শহরের প্রবেশদ্বারে অটোরিক্সায় আগুন ও গুলিবর্ষণ: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!

0
97
ছবি: উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক দেপ্পছড়িতে জ্বালিয়ে দেওয়া অটোরিক্সা
ছবি: উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক দেপ্পছড়িতে জ্বালিয়ে দেওয়া অটোরিক্সা

রাঙ্গামাটি থ নামে ১১-০৫৯৮ নাম্বারের একটা সিএনজি অটোরিক্সা আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল ৯ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় সিএনজি সমিতির সদস্য রনেশ্বর দাশকে সন্ত্রাসীরা হামলা করে তার গাড়ি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করার ঘটনা ঘটে।

রাঙ্গামাটি অটোরিক্সা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদার বলেন, শহরের বনরুপা থেকে ঘাগড়ার উদ্দেশ্যে ৩টি সিএনজি ছেড়ে যায়। তৃতীয় নাম্বার সিএনজি অটোরিক্সাটি দেপ্পোছড়ি এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে চাঁদার টোকেন চায়। গাড়ির চালক চাঁদার টোকেন দেখাতে ব্যার্থ হলে চালক এবং গাড়িতে থাকা যাত্রীকে মারধর করে সড়কের একপাশে নিয়ে যায় এবং গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক চালক জানান, রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি সংলগ্ন দেপ্পাছড়ি এলাকায় কীভাবে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থান প্রকাশ্যে এসে গাড়িতে আগুন দেয়, যাত্রী ও চালককে মারধর করে এবং উপর দিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে? বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। রাঙ্গামাটি শহরের নিকটস্থ এই দেপ্পছড়ি চলতি বছরের ২৫-শে জানুয়ারী কাঠবাহি চলন্ত ট্রাকে ব্রাশ ফায়ার করে অস্ত্রধারী উপজাতি সন্ত্রাসীরা৷ প্রায় প্রতিবছর এই জায়গাতে সন্ত্রাসীরা যানবাহনে গুলিবর্ষণ করে এবং যাত্রীদের উপর হামলা করে তারপরও প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না! বছর তিনকে আগে এখানে যানবাহন ও যাত্রীদের উপর হামলার এক ঘটনায় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের নিরাপত্তা ও টহল ব্যবস্থা করা হয়। সময়ের পরিক্রমা সেই নিরাপত্তা ও পুলিশ টহল প্রত্যাহার করা হয়! বিভিন্ন সূত্র থেকে শুনেছি রাঙ্গামাটি জেলায় প্রায় তিন হাজার পুলিশ আছে। জানি না এই পুলিশরা কী করে? রাঙ্গামাটিবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে দেপ্পছড়ি হইতে সাপছড়ি পর্যন্ত রাত্রের বেলায় যেনো একটি টহল থাকে। কে শুনে কার কথা, প্রশাসন এখানকার বাঙ্গালীদের মানুষই মনে করে না! এর আগে চট্টগ্রাম বাঁশখালীর এক ব্যবসায়ীকে এখানে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দুর্গম এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলে তা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু শহরের একদম প্রাণ কেন্দ্রের নিকটে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। শহরের প্রবেশদ্বার (রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়ক)-এ দেপ্পছড়ির অবস্থান, (পাশে রয়েছে মানিকছড়ি পুলিশ ফাঁড়ি ও চেকপোস্ট) এমনস্থানে যদি সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় আগমণ করে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে তখন মানুষের মনে নানান প্রশ্ন তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন তৈরি হয়। বলতে হয়, রাঙ্গামাটিতে এতগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা থাকার পরও এই হামলা কী করে হয়? বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিকভাবেই রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপায় রাস্তায় এলোপাতারি গাড়ি রেখে অবরোধ সৃস্টি করে প্রতিবাদ সভা করেছে অটোরিক্সা চালক সমিতির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ থেকে প্রশাসনকে আগামী ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলেন,বেধে দেওয়া ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনাসহ ক্ষতিগ্রস্থ অটো চালককে তার গাড়ির ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সকল শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে রাঙামাটি শহরকে অচল করে দেওয়া হবে।

সমিতির নেতারা আরো অভিযোগ করে বলেন, চাঁদার টোকেন সংগ্রহ না করলেই সন্ত্রাসীরা গাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়, অপহরণ করে এবং হত্যা করে। এসব বন্ধে প্রশাসনের সর্বাত্বক সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

গত বছর ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আসামবস্তী কাপ্তাই সড়কের বড় আদমের তঞ্চঙ্গ্যাপাড়ায় জেএসএস এর সহকারী কমান্ডার বিপ্লব চাকমা এবং কালেক্টর রিটন চাকমার নেতৃত্বে আনুমানিক ১০ সদস্যের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদা পরিশোধ না করায় ০৬টি সিএনজি অটোরিকশা এবং ০১টি পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করে।

এরপর ১৬ই সেপ্টেম্বর রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে চাঁদার দাবিতে আরো একটি অটোরিক্সা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো আঞ্চলিকদলীয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। রাঙামাটি শহরের অদূরেই এই ধরনের সশস্ত্র তৎপরতায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় রাঙামাটির সর্বত্রই গাড়ি চালকদের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়তই।

উপরোক্ত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য জেলার মত এই পর্যটন শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এখানকার মানুষের নিরাপত্তা নেই৷ সবকিছুই চাঁদা দিতে হয় সন্ত্রাসীদের এই অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়।

লেখক: তাপস কুমার পাল 

রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার থেকে।

আগের পোস্টপ্রত্যন্ত অঞ্চলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসায় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বিজিবি।
পরের পোস্টকেএনএফ ধর্মীয় উপাসনালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মান্তরিত করছে!

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন