সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় মারমা সম্প্রদায়ের উহ্লাচিং মারমা-কে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ বা কুকি-চিন আর্মি গুলি করে আহত করে। এই হামলার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ব ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৮০০ থেকে ১৯০০ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মারমা সম্প্রদায়কে বিতাড়িত করতে এক যোগে এবং বিভিন্ন যুগে যুগে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছিল কুকিরা। কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদ চাকমা ও মারমাদের দমনে তৈরি হয় বলে স্থানীয়দের অভিমত। তৎকালীন কুকিদের এই হামলায় মারমারা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির অনেক এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল আদিনিবাস বার্মায়। পরবর্তীতে কুকি শক্তি হ্রাস পাওয়াই এবং বার্মা থেকে মারমারা সংগঠিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি কিছু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নেয়। চাকমা, মারমা ও কুকি বিরোধ শতাব্দীর। কুকিরা কখনো মারমা-চাকমাদের মেনে নিতে চাননি৷ কুকিরা খ্রিস্টধর্মাবলম্বী আর চাকমা- মারমারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতি আলাদা হওয়াই কুকিরা কখনো মারমা বা চাকমাদের মেনে নিতে পারেনি। এই চিরবৈরিতার কারণে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী রুমা সদর ইউনিয়নের রেজুক মারমা পাড়া গ্রামে প্রবেশ করে উহ্লাচিং মারমা (৪০), পিতা-মংনাক মারমা নামে এক গ্রামবাসীকে গুলি করে। এতে উহ্লাচিং মারমার পেটে ও কোমরে গুলি লেগে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় সন্ত্রাসীরা খ্যাউ মারমা নামে আরও এক মারমা গ্রামবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। যদিও কেএনএফ দাবি করেছে তারা জেএসএস সন্তুর গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ কিন্তু জেএসএস দাবি করেছে তারা নিরিহ গ্রামবাসী।
এই ঘটনার প্রতিবাদে গত-১৪ ফেব্রুয়ারী সম্মিলিত সচেতন নাগরিক সমাজ, রুমা’ এর ব্যানারে মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, বমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় অংশগ্রহণকারীরা পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডে ‘বম পার্টির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানান। তারা কুকি জনগোষ্ঠীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে কুকি বিরোধী স্লোগান দেন।
রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং বলেন, কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্তৃক পাহাড়ে বসবাসরত নিরীহ মানুষদের গুলি করা, হুমকি প্রদান, হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার কারণে পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। তাদের অত্যাচারে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। রুমায় এখন কারোর জীবনের নিরাপত্তা নেই।
স্থানীয় মারমা সম্প্রদ্রায় কে সঙ্গে নিয়ে ইতোমধ্যে কেএনএফ বিরোধী শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে জেএসএস। এরমধ্য দিয়ে কেএনএফ এর অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে এবং কেএনএফ মারমা অধ্যুষিত বান্দরবান থেকে কোণঠাসা হবে বলে বিশিষ্টজনের অভিমত।
এদিকে বান্দরবানে পুরোদমে কুকি সন্ত্রাসী দমনে স্থানীয় মারমা সম্প্রদায় এবং জেএসএস ঐকমত্যে পৌছেছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। বর্তমানে কেএনএফ বা কুকি ন্যাশনাল আর্মি পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷ স্থানীয় হাজার হাজার মারমা সম্প্রদায় কুকি সন্ত্রাসী ঠেকাতে সংঘবদ্ধ।
কুকিদের প্রতিরোধ করতে এবার মারমাদের অনেক সংগঠিত এবং শক্তিশালী মনে হয়েছে৷ নেতৃত্বের প্রথম সারিতে মারমা নেতাদের দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা জাগরণ সৃষ্টি হবে এবং চাকমা ও কুকি অস্তিত্ব শঙ্কিত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মেরুকরণ অনেক কিছু নির্ভর করে মারমাদের সংগঠিত হওয়ার উপর। তাই কেএনএফ এর জন্য ভয় আছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে৷ হাজার হাজার মারমাদের বিক্ষোভ সমাবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে কেএনএফ৷ তাই কেএনএফ এর এতদিনের ফাঁকা বলি প্রকাশিত হয়েছে।