সন্ধ্যা নামলে সন্ত্রাসীদের ভয়েই সড়কে চলেনা গাড়ি, এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীই ভরসা।

0
1

পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তির পূূর্বেরকার মত গণহত্যা নেই ঠিক কিন্তু খুন-গুম, চাঁদাবাজি এবং পাহাড়ের আঁকে বাঁকে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও বারুদের গন্ধ এখনো বিদ্যমান। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার মোট আয়তন ১৩,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা- ১৮,৪২৮১৫ জন। এই পরিসংখ্যান পার্বত্য এলাকা হিসেবে যথার্থ। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য এই জনপদের মানুষগুলো বরাবরই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিটি মূহুর্তে ভাবতে হয়। চাঁদাবাজি, খুন-গুম ও অস্ত্রবাজি করতে যারাই ব্যর্থ হচ্ছে তারাই সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি কুচক্রি মহলও, এরা সেনাবাহিনীর কারণে নিজেদের অবৈধ ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাই সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিতে অপকৌশল চালাচ্ছে।

প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিস্থিতি যদি মূল্যায়ন করতে চান তাহলে অকপটে বলা যায়, বিগত কয়েকবছরে মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে সরকার। এবং এখানকার পিছিয়ে পড়া উপজাতি জনগোষ্ঠী শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি ও কর্মসংস্থানে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু পক্ষান্তরে একটি অপ্রিয় সত্য স্বীকার করতে হবে, পার্বত্য বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী অনেকাংশ ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। আর নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়নে বলতে গেলে হতাশা কণ্ঠে বলতে হয় নিরাপত্তার দিক দিয়ে পাহাড়ি বাঙ্গালী উভয়ই সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার পর অনেক এলাকায় গাড়ি চলাচল করে না। এ অঞ্চলের ১০০ ভাগ সড়কে রাত্রে গাড়ি চলাচল করেনা সন্ত্রাসীদের ভয়ে। নাগরিক ভোগান্তি কমাতে সরকার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতকরণের নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে; সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ে নতুন নতুন অনেক সড়ক নির্মাণ হয়েছে; এসব সড়কে রাতের চলাফেরা দূরে থাক দিনে পর্যন্ত চলাচল সীমিত; সন্ত্রাসীদের এতটাই দৌরাত্ম্য যার প্রভাব জনজীবনে পড়েছে; এমন নাজুক পরিস্থিতিতে পাহাড়ে সেনাবাহিনী একমাত্র ভরসা সাধারণ জনগণের।

১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আলোকে বা শর্ত অনুযায়ী ২৩৯ টি সেনা ক্যাম্প পাহাড় থেকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ায় এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়; সাধারণ মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়। নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যদি সেনাবাহিনী চলে যায় এখানকার মানুষের উপর স্টিমরোলার চালানো যেমন হবে তেমনি গণহত্যা সংগঠিত করার মাধ্যমে জাতিগত নিধন করা হবে। সেনাবাহিনী আছে বিধায়ী সন্ত্রাসীরা অপ্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও সরাসরি মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তায় ক্ষতিসাধন করার মতো দুঃসাহস প্রদর্শন করছে না। এটি সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন আর পাহাড়ি বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সাফল্য বলা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যে আশঙ্কা আমরা ব্যক্ত করি তা হলো- সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে গণহত্যায় বাঙ্গালী প্রধান টার্গেটের পরিণতি হলেও উপরন্তু উপজাতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো গণহত্যার শিকার হতে পারে। এখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা প্রভাবশালী হলেও বাকী ১০ টি জাতিগোষ্ঠী অনেক ক্ষুদ্র। যে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও জাতিগত সমস্যাটা প্রকট তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নিধন হতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মত বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রবণ এলাকায় যেখানে সন্ধ্যা নামলে সড়কে গাড়ি আর মানুষ থাকে না সেখানে সেনাবাহিনী ছাড়া মানুষের নিরাপত্তা কতটা সংকট তৈরি হতে পারে তা ১৯৭৯ সনের পার্বত্য বাঙ্গালী এবং প্রবীণ বাঙ্গালীরা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারবে৷

বর্তমান প্রজন্মের কিছু বাঙ্গালীরা পাহাড়ে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা বুঝুক আর না বুঝুক অত্রাঞ্চলের নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব যদি সেনাবাহিনী ছেড়ে দেয় এ পাহাড় উপত্যকায় বসবাসরত ৮/১০ লক্ষ বাঙ্গালী গণহত্যার শিকার হবে। তা যদি নাও হয় রোহিঙ্গাদের মত ভাগ্যবরণ করবে। এটা সুনিশ্চিত করে বলা যায় এই থেকে পার্বত্য তিনটি জেলায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ মজবুত রয়েছে। এসব অস্ত্র পার্বত্য বাঙ্গালীদের বিতাড়িত করতে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলো ব্যবহার করবে।

দীর্ঘদিনের পর্যাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা বা দৃঢ়তা থেকে বলতে পারি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী আছে বিধায়ী এখনো মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। সেনাবাহিনীর গুরুত্ব পাহাড়ে কিছু মীরজাফর এবং অচেতন ব্যক্তি না বুঝলেও পাহাড়ের হাজার হাজার পাহাড়ি- বাঙ্গালী অনুভব করে। তারা সেনাবাহিনীকে মনে প্রাণে ভালোবাসে। সেনাবাহিনী পাহাড়ে একটি নিরাপত্তার নাম।

পাহাড়ের প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষের গণদাবি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি- সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সেনাবাহিনী ক্যাম্প বৃদ্ধিকরার মাধ্যমে সন্ত্রাস নির্মূল করা হোক।

আগের পোস্টসাজেক মাচালং জেএসএস সন্তুর গুলিতে দুই ইউপিডিএফ কালেক্টর নিহত।
পরের পোস্টঘুমধুম সীমান্তে ৪০০ চাকমা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন