রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী থেকে অপহৃত তিন শ্রমিককে বিশেষ অভিযানের কারণে ছেড়ে দিয়েছে। অপহৃত তিন শ্রমিক বুধবার ১৪ জুন (দিবাগত রাত্রে) উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের লংগদুপাড়ার একটি আনসার ক্যাম্পে শিকল পড়া অবস্থায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে।
জানা যায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলায় রাতের অন্ধকারে উপজাতি সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ৩ সড়ক নির্মাণ শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। গত সোমবার ১২ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে রাত ৮ টার সময় উপজেলার ২ নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের লংগদুপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
অপহৃত শ্রমিকরা হলেন সোহাগ (২১), রূপক(১৯) ও বিশ্বজিৎ দে (২৩)। অপহৃত তিনজনের মধ্যে সোহাগ ও রূপক এ দু’জন আপন ভাই। অপহৃত তিনজনই সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিই”র বাস্তবায়নাধীন সড়ক ধারক দেয়াল নির্মাণ কাজের শ্রমিক ছিলেন।
অপহৃত সোহাগ-রূপকের বড় ভাই সবুজ জানিয়েছেন, বিগত তিনমাস ধরেই তারা সর্বমোট ১৪জন শ্রমিক রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া সড়কের লংগদু পাড়াস্থ লেবার শেড এ অবস্থান করে পাশের সড়কে এনডিই কর্তৃক ধারক দেয়াল নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত সোমবার সন্ধ্যায়ও কাজ শেষ করে লংগদু পাড়াস্থ লেবার শেড এ অবস্থান করছিলো উক্ত তিন শ্রমিক। এসময় ৫/৬ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী খুঁটি থেকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে লেবার শেডে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে তিনজনকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যায়।
সবুজ জানান, আমার ভাইদের নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের লেবার শেডের পাশেই আরো একটি লেবার শেডে অবস্থান করা আরো দুইজন শ্রমিককে ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। তারা দৌড়ে বাজারে এসে আমাদেরকে ঘটনাটি জানায়।
সবুজ জানিয়েছে, তারা তিন ভাই একসাথেই উক্ত কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা নেত্রকোনা জেলাধীন পূর্বধলা থানার সাতকাঠি গ্রামের জামাল উদ্দিনের সন্তান। এছাড়া অপহৃত অপরজন বিশ্বজিৎ দে’র বাড়ি গাইবান্ধা জেলাধীন সাগাটা থানার ২নং ধলধলিয়া গ্রামে।
তিন শ্রমিক ফিরে আসার খবরে তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অপহরণের পর থেকে তারা উদ্বিগ্ন ছিল।
রাজস্থলী থানার অফির্সাস ইনচার্জ জাকির হোসেন শ্রমিক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে অপহরণের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ সুত্র জানিয়েছে, এই ঘটনার পর থেকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বা তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। কিন্তু তারপরও অপহরণের ঘটনাটি শুনার পর থেকেই অপহৃতদের উদ্ধারে নামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার ও বুধবার সারাদিন সার্বক্ষনিকভাবে অপহরণের বিষয়টি তদারকি করেছেন প্রশাসন। তথ্য প্রযুক্তির কল্যালে বিকেল থেকেই অপহৃতদের উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসন আশাবাদী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে রাত্রে তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এই অপহরণ ঘটনার সাথে খোদ অপহৃত একজন সরাসরি জড়িত থাকতে পারে। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা একদল উপজাতীয় যুবক এই কাজ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেবার লক্ষ্যে। বুধবার দুপুর থেকেই ০১৮৭৮৪৮২৫১৮ এই রবি নাম্বার থেকে কল করে অপহরণকারিদের মুক্তিপণ বাবদ আড়াই লাখ টাকা দাবি করা হয়।
বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলে অপহৃতরা একটি অটোরিক্সার মাধ্যমে লংগদু পাড়ার একটি আনসার ক্যাম্পে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করে সেখানেই অবস্থান করে। পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে গিয়ে অপহৃতদের থানায় নিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি অত্যন্ত রহস্যাবৃত এবং সেটি শীঘ্রই সামনে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন উদ্বর্তন কর্মকর্তা।