কেএনএফ এর কারণে বান্দরবানে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে!

0

আমরা উন্নত বিশ্বে দেখি পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে সেদেশে অর্থনীতির চাকা সচল করেছে। পর্যটন শিল্প বিশ্ব অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পর্যটন শিল্প বিকাশ স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের পরিণত হয়। একটি অঞ্চলের জীবন যাত্রার মান ও অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতেই পর্যটন শিল্প বিকাশের ভূমিকা অপরিসীম। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক-দশমাংশ। বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাসসহ এখানকার পাহাড়, গিরি, ঝর্ণা ও ভূপ্রকৃতি এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যা পর্যটন খাতের জন্য অপার সম্ভাবনাময় এক অঞ্চল হিসেবে উঁকি দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী করতে পারলে অত্রাঞ্চলের ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্তা- বম, খুমি, ম্রো, চাকম, মুরংসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ভাগ্য রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে৷ কর্মহীন নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান ও শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পেছনে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা অতুলনীয়।

পাহাড়ে যারা উপজাতি রয়েছে, তাদের একটি অংশ পর্যটনের বিরোধিতা করে থাকে৷ মূলত আঞ্চলিক দলগুলোর খপ্পরে পড়ে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্যে উপজাতি একটি অংশ পর্যটন শিল্পের বিরোধিতা করে থাকে। কিন্তু পর্যটন যে, পাহাড়ি জাতিসত্তার ভাগ্য পরিবর্তনে অপরিসীম বা কল্পনাশক্তির বাহিরে ভূমিকা রাখবে তা বুঝতে কালবিলম্ব হচ্ছে। আমরা যদি নেপাল এবং কাশ্মীরের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পাবো- তারা পর্যটন শিল্প দিয়েই এগিয়ে গেছে৷ তাদের উন্নত জীবনধারণ এবং মজবুত ও সমৃদ্ধা অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে তারা টিকে আছে। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পর্যটনের মাধ্যমে উঠে এসেছে।

বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী আর পাহাড় পর্বত ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে মানুষ বিশেষভাবে চিন্তা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে পর্যটন দিয়ে৷ পর্যটন মানুষের মূল আকর্ষণ, তার মাধ্যমে এখানকার জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি উঠে আসছে। পাহাড়ি উৎপাদিত পণ্য পর্যটন শিল্পের প্রধান আর্ষকণ। যদি পর্যটনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী সরকারের সর্বোচ্চ স্থানে দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে সরকারও এ অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সবধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে মনোযোগী হবে। তাই পর্যটন বিকাশে বাধা দূর করতে পাহাড়ী জাতিসত্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে।

তারপর বলাবাহুল্য যে, বিগতবছর গুলোতে আমরা দেখেছি- বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে পর্যটকদের সর্বস্ব লুটপাট করেছে। এমনকি জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এর ফলে পর্যটকদের কাছে কুকিভুক্ত বম বা পাহাড়ি জাতিসত্তার প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। পার্বত্য জেলায় দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগম ঘটে। এই পর্যটকদের মধ্যে যদি একবার পাহাড়ী বিদ্বেষমূলক মনোভাব তৈরি হয় তখন কিন্তু এর প্রভাব সকল পাহাড়ী জাতিসত্তার উপর পড়বে। তাই কেএনএফসহ অন্যান্য আঞ্চলিক দলের উচিত পর্যটন শিল্প বিকাশে বাধা প্রদান বন্ধ করা। এবং পর্যটকদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধ করা। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা এবং নিজেদের দাবিদাওয়া শান্তি আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করা।

আগের পোস্টশান্তি আলোচনায় অংশ গ্রহণ নাথান বমের জন্য এখন উপযুক্ত সময়।
পরের পোস্টশান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে কুকি-চিনের ৩ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন