কোটা বাতিলের পর বিসিএসে পিছিয়ে উপজাতি শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ; সমগ্র জনগোষ্ঠির প্রায় এক শতাংশের মতো (১.১১%)।
এই ১.১১℅ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য সরকারি ক্যাডারে ৫ শতাংশ কোটা ছিল! কোটা সুবিধা থাকায় বিসিএসে এসব জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের আসার সংখ্যাও ক্রমে বেড়েছিল। আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে সরকার। বাতিলের পর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষগুলো আন্দোলন করে। তাদের আন্দোলনে সহানুভূতি দেখায় অনেক জ্ঞানপাপী ও বুদ্ধিজীবী মহল। ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তা গুলো আদিবাসী হিসেবে নিজেদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করলেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ভোগ করতে লজ্জাবোধ করে না কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে পরিচয় বহন করতে লজ্জাবোধ করে! এটা যেমন হাস্যকর তেমনি লজ্জাজনক ও বটে।
কোটাপদ্ধতি বাতিল হওয়ার আগে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২১ জন সুপারিশ পেয়ে সরকারি চাকরি পান। তাঁদের মধ্যে প্রশাসনে ১০ জন। অন্যরা পররাষ্ট্র, পুলিশসহ সাতটি ক্যাডারে। কোটা বাতিল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুটি সাধারণ বিসিএসের (৪০ ও ৪১তম) ফল প্রকাশিত হয়েছে। দুটিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন করে সুপারিশ পেয়েছেন। তাঁদের একজন ৪০তম বিসিএসে নিরীক্ষায়, অন্যজন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে।
এর আগে ৩১তম থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন সুপারিশ পান। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে (চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন। পরের দুটি সাধারণ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র দুজন।
জনসংখ্যা অনুযায়ী তারা তাদের প্রাপ্য পেয়েছে। কিন্তু এটা মানতে চান না আমাদের তথাকথিত সুশীল, প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবিরা! অন্যদিকে আরেকটু নিবিড় ভাবে চিন্তা করলে আমরা ফলাফল পেয়ে যাই। মাত্র ১৬ লক্ষ উপজাতিদের জন্য শিক্ষা,স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ প্রতিটি খাতে ৫% কোটা অন্যদিকে সমগ্র বাঙালির ১৮ কোটি জনগণের জন্য বাকি ৯৫%। তার মধ্যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা,যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তো রয়েছেই যাদের কারণে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। মেধাহীনরা কোটা প্রথার সুবিধা গ্রহণ করে এতদিন বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করেছিল। ৫০টির মত ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা থাকলেও চাকরির বাজারে সুবিধা পাচ্ছে শুধুমাত্র চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা। পাহাড় ও সমতলের বাকী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গুলো অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের সব উন্নয়ন এবং কর্মকাণ্ড তিনটি জাতিই সুবিধা ভোগকারী। এই নিয়ে ও কোটা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। কোটা আন্দোলনের কারণে যার অবসান হয়। এখন সুযোগ-সন্ধানী মহল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটাপ্রথা চালুর জন্য তৎপর হয়েছে। এদেশের তথাকথিত, সুশীল, প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবি এবং উপজাতীয়দের একটি লোভী শ্রেণী কোটা প্রথা পূনঃবহাল করার প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত। বাস্তব অর্থে বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবঞ্চিত সমাজব্যবস্থা,শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতের প্রশাসনের কান্ডারী যদি এরকম কোটা ভিত্তিক অদক্ষ মেধাহীন উপজাতীয়দের দখলে থাকে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত কোয়ালিফাইড ছাত্রছাত্রীরা বেকার হয়ে যায়।যার পর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।এছাড়া তো রয়েছে মামা- চাচাদের দৌরাত্ম্য।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ নানা নিরিখে এখন অনেক এগিয়ে।একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পাহাড়ে স্কুলগুলোতে ৯৫-৯৮ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে গমন করে।আর বাঙালিরা চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বাবার সাথে খেতে খামারে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। এটা বর্ণিত মহল বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য। এখন আর তারা পিছিয়ে নেই। উপজাতিদের জীবনের মান উন্নয়নের অনেক চিন্তা করা হয়েছে।তারা এখন মিশ্র ফলের বনজ বাগান করে স্বনির্ভর ও সাবলম্বী । সরকারের পাশাপাশি আরো রয়েছে এনজিও ও আইএনজিও র মত প্রচুর সংস্থা।এখন বাংলাদেশ সরকারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে মিল কারখানা,পর্যটন,খনিজ ও রাস্তাঘাট গড়ে তোলা উপর জোর দেওয়া৷ ভূমি সার্ভে,ক্যাডেস্টাল সার্ভে ও প্রত্যেকটি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহার করে স্বনির্ভরতা অর্জন করা।পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের এখন এগিয়ে নেয়ার পালা। তাহলে তারা কর্মমুখী হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। শুধু বিসিএস নিয়ে ভাবলেই হবে না।
কোটা প্রথা বাতিল করা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম একটি সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্ত। এটি আরো আগে বাতিল করা উচিত ছিল।
ভাবা যায়? ৫% কোটা অর্থাৎ প্রত্যেক ১০০ জনে মেধায় ৫ জন আবার কোটায় ৫ জন।
যে কোন সভ্য দেশের উন্নতির পথে কোটা পদ্ধতি অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।
প্রথম শ্রেণীর চাকুরিতে কোটা না থাকাই উচিত।
যোগ্যরা রাস্তায় ঘুরবে আর অযোগ্যরা বড় চেয়ারে বসবে, এটা ন্যায় বিচার নয়। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোটা তুলে দিয়ে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অনেক সামাজিক সুবিধা রাষ্ট্রের কাছ থেকে আদায় করতে পারে এবং রাষ্ট্রের উচিত তাদের সামাজিক সুবিধা প্রদান করা। কিন্তু এটা কখনোই উচিত নয়, অন্যকে বঞ্চিত করে আরেকজনকে কোটার সুবিধায় চাকরি দিয়ে মেধাবীদের হতাশায় ডুবিয়ে রাখা।
রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। হোক সে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হোক সে সংখ্যালঘু। আপনারা তো সমাধিকারের চেতনা বিক্রি করে চলেন।এখন এ কথা বলেন? আপনারা তো এখন আদিবাসী দাবিদার!, নিজেদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন আবার দাবি করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি কোটা! এটি লজ্জাকর বিষয়।
কোটা নিয়ে এইচএসসি তে ভাল কলেজে পড়লেন, ইউনিভার্সিটিতে পড়লেন তারপরও চাকুরী পেতে কোটা দিতে হবে!
তাইলে ভাল স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে লাভ কি হলো।
নাথান বম কোটা সুবিধায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসন চায়!বাংলা একটা প্রবাদ আছে “সুখে থাকলে ভূতে কিলায়”।তাই তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া বিপদ জনক।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা, সংকট ও বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে পরিক্রাণ নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট লেখক-ব্লগার এম.এ আমিন বলেন, “কোটা পদ্ধতি বাতিল করা উচিত। আর আমাদের সাধারণ মানুষের কথা লেখা উচিত। কত পারসেন্ট ছাত্র-ছাত্রী বিসিএস সুযোগ পায়। তারা একজন দুজন পেয়েছে। জনসংখ্যার আনুমানিক হারে ঠিক আছে।
দেশের সাধারণ গরিব শ্রেণী থেকে কয়জন বিসিএস ক্যাডার হয় সেই পরিসংখ্যান কি তথাকথিত সুশীল, প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবিদের কাছে আছে? কোটার পাওয়ার অধিকার তাহলে কৃষক-মজুর শ্রেণির ও আছে। অথচ তাদের নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
ভিক্ষা করে পেটের ক্ষুধা মিটানো চেষ্টা অনৈতিক না কিন্তু বড়লোক হতে চাওয়া অনৈতিক তেমনি পিছিয়ে পড়া লেখা করা লোকদের কর্মের ব্যবস্থা করে দেওয়া নৈতিক কিন্তু কোটা দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে আনা অনৈতিক।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম তথ্য ভান্ডার নিয়ে কাজ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত সত্য উন্মোচনে ভূমিকা রাখা বিশিষ্ট লেখক ও ব্লগার এম.এন মোবারক বলেন,
“কোটা দিয়ে কখনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় না। সামনে এগিয়ে নিতে হলে তাদেরকে শিক্ষা, গবেষণা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। কোটার মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার মানে হচ্ছে তাদেরকে ভিক্ষা প্রদান করা। এভাবে কোন জাতি কিংবা গোষ্ঠী কখনো সামনের দিকে এগোতে পারে না।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই শহরে বসবাস করেন। শহরের বড় স্কুল কলেজে ও কোটার মাধ্যমে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কোটার মাধ্যমে চাকুরি পান। অথচ বাংলাদেশের অনেক হাওর অঞ্চলে জীবনে যুদ্ধ করে পড়ালেখা করতে হয়। সেখানে ভাল কোন স্কুল কলেজ নেই। কিন্তু তাদের জন্য তো কোন কোটা নেই। সরকারি চাকুরিতে শতভাগ মেধার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হউক।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস চর্চাকারী এবং এ অঞ্চলের নিপীড়ন- নির্যাতিত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে আত্মত্যাগ স্বীকার করা বিশিষ্ট লেখক ও ব্লগার এম. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। হোক সে ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, হোক সে সংখ্যালঘু বা বাঙ্গালী। আপনারা তো সমাধিকারের চেতনা বিক্রি করে চলেন। এখন এ কথা কেন?? আপনারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছেন- উপজাতি হিসেবে, কোটায় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন উপজাতি হিসেবে আর নিজেদের দাবি করেন ‘আদিবাসী’ হিসেবে এটা রাষ্ট্রের সাথে ছেলে খেলা নয় কি?”
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমসাময়িক বিষয়ের উপর বিশিষ্ট লেখক ও ব্লগার মুমিনুল হক বলেন, আমি এবং আমার এক উপজাতি বন্ধু একই স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছি। ছাত্র হিসেবে আমি সবসময় ক্লাসের ফাস্ট বয় ছিলাম। কিন্তু আমার উপজাতি বন্ধু কখনো গন্ডির মধ্যে ছিল না। অথচ আজ সে কোটা সুবিধা পেয়ে বিসিএস ক্যাডার আর আমি বেকারত্ব গ্রহণ করে পিতা-মাতার বোঝা হয়ে আছি! আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা অনেক পিছিয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীদের বর্ণ চুরি আর হলুদ সাংবাদিকতার জাঁতাকলে আমরা পিষ্ট। একই স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়ে আমরা বাঙ্গালী ছেলে-মেয়েরা বেকার কিন্তু উপজাতি ছেলে-মেয়েরা কোটা সুবিধা গ্রহণ করে উন্নত জীবন বেছে নিয়েছে। এই বৈষম্য ও অনিয়ম সৃষ্টি করেছে কোটা নামক বাহন আর একচক্ষু পার্বত্য নীতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রেই। তবুও তাদের কোটা চায়! দেশের সমতলের উত্তরবঙ্গ কুড়িগ্রাম ও দক্ষিণবঙ্গ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চলের মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের চেয়ে অধিক পিছিয়ে আছে তবুও তাদের জন্য কোটা নেই এবং তারা কখনো এই দাবিই জানায়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য, উপজাতিদের অতিরঞ্জিত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কারণে তারা আজ শুধু কোটা দাবি নয় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বশাসন ব্যবস্থা সহ আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং অঞ্চলকে অশান্ত করে চাঁদাবাজির আখড়া করেছে।”