি কয়েকজন আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হতে পারবেন তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারবেন না। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান কে একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিতে হবে।

শান্তিবাহিনীর সব সদস্যকে সরকারি চাকরিসহ স্বাভাবিক জীবনে নিমিত্তে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে রেশন দিতে হবে। এবং শান্তিবাহিনীর সদস্যের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।

শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং কোন প্রকার মামলাতে শান্তিবাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার এবং বিচারের সম্মুখীন করা যাবে না।

পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীর সকল নিরাপত্তা ক্যাম্প তুলে নিতে হবে এবং সব ধরনের অপারেশন উত্তোলন করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য সংমিশ্রিত বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

পার্বত্য তিন জেলার তিনটি জেলা পরিষদে তিনজন চেয়ারম্যান হতে হবে উপজাতি এবং জেলা পরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্য হতে হবে উপজাতি, বাঙ্গালীরা জেলা পরিষদে সদস্য হতে পারবে কিন্তু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে পারবে না।

পুলিশ বাহিনীর নিয়োগ জেলা পরিষদ কে দিতে হবে এবং পুলিশ বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর আওতাধীন থাকবে না পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলো পুলিশ নিয়োগ দিবে এবং পুলিশ দেখাশুনা করবে।

পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

চাকরির ক্ষেত্রে উপজাতিদের কোটা দিতে হবে, পড়াশোনা ও সব ধরনের নিয়োগের জন্য ৫% কোটা বরাদ্দ দিতে হবে, বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

উপজাতিদের নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠ বই চালু করতে হবে। উপজাতিদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে এবং উপজাতিদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তিন জেলায় তিনটি কালচার একাডেমী করতে হবে।

এবং পার্বত্য অঞ্চলে একটি মন্ত্রণালয় হবে যে মন্ত্রণালয়ের নাম হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে উপজাতীয়রা অগ্রাধিকার পাবে।

এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনবিধি হিলটেক্স ১৯০০ চলবে।

পার্বত্য চটগ্রাম বাসিন্দা শনাক্ত নাগরিকত্ব প্রমাণ ক্ষেত্রে উপজাতি হেডম্যান থেকে রিপোর্ট নিয়ে চাকমা সার্কেল চীফ থেকে সনদপত্র নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা প্রমাণ করতে হবে।

তিন পার্বত্য জেলায় ৩টি সার্কেল থাকবে। সার্কেল চীফ বিশেষ ক্ষমতা থাকবে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সরকারকে সার্কেল চীফ ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

জেলা প্রশাসক ডিসি কে কোন কিছু করতে হলে সার্কেল চীফ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

চুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভারতে শরণার্থী হয়ে যাওয়া সেসকল উপজাতিদের ফেরত আনতে হবে এবং তাদের বাসস্থান নিশ্চিত করার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠিত হবে সে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হবে একজন উপজাতি যাকে মন্ত্রী পদ মর্যাদা দিতে হবে।

চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিবীক্ষণ কমিটি হবে সে কমিটিতে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান কে রাখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করতে হবে কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে উপজাতি, থাকবেন সার্কেল তিন চীপ।

সমতল থেকে কোন প্রকার বাঙালি এসে পার্বত্য চট্টগ্রামের জায়গা ক্রয় করতে পারবে না স্থানীয় বাসিন্দা সনদ ছাড়া।

 এবং উপজাতিদের জন্য ব্যাংকের সুদের হার কমাতে হবে এবং সর্বনিম্ন সুদের হার ২% নিতে হবে।

উপজাতি চাকরিজীবীদের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান স্থানীয়ভাবে রাখতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা।

পার্বত্য জমি কেনা-বেচা জেলা পরিষদ থেকে অনুমতি নেওয়া।

বেতবুনিয়া উপগ্রহ, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প ও কাপ্তাই রিজার্ভ ফরেস্ট ছাড়া সরকারি আর সম্পত্তি না থাকা।

উপরোক্ত শুধুমাত্র একটি মৌলিক শর্ত, অবৈধ অস্ত্র পরিহার। এই শর্ত দিয়ে সরকার জেএসএস সন্তুকে ৯৯টি ধারা-উপধারায় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। এই ধারাগুলোর অধিকাংশ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুই ধরনের নীতি হতে পারে না। তারপরও দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার তাগিদে আমাদের মাননীয় শেখ হাসিনা সরকার উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় উপজাতিদের অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে৷ কিন্তু উপজাতি সন্ত্রাসীরা এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পূ্র্বের অবস্থায় বিদ্যমান। এরা সরকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। যা দেশদ্রোহীতার সামিল।

জেএসএস ও উপজাতি জনগোষ্ঠীকে অসাংবিধানিকভাবে প্রাধান্য দেওয়া পার্বত্যচুক্তির শর্তগুলো গভীরে বিবেচনা করলে পরিষ্কার বুঝা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লাভ হলেও পক্ষান্তরে বাঙালি হয়েছে ভীষণ ক্ষতির শিকার। শিক্ষা, চাকরি-বাকরিসহ সামাজিক বিভিন্ন দিক দিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ে। সরকার তার রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

চুক্তির বৈষম্যের পাশাপাশি এই অঞ্চলে বাঙালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আরো কিছু

অন্যতম কারণ- বাঙালীদের মধ্যেে চরম বিভক্তি লক্ষণীয় এবং বাঙালি একটি পক্ষ মীরজাফরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। পার্বত্য অঞ্চলে দুই ধরনের বাঙালি দেখা যায় এক ধরনের বাঙালি হচ্ছে সহজ সরল দেশ প্রেমিক, আরেক ধরনের বাঙালি হচ্ছে নবাব সিরাজদুল্লাহ যোগের মীরজাফরের ভূমিকা উত্তীর্ণ হওয়া তাদের বংশধররা। উপজাতিরা যেভাবে সংঘবদ্ধ জাতিরস্বার্থে সেভাবেই কিন্তু বাঙালীরা না। উপজাতি রাজনৈতিক নেতারা জাতির অধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু বাঙালি রাজনৈতিক নেতারা জাতির অধিকার নিয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করে! এখানে বাঙালীরা অনেকটা পিছিয়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক বাঙ্গালী আরেক বাঙালির পেছনে লেগে থাকে আটার মত! বাঙালি নেতৃত্বে সৃষ্টি হতে এসব বড় বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখে। সরকার সমতল থেকে যেসকল বাঙালিকে পাহাড়ে নিয়ে এসেই পুনর্বাসন করেছে এবং চুক্তির পরে যেসকল বাঙালি সমতল থেকে সেচ্ছায় এসেছে তারা যে সবাই ভালো তা কিন্তু নয়। এরমধ্যে রয়েছে সমতলে হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানো, স্বার্থপর, বিশ্বাসঘাতক, মানবতাবিরোধী, দেশপ্রেমহীন, নির্লজ্জ বেহায়া, গন্ডারের চামড়া যুক্ত, জাতির শ্রেষ্ট বেইমান ও মীরজাফর বংশধর কিছু বাঙ্গালী। পার্বত্য পার্বত্য চট্টগ্রামে অপতৎপরতা, হিংসা, প্রতি হিংসা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা ও জাতিগত ভেদাভেদ এরাই তৈরি করছে। এরই জন্য সব বাঙ্গালী দায়ী নয়। খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি বান্দরবান ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বসহ কোন সংকট সংঘটিত হলে এরাই উস্কানি দিয়ে জাতিগত রূপ দেয়। শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করে এই রকম বাস্তবিক প্রমাণ রয়েছে। বাঙ্গালীদের একটি অংশ মীরজাফর। এরা উপজাতি সন্ত্রাসীদের পক্ষে কাজ করে সামান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য। সুযোগ-সুবিধাগুলো হলো ব্যবসায়ীক সুবিধা নেয়া, চামচামি করে ছেলে-মেয়েদের চাকরি নেওয়া, রাজনৈতিক একটা পদপদবী নেয়া, দাদার পা চেটে কিছু স্বার্থ হাসিল করা। এরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিভাজন সৃষ্টির অংশ- খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে। এ শ্রেণীর বাঙালি মীরজাফরদের সাথে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রয়েছে গলায় গলায় ভাব। নিরিহ বাঙালি খুন এবং অপহরণের পিছনে এরাই জড়িত। শান্তি চুক্তির পরবর্তী ও বর্তমান সময়ে এরা পাহাড়ের সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। এই অঞ্চলে নির্বাচিত বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি উপজাতি সম্প্রদায়ের। হাতেগোনা বাঙালি জনপ্রতিনিধি রয়েছে এর মধ্যে মীরজাফর দালাল সম্প্রদায়ভুক্ত আছে কিছু। এ অঞ্চলের বাঙালি ভিত্তিক সংগঠন গুলোর মূল বাধা এই মীরজাফর দালাল শ্রেণীর বাঙালিরা। পাহাড়ে যখন বাঙালি লাশ পড়ে, বাঙালি নারী ধর্ষিত হয়, নির্মম নির্যাতিত হয়, তখন কিন্তু এই দালাল শ্রেণী নীরব থাকে। অপরদিকে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো যখন উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর অপরাধগুলো যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে তুলে ধরে ঠিক তখনই এই বাঙালি দালালগুলো বাধা দিতে আসে! আমি জানি আমার এই লেখাগুলো বেশিরভাগ পার্বত্য বাঙ্গালীদের কাছে তেতো লাগবে। আঞ্চলিক একটি প্রবাদ আছে গরম দিলে বিলাই বেজার অয়।

যতদিন পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে স্থায়ী পার্বত্য নীতি প্রণয়ন করবে না, তার পাশাপাশি দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবে না ঠিক ততদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান হবে না।

চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার এবং জেএসএস সন্তু গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কোনদিনও পরিসমাপ্তি হবে না এবং চুক্তির শেষ ভাগে কিছু ধারা বাস্তবায়িত হবে না আর জেএসএসসহ অন্যান্য দল-উপদল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুমও ছাড়বে না। কিন্তু এর ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। সন্তু লারমার জেএসএস সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যতই মিথ্যাচারে আশ্রয় গ্রহণ করুক না কেন এটাই সত্য সরকার চুক্তির ৯০% বাস্তবায়ন করেছে। সরকার চাচ্ছে চুক্তির অবশিষ্ট হাবিজাবি কয়েকটি ধারা বাস্তবায়িত কোনমতেই না হোক। যাতে ভবিষ্যৎ এই ইস্যুকে পুঁজি করে রাজনৈতিকভাবে মাঠ সরগম করা যায় আর তাছাড়া এ ধারাগুলো কখনো বাস্তবায়িত করা সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ধারা গুলো বাস্তবায়িত করতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগই বাঙালি জনগোষ্ঠী বাস্তহারা হবে এবং নিঃসন্দেহে সরকার এই অঞ্চল থেকে অস্তিত্ব হারাবে। এই বিষয়গুলো দুই পক্ষ জানেন। অপরদিকে জেএসএস সন্তু গ্রুপও চাচ্ছে চুক্তির হাবিজাবি ধারাগুলো যেনো কোনভাবেই পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত না হয়। পার্বত্য চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হয়ে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অস্ত্র হাতে নেওয়ার আর কোন সুযোগ থাকবে না এবং খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান সহিংসতা, অস্ত্রবাজি, অপহরণ, আধিপত্য ও চাঁদাবাজি করার আর কোনো অজুহাত থাকবে না।

শেষ কথার এক কথা পাহাড়ে বাঙালিই বাঙালির শত্রু। যতটা না উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালির বাধা।

দ্বারামোঃ সোহেল রিগ্যান
সূত্রমোঃ সোহেল রিগ্যান
আগের পোস্টখাগড়াছড়িতে পিসিএনপি’র ইফতার মাহফিল।
পরের পোস্টধোনির মতো অধিনায়ক আর আসবে না-কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন