বাংলাদেশের উত্তর-পূ্র্ব ও দক্ষিণ পূর্বে ছয়টি উপজেলায় খুবই কম জনসংখ্যার ‘কুকি জনগোষ্ঠীর বসবাস( লুসাই, বম,খুমী, খিয়াং, ম্রো, বনযোগী)। এরা খুব উঁচু পাহাড়ে থাকে এবং বাংলা বলতে জানে না বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংলগ্ন মানুষের কাছে তারা ‘কুকি’ নামেই পরিচিত এরাই ‘জো’ জাতির অন্তর্গত।
যারা বাংলা বলতে পারতো এবং বন্ধু ভাবাপন্ন উপজাতিদের চট্রগ্রামের মানুষ জুমিয়া বা ‘জু্ম্মা’ নামে ডাকতো।
কুকিরা সেই বৃটিশদের শাসনামলে ‘দূর্ধর্ষ, আগ্রাসী ও হিংস্র’ জাতি বলে বৃটিশদের কাছে তো বটেই সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত ছিলো “পূর্বান্চলের মারাঠা” নামে।
১৮৯২ সালের জানুয়ারি মাসে তদানীন্তন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী কোলকাতায় বাংলার তখনকার ছোটলাটের সভাপতিত্বে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় হয়েছিলো। আগামী দিনে বাংলা, আসাম আর বার্মার সীমান্ত ঘেঁষা চিন- লুসাই হিলসের প্রশাসনিক রূপরেখা কী হবে, সেটা স্হির করাই ছিলো ওই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য। ওই অন্চলে বসবাসকারী কুকি- চিন-লুসাই ( বা কুকি-চিন মিজো বলেও যাদের অনেকে চেনেন) নৃগোষ্ঠীর সংগে ততদিনে অন্তত পাঁচটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, আরও তিনটি হওয়ার অপেক্ষায়।
উনিশ শতকের শেষ দিকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ পূর্ব, পূর্ব দিক থেকে নানান মুখী চাপে কুকিরা ধীরে ধীরে লুসাই পাহাড়ের দিকে চলে যায়।
তাদের ছেড়ে যাওয়া অন্চলগুলোই হলো বর্তমানে কুকিদের দাবী করা বরকল, রোয়াংছড়ি, কাপ্তাই, থানচি, রুমা উপজেলা গুলো। যা পরবর্তীতে চাকমা এিপুরা ও মারমা জনগোষ্ঠীর লোকদের দখলে চলে যায়।
যাইহোক, কলকাতার সেই চিন- লুসাই কনফারেন্সের পরই স্হির হয়েছিল, এই জন গোষ্ঠীর বাস যে বিস্তৃতীর্ন এলাকা জুড়ে তা তিনটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে।- চিন হিলস বার্মার, লুসাই হিলসের দক্ষিণভাগ বাংলার আর উওর ভাগ আসামের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বাংলাদেশে দু’দশক ব্যাপী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রামে চাকমা নেতৃত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ টি নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবী করতো। কিন্তু শান্তি বাহিনীর ১২ টি সেক্টর কমান্ডারের মধ্যে ( ১৯৭৫- ১৯৮৩) সব গুলো পদই চাকমা নেতৃত্বাধীন ছিলো। ভারতবর্ষের অন্যান্য স্হানের মতই নৃগোষ্ঠিগুলের নিজেদের মধ্যে অন্তঃদ্বন্ধ বা আন্তঃনৃগোষ্ঠীর কলহ এবং সংঘাত নতুন কিছু নয়।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বা সামগ্রিক ভাবে আমাদের নৃগোষ্ঠীকে খুব কম জানি বলে সবাই কে গড়ে চাকমা বলে সম্বোধন করি। এই ভ্রান্তি আমাদের সংবিধানের রচয়িতা থেকে শুরু করে তাবৎ সব বিদ্বান বুদ্ধিজীবি কেউ বাদ যায় না।
১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হলে চাকমা রাজার পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনে চাকমারা মুক্তি বাহিনীর কারো কারো হাতে নির্যাতিত হয়। ১৯৭২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিজোদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা কালে চাকমাদের সহায়তা পেয়েছে বলে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট অভিযোগ করতো। মিজোরা তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের আশ্রয়ে রুমা, বরকল এসব এলাকায় নিরাপদে ঘাঁটি করে থাকতো। মিজোদের দ্বারাও চাকমারা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ ও লুন্ঠনের শিকার হয়েছে।
ঐতিহাসিক ভাবেই মিজোদের সাথে চাকমাদের একটা টানা পোড়ানো সম্পর্ক ছিলো। শান্তি বাহিনীর প্রথম দিকে মিজোরামে তাদের হেডকোয়ার্টার ছিলো। বোয়ালখালি, বিলাইছড়ি,বরকল এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর পরিচালিত এ্যাম্বুশগুলো মিজোরামে অবস্হিত শান্তিবাহিনীর ঘাঁটি থেকে হয়েছে। এখানে প্রথম দিকে শান্তি বাহিনী কেও দূর্ধর্ষ মিজোদের আক্রমণের মধ্যে পড়তে হয়েছে। মিজোদের সাথে দ্বন্ধের কারনে পরবর্তীতে শান্তিবাহিনী তাদের হেডকোয়ার্টার এিপুরাতে সরিয়ে নেয়।
বাংলাদেশের সরকারের সাথে দীর্ঘ দুই যুগের আন্দোলনের সময় বান্দরবান তুলনামূলক ভাবে শান্তি বাহিনীর কম তৎপরতা দেখেছে মূলত কুকিদের বিশেষ করে একরোখা মুরংদের মারমুখী আচরণের কারনে। মুরংরা স্বাধীনভাবে তাদের জীবন যাপন করেছে। শান্তি বাহিনীর সহযোগী না হওয়ায় তারা সেনাবাহিনীর প্রিয় পাত্র ছিলো।
তার মূল্য অবশ্য তারা দিয়েছে শান্তি বাহিনীর কোন পর্যায়েই তারা উল্লেখযোগ্য ভাবে ছিলো না। নেতৃত্বের পর্যায়ে তো নয়ই।
জেএসএস নেতৃত্ববৃন্দ খুব সফলভাবে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে অপরাপর আরো ১২টি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম বলে প্রতিষ্ঠিত করে । যদিও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ বাঁধের কারনে মূলত এতে চাকমা প্রভাবশালী অংশটিই বেশি ক্ষতিগ্রস্হ হয়।
১৯৯৭ সালে সরকারের সাথে চুক্তির পর জেএসএস নেতৃবৃন্দ ১৩ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অভিভাবক হিসাবে আবির্ভূত হন।
উপজাতি হিসাবে চুক্তি করলেও,একুশ শতকের গোড়া থেকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের পরিচয় উপজাতি থেকে আদিবাসীতে উন্নিত করতে সচেষ্ট হন।
কিন্তু কুকিরা বান্দরবানের ৬টি উপজেলায় নিজেদের আদিবাসী দাবী করে কেএনএফ নামে নতুন সংঘঠনের আবির্ভাব ঘটিয়েছে বছর দুয়েক আগে। তারা ২০০৮ সালে থেকেই কেএনডো ( কুকি ডেভোলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) নামে একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে কাজ করতে থাকেন। ঠিক যেমনটা করেছিলেন কামিনী মোহন দেওয়ান ১৯১৬ সালে তিনি গঠন করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি নামে একটি সামাজিক সংগঠন যা বর্তমানের জেএসএস’ র মাতৃ সংগঠন বলে মনে করা হয়।
আসলে কুকি-চিন- লুসাই ( বা কুকি-চিন – মিজো বলেও যাদের অনেকে চেনেন) তারা অনেক আগে থেকেই ‘জো রি-ইউনিফিকেশন অরগানাইজেশান’ বা ZORO নামক একটি রেনেসাঁবাদী সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছিলো। এর নেতা R Thangmawia মিজোরাম ও বার্মার চিন প্রদেশের তার জ্ঞাতিদের একত্রিত করার এক প্রচেষ্টায় নিবেদিত ছিলেন আমৃত্যু। তিনি বহুবার চাকমা রাজার মতো United Nations Permanent Forum on Indigenous Issues এর বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য দেন।।
এসব আন্দোলন এতটাই জোয়ার আনে যে মিজোরামের তৎকালীন চীফ মিনিস্টার ব্রিগেডিয়ার টি সাইলো পার্শ্ববর্তী চিন প্রদেশের সীমান্ত পর্যন্ত মার্চ করেন সংহতি প্রকাশের জন্য। চিন প্রদেশের বৃহওর কুকি-চিন -লুসাই জনগোষ্ঠীর লোকেরাও ‘জো’ জাতীয়তাবাদের ঢেউয়ে উদ্বেলিত হয়ে ভারতের সাথে সংযুক্তির দাবী তুলেন এবং সেখানে ভারতীয় পতাকা উওোলন করা হয়।
মায়ানমার এর কড়া জবাব দেয় চিন প্রদেশে ব্যাপক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। ২০২১ সালে এ অন্চলের পরিস্থিতিতে আবার উওেজনার বীজ ছড়ায় মায়ানমারের সামরিক শাসকদের ক্ষমতা দখলের কারনে। ৫০ হাজার কুকি জনজাতি মিজোরামে আশ্রয় নেয়। চিন প্রদেশের বা জো জাতি গনতান্ত্রিক শক্তির সাথে হাত মিলায়। পিডিএফ ( পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) কে প্রশিক্ষন দেয় তারা। সাম্প্রতিক সময়ে মনিপুরের ঘটনায় কুকি জনগোষ্ঠীর ফের কয়েক শত লোক মিজোরামে আশ্রয় নেয়। সব কিছু মিলিয়েই এই অন্চলে একটা ‘জো জাতীয়তাবাদ ‘ এর পুনর্জন্ম হচ্ছে কিনা তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ আছে।
বিবিসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন মিজোরাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী জে ডাউঙ্গেলঃ
” এ অন্চলের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বিচলিত করার মতো। সে কথা মানলেও তিনটি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কুকি – চিন – মিজোদের এখনই কোনও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্ম দেবে বলে মনে করেন না।
” জো – রা নানা প্রান্তে নির্যাতিত হলেও তারা কিন্তু এখনই কোনও সার্বভৌম স্বদেশ ভূমির জন্য লড়ছে না। বরং এক এক জায়গায় তাদের আন্দোলনের দাবীটা এক এক রকম। মায়ানমারে চিন রা আর আলাদা হতে চান না।
মিজোরামে ১৯৮৬ সালে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভারতের সাথে শত্রুতা বন্ধ করে শান্তির সুফল ঘরে তুলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় এতো সব উওেজনা স্বত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে কোন সাহায্য আসেনি কুকি-চিন জন গোষ্ঠীর জন্য। ভারত সরকার একটি পয়সাও খরচ করেনি।
এতো সব ঘটনার ঐতিহাসিক তাৎপর্য হলো আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে এতো কালের শোনা জুম্ম জাতীয়তাবাদের একক আধিপত্যে পেরেক ঠুকে দিয়েছে ‘জো জাতীয়তাবাদ’।
নাথান বম ঠিক তার প্রাক্তন গুরু সন্তু লারমার পদাংক অনুসরণ করেন। তিনিও প্রথমে একটি সামাজিক সংগঠনের ( কেএনডো- কুকি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) আড়ালে সংগঠিত হতে থাকেন। তার পরে কে এন এফ ( কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এবং তার সশস্ত্র সংগঠন কেএনএ ( কুকি ন্যাশনাল আর্মি)।
হঠাৎ করে নাথান বম সন্তু লার্মার হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ায় তিনি খুব বিচলিত। কারন তিনি জানেন কুকিদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালে তার পরিনতি উনিশ শতকের মতো হবে। সন্তুলারমা একজন ঝানু পোড় খাওয়া আপাদমস্তক কমিউনিস্ট। ৬৫ বছরের সংগ্রামী জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানতেন ‘জো জাতীয়তাবাদের ‘ উত্থানের বিপদের কথা। তিনি চাইছিলেন বা আশা করেছিলেন বা হিসাব করে ভেবেছিলেন খুব দ্রুত মানে ১/২ বছরের মাথায় চুক্তি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে ‘জো জাতীয়তাবাদের ‘ ফণা তিনি পিষে ফেলতে পারবেন। সাথে বেয়াড়া প্রসীত খীসার উত্থানও। তিনি ঝানু নেতার মতো বুঝতে পারেন তার হিসাবে কিছু গড়মিল হয়ে গেছে। তাই ২০০০ সাল থেকেই তিনি ‘বিশেষ মহল, স্বার্থান্বেষী মহল, চুক্তির বিপক্ষ শক্তি ‘ ইত্যাদি বলে তিনি দূরের ও কাছের শত্রুদের দিকে তীর ছূড়তে থাকেন।
তিনি ১৯৯৪ সালেই জো জাতীয়তাবাদের ঢেউ এখানেও আসবে তা বুঝতেন। তার হাতে গড়া নাথান বম তার হাত ফসকে যাবে তিনি কি জানতেন না? জানতেন। কারন নাথান বম রা অনেক খৃস্টিনিয়াজম এর মত জো জাতীয়তাবাদ নিয়ে জন্মেছেন। যতই আদিবাসী আদিবাসী বলি না চূড়ান্ত বিচারে প্রতিটি নৃগোষ্ঠী অত্যন্ত জাতীয়তাবাদী, খুব আত্মম্ভরি। একই জাতি গোষ্ঠীর হলেও তাদের মধ্যে সূক্ষ বিভেদ রয়েছে। যা সময়ে সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে যা কিছু ঘটে তার শিকড় পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতও থাকে। বিপরীত ভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাইরে যা ঘটে তার ঢেউ এখানেও এসে পড়ে।
উওর পূর্ব ভারতের ২০০টির মত জাতিস্বত্বার মধ্যে আশা আকাঙ্খা প্রতিনিয়ত নানান পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। কোন একটি বিশেষ শাসন ব্যবস্হা বা কোন গোষ্ঠীর কোন একদিনের দাবী মানা -নামার মধ্যেই সমাধান নিহিত নয়। প্রতিনিয়ত নানান ধরনের মেরুকরণ ঘটতে থাকে।
১৯৯৭ সালের চুক্তির পর রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবাই হয়তো ভেবেছিলেন, ‘যাক বাবা লেটা চুকে’ গেল’। এক জেএসএস ‘র পর আবার কেএনএফ বা এক সন্তুর পর আবার ‘ছোট সন্তু নাথান বমে’র জন্ম হবে তা কি কেউ ভেবেছিলো?
ভাবেনি কারন পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠীকে আমরা খুব কমই জানি। তাদের মধ্যকার বৈপরীত্য বা তাদের মধ্যকার সূক্ষ্ণ বিভাজনের বা আত্মম্ভরিতার খবর আমরা রাখি না বা বুঝতে চাই না বা কখনো কখনো আড়াল করে রাখা হয়। আজ কেএনএফ ‘র স্বতন্ত্র রাজ্য মেনে নিলেই কি সমাধান হবে? কাল তো আরেক নৃগোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। যেমন এখন এিপুরার কোন কোন সংগঠন আসাম, খাগড়াছড়ির কিছু অংশ নিয়ে গ্রেটার এিপুরা স্টেট করার কথা বলছে। এিপুরাতে ‘চাকমা অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল’ চাচ্ছে সেখানের চাকমারা। নাগারা চাচ্ছে নাগালিংগাম। এই নাগালিংগাম নিয়েও মতভেদ ২৬টি গোএে বিভক্ত আসামা, নাগাল্যান্ড, মনিপুর সংলগ্ন নাগারা।
মনিপুরে কুকিরা চাচ্ছে মেইতীদের থেকে আলাদা হতে তা আলাদা রাজ্য, কেন্দ্র শাসিত অন্চল, বা আলাদা কোন প্রশাসনিক ব্যবস্হা তা যে নামেই হোক।
কুকি-চিন- লুসাই জনগোষ্ঠী ১৮৯২ সালের ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক তাদের পিতৃভূমিকে এিখন্ডিত করে কুকি জনগোষ্ঠীকে গরুছাগলের মতো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে এখন ‘জো’ জাতীয়তাবাদ দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং তারা তাদের পিতৃভূমির অখণ্ডতা (যা তারা ১৮৩২ সালে বৃটিশ দখলদারির কারনে হারিয়েছে) এবং সকল জো’ জাতির মিলন চায়। এটা অনেকটা ইহুদীদের ‘রিটার্ন টু দ্য প্রমিজডল্যান্ড’ র মতো প্যালেস্টানীদের উচ্ছেদ করে সে ভুমিতে ইহুদিদের ফিরিয়ে আনার মত চলতি মতবাদ। ইহুদীরা মনে করে জেরুজালেম সহ প্যালেস্টাইন ভূমি হলো ‘গডস চুজেন পিপল’ শুধু ইহুদিদের জন্য। বাকীরা সব বহিরাগত।
কুকিরাও তাই মনে করে লুসাই হিলসের পাদভূমি কুকিদের পিতৃভূমি বাকীরা ( চাকমা – মারমা- এিপুরা) সব বহিরাগত। তারা বৃটিশ আমল থেকে এপর্যন্ত সকল রাজনৈতিক কারনে দেশান্তরীত সকল কুকি জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবর্তন চায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়টি উপজেলা নিয়ে তাদের কল্পিত স্বপ্ন রাজ্যে-একটা পৃথক শাসন ব্যবস্হা ও পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অন্চল।
তাহলে প্রশ্ন জাগে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে প্রদও ‘রিজিয়নাল কাউন্সিল ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে দেওয়া আন্চলিক শাসন ব্যবস্হার ভবিষ্যৎ কি?? তাহলে সন্তু লারমার সাথে সরকার কি চুক্তি করলো যদি কুকিরা সন্তুষ্ট না হয় বর্তমানে প্রদও স্ব-শাসন ব্যবস্হায়?? আদিবাসী সংগার আড়ালে বৃহওর গোষ্ঠীর তুলনায় (যাদের হাতে আবার সব স্বশাসনের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে) তারা পুনরায় সংখ্যালঘুতে পরিনত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন জাগে কেএনএফ -র আজকের উচ্চকন্ঠ তখন ( ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭) কোথায় ছিলো? কারা তখন কুকিদের প্রতিনিধিত্ব করেছে? ‘জো’ জাতীয়তাবাদের ধ্বনি তখন কি কেউ তুলেছিলো??
জো জাতি আর জুম্ম জাতির দ্বন্দ্ব কিভাবে মিটানো হবে?
ধর্মীয় বিভাজন জাতিগত সংঘাতে সবসময়ই এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই অন্চলে। খৃষ্টান অধ্যূষিত নাগাল্যান্ড,চিন,মিজোরাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কুকি জনগোষ্ঠী নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। এই অন্চলে একটা ‘লর্ডস কিংডম অনেকেরই কাম্য।
সন্তু লারমা কি তার নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করবেন নাথান বমের সাথে???
সরকারের কি আরেকটা সুযোগ আছে কেএনএফ ‘র সাথে আলাদা কোন প্রশাসনিক ব্যবস্হায় যাওয়া??
লেখক: নাসিম হোসেন
ঢাকা
৮ জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ