আমরা সমতলের অধিকাংশ মানুষ থেকে শুনতে পায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন পরিকল্পনা নাকি একটা বড্ড গুজব এবং খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণ অভিযোগ নাকি অসত্য; চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড, খুন-গুম নাকি শুধু অধিকার বিষয়ে হচ্ছে; কুকি চিন জনগোষ্ঠীভুক্ত কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের অস্ত্র তুলে নেওয়া বিষয়টি নাকি বেছে থাকার তাগিদে! বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী যা প্রচার করে তা নাকি অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! এটা নাকী পাহাড়ে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল এবং পাহাড়ীদের ভূমি দখলের পায়তারা! আসলে কী তাই? বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মান্তকরণ বাস্তবতা কিন্তু অন্যান্য ধর্মের চেয়ে অধিক বেশি। আর জনসংখ্যায় খ্রিস্টান একদম নগণ্য বলে যে তথ্য উপাত্ত ছড়ানো হচ্ছে তা অসত্য এবং বাস্তবসম্মত নয়।
বছর দুয়েক আগের ধর্মীও উপাসনালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী খ্রিস্টান ধর্মীয় গির্জা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭১৪ টি৷ বর্তমানে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিতকরণ এর পরিসংখ্যান কিন্তু অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশি। অফিসিয়াল ডকুমেন্টস অনুযায়ী ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৩৪৪ জন খ্রিস্টান হয়েছে। যা ইসলাম , বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের চেয়ে বেশি। আনঅফিসিয়ালি এর পরিসংখ্যান আরো বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ও চিন্তার তথ্য হলো- উপজাতি বৌদ্ধদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস ৬৫% উইকিপিডিয়াতে তথ্য দেখানো হলেও তাদের শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে এলার্জি আছে। জাতিগতভাবে চাকমা, মারমা, তংচংগা এবং ধর্মীয়ভাবে তারা বৌদ্ধ হলেও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণে তাদের কারোরই দ্বিধা নেই৷ ২০১১ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সংখ্যা ছিল- ৫২,০৬৬ জন। ২০২২ সালে জনশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী তা আরো ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রলোভনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্মান্তরের সংখ্যা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান জনসংখ্যার ঢেকুর তুলে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠন করবে। এজন্য হাতিয়ার হিসেবে তথাকথিত আদিবাসী শব্দকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেলেই ব্যবহার করবে বলে প্রতিয়মান হয়।
বর্তমানে বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল (কেএনএফ) কর্তৃক চলতি বছরে ৪জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছে আহত হয়েছে অনেক এবং সাধারণ বাঙ্গালী ও উপজাতি নিহত ও আহতের পরিসংখ্যান আরো বেশি। কেএনএফ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কুকি চিন জনগোষ্ঠীভুক্ত বম সম্প্রদায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তাদের সহযোগিতা ও মদদ দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো এবং আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী অথাৎ (খ্রিস্টান মিশনারী, এনজিও, দাতাসংস্থা)।
কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের দু’টি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলিকদমসহ মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র দাবি করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছে। কুকি ল্যান্ড হবে তাদের স্বপ্নের স্বাধীন দেশের নাম! এদেরকে অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সহযোগিতা করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। ভারতের মিজোরাম অঙ্গরাজ্যে তাদের জ্ঞাতি ভাই রয়েছে তারা ওখানে জো জাতি হিসেবে পরিচিত আবার মায়ানমারের কিছু অঙ্গরাজ্য রয়েছে তাদের আবাস। অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় কিন্তু তাদের জ্ঞাতি ভাইরা দেয়। মায়ানমারের কাচিন বিদ্রোহীদের থেকে নিয়েছে প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশের উপজাতিদের আদিবাসী দাবি এবং ভারতের উপজাতিদের আদিবাসী একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এসব বিষয়গুলো বিচার- বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমেয় আদিবাসী দাবির অন্তরালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷ বর্তমানে পাহাড়ি এবং বাঙ্গালীদের মধ্যে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে! যারা উপজাতি আর আদিবাসী শব্দের তফাৎ বুঝেনা তাদের আন্তর্জাতিক আইন স্মরণ করে বলি, নিজেস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আছে বলেই তো আন্তর্জাতিক আইনে উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি; শুধুমাত্র ভাষা সংস্কৃতি দিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়না; আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য অবশ্যই জাতিসংঘের আইএলও কনভেনশন ১৬৯ এর সাধারণ নীতির (a) ও (b) রয়েছে; এই কনভেনশন ২টি আর্টিকেল উপজাতি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয় এবং অধিকার সম্পর্কিত; বাংলাদেশে আর্টিকেল দুটির অপব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে এবং উপজাতিদের আদিবাসী বানানোর একটা ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে!
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উক্ত জাতিস্বত্বাকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। তাদের নিজেস্ব পরিচয় থাকার পরও নতুন করে আদিবাসী বানানো একটা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস। কুকি চিন জনগোষ্ঠীভুক্ত, বম, লুসাই, পাংখোয়া, মুরং, খিয়াং জাতিরা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের মত নিজেদের আদিবাসী দাবি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় চাচ্ছে। এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা, নির্যাতন- নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মূলত তারা যে দেশভাগের ষড়যন্ত্র করছে ও সাধারণ পাহাড়ি- বাঙ্গালী থেকে চাঁদাবাজি করছে এবং মানুষের উপর অত্যাচার করছে তা দামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে অধিকার দাবি ও আদিবাসী শব্দের সাংবিধানিক স্বীকৃতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অধিকার ও আদিবাসী দাবির অন্তরালে স্বপ্ন বুনছে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৮ কোটি বাঙ্গালী কী তা মেনে নিবে? ৭২’ সালে যারা ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সে বাঙালি জাতি তাদেরকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপরূপ সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামের এক-দশমাংশ বা তার কিছু অংশ ছেড়ে দিবে বলে মনে হয় না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ব্রিটিশরা বীজ বপন করে গেছে অতীতে। সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলমান। মিশনারী, দাতাসংস্থা এনজিও গুলো শিক্ষা ও সহায়তার আঁড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামের সহজসরল উপজাতীয়দের দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করছে। তারজন্য তারা সময় সুযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি দেখায় বাঙ্গালী দাড়ানোর জন্য এবং আদিবাসী হিসেবে পরিচিত বহন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বার পক্ষে সাফাই গাওয়া সমতলের সুশীল, প্রগতিশীল ও মুক্তমনাদের একটি তথ্য জানাতে চাই- ২০০/৩০০ উগ্র সাম্প্রদায়িক বম, লুসাই, পাংখোয়া, মুরং, খিয়াং যুবক গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া কী সন্দেহের তীর বাড়ছে না কুকি ল্যান্ড বা খ্রিষ্টান রাষ্ট্র গঠনের? ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর এবং দক্ষিণ সুদান এর ইতিহাস যদি একটু পর্যবেক্ষণ করা হয় তার বাস্তব বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়।