সীমান্ত সড়ক কাজ বন্ধ করতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

0
2

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমান্ত সড়ক প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম পাহাড় ও প্রতিকূল পরিস্থিতি এটা কারো অজানা থাকার কথা নয়। যাতায়াত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে; সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ফুট উপরে; দুর্গম পাহাড়, কঠিন যাতায়াতব্যবস্থা; নেই কোনো পানি ও খাবারের ব্যবস্থা; নেই মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক; বর্ষাকালে পাহাড়ি এ জনপদ হয়ে ওঠে আরো বিভীষিকাময়; বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাস করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠী কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা বা জেলা সদরে নেওয়ার মত ব্যবস্থা নেই। এমন এক অঞ্চল খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়- ত্রিদেশীয় এলাকায় নেই সীমান্ত সড়ক এবং কাটা তারের বেড়া! যার কারণে সীমান্তে চোরাচালান এবং অবৈধ অস্ত্র আনা নেওয়াসহ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছে- ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকায় হওয়ার কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবেশী দেশগুলোর সংলগ্ন গহীন অরণ্যকে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে৷ সীমান্তে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার এলাকায় ছিলো না কাটা তারের বেড়া; নেই সীমান্ত সড়ক। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেএসএস সন্তু, ইউপিডিএফ প্রসিত, জেএসএস সংস্কার, গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ, মগ পার্টি ও কেএনএফ’সহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভারী অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং দেশগুলোতে আশ্রয় শিবির ও ঘাঁটি করে বসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামে তখনি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়স্থল ও ঘাঁটি গুলোতে পালিয়ে যায়।
এছাড়াও সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সীমান্ত সড়ক এবং কাটা তারের বেড়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব দেশে আছে সীমান্ত সড়ক। মূলত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার এবং এখানকার জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও যাতায়াত ব্যবস্থার মানোন্নয়নে সরকার এজন্যেই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটি গুণগতমান নিশ্চিত ও যথাসময়ে সম্পন্ন করতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ ও ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন করা হবে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি। প্রথম পর্যায়ের ৩১৭ কিলোমিটার কাজ শেষ হতে আর কিছু সময় বাকি। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সড়কটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সড়কটিকে ঘিরে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পর্যাটন শিল্প বিকাশের। পর্যাটন শিল্প একটি অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করে দিতে পারে। দেশের একমাত্র সীমান্ত সড়ক নির্মিত হচ্ছে পাহাড়চূড়ায়। এটির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশ্বের কাছে নতুন করে পরিচয় পাবে। এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন যেমন হবে তেমনি পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে এখানকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে উঠে আসবে, স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হোক তা চায়না ইউপিডিএফ-জেএসএস’সহ আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। কারণ এ অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাস্তাঘাট, যাতায়াত ব্যবস্থা ও সরকারি অবকাঠামো তৈরি হলে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য এবং আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। মূলত তারই কারণে সন্ত্রাসীরা সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত সীমান্ত সড়কের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাদের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার যে অভিযোগ তুলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা সমতলেও দেখে থাকি সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সাধিত করতে গিয়ে কিছু বাড়ি ঘর বা স্থাপনা সরাতে হয় তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সীমান্ত সড়কের মধ্যে অবস্থিত কিছু বাড়ি-ঘর। সীমান্ত সড়কের বেশিভাগ জায়গা সরকারের ১ নং খতিয়ানের জায়গা অথাৎ খাস ভূমি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিচ্ছিন্ন বসতি রয়েছে৷ এখানে হাজার হাজার বা শত শত পাহাড়ি উচ্ছেদ বা বাস্তুহারার সম্ভাবনা নেই৷ সড়ক নির্মাণস্থলে অবস্থিত কিছু ঘর-বাড়ি সরাতে হচ্ছে। তারজন্য সেনাবাহিনী পরিবারগুলোকে যথাসময় দিচ্ছে এবং বিকল্প জায়গাও দিচ্ছে। তাকে পুঁজি করে জেএসএসসহ আঞ্চলিক দলগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে মিথ্যাচার রটাচ্ছে তা প্রত্যাশিত। সেনাবাহিনী কেবলমাত্র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে৷ প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর নিজেস্ব কোন প্রকল্প নয়। এটি মূলত সীমান্ত সড়ক এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কিংবা সীমান্ত সড়ক প্রকল্প। তাই সীমান্ত সড়ক নিয়ে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে সচেতন মহল মনে করেন৷ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা যেমন জোরদার হবে তেমনি এ অঞ্চলের সংঘাত, হানাহানি ও অস্ত্রবাজি কমে আসবে। তারই পাশাপাশি খাগড়াছড়ি রামগড় থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজার পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে।

আগের পোস্টজেএসএস-ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচারে লিপ্ত।
পরের পোস্টবিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করছে।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন