পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে পাহাড়ি বিলুপ্ত গাছগাছালি পাচার হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে পাহাড় ন্যাড়া হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিসহ; পাহাড় ধস ও পানি সংকট তীব্রতা বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্র গুলো বলছে, আঞ্চলিকদল ইউপিডিএফ প্রসিতমূল, জেএসএস সন্তুসহ ৫/৬টি সন্ত্রাসীদের চাঁদার প্রধান উৎস অবৈধ কাঠ থেকে আদায় করা চাঁদা৷ এই চাঁদার বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্রক্রয় করে রাষ্ট্র ও বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছে। তাদের অর্থনীতি ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে অবৈধ কাঠের চাঁদা।
কাঠ সমিতি নাম দিয়ে অসাধু কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট প্রতিটি কাঠের গাড়ি হইতে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে। এ চাঁদার টাকা আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলসহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। পাহাড়ের গহীন অরণ্য থেকে আঞ্চলিক দলকে প্রতিফুট কাঠে ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে চাঁদা দিয়েই কাঠ নিয়ে আসছে। ৫০০০ ফুট কাঠ হলে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। চাঁদা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি তার মূল কেন্দ্র অবৈধ কাঠ। যে বাগান সৃজন করে সেও চাঁদা দিতে হয়, আর যে বাগান বিক্রি করে সেও চাঁদা দিতে হয় এবং যে ক্রয় করে সেও চাঁদা দিতে হয়, এমনকি যে গাড়ি পরিবহন করে সেও চাঁদা দিতে হয়; মোদ্দা কথা অবৈধ কাঠ থেকে হারে হারে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এক সমীকরণে দেখা গেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বাৎসরিক ১০০০ কোটি টাকার চাঁদার ৭০% আসে কাঠ থেকে!
স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, প্রতিদিন রাতদিন অবিরত বান্দরবান লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রাঙ্গামাটির কাউখালী, কাপ্তাই এবং খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে কাঠ ও জ্বালানি কাঠ পাচার হচ্ছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামকে মরুভূমি করতে চারাগাছ ও পাহাড়ি বিলুপ্ত গাছগাছালি কেটে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। এসব কাঠ ও জ্বালানি কাঠ পাচারে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং সহযোগী আঞ্চলিকদল এবং তথাকথিত কাঠ ব্যবসা সমিতি। শুধুমাত্র মোটা অংকে চাঁদা উত্তোলনের জন্য তারা সরকারের রাজ্য ফাঁকি দেওয়াসহ বনাঞ্চল এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে কাঠ পাচার করছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট বিটের চারাগাছ এবং সবধরনের বিলুপ্ত গাছগাছালি কেটে সাবাড় করেন অবৈধ কাঠ চোরাকারবারি কাঠ সমিতির আঞ্চলিক দলের সহায়তায়। হতদরিদ্র বাঙ্গালীরা কাঠ ব্যবসা না করলে কী খাবে এমন উক্তি কাঠ সমিতি করলেও গাড়ি প্রতি ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক আদায় করে নেয়। ভূতের মুখে রামরাম! কেউ চাঁদা দিলে অপারগতা প্রকাশ করলে তার কাঠ যেতে বিভিন্ন মাধ্যমকে দিয়ে বাধা প্রদান করা হয়। যা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয় সমিতি ও সন্ত্রাসী দলগুলোকে। এসব দেওয়া ছাড়া গাছের গাড়ি পারাপার হয়না। সচেতন মহল বলছে- কাঠ সমিতি কাঠ পাচার করতে গরিব বাঙ্গালী বলা জাস্ট ভাঁওতাবাজি করার সামিল। মূলত কাঠ থেকে চাঁদাবাজি করার জন্য গরিব বাঙ্গালীর মাথা বিক্রি করে তারা খাচ্ছে।
অধিবাসীদের দাবি- কাঠ ও জ্বালানি কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় পাহাড়ি বাঙ্গালী জনসাধারণ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা জানান, পাহাড়ের প্রতিটি স্থান থেকে দিনে দুপুরে কাঠের গাড়ি যায়৷ এবং লাকড়ি গাড়ি তো দিবারাত্রি যাচ্ছে। বেপরোয়া গতি চলাচল করা কাঠের গাড়ি মানুষের জানমালও কেড়ে নিচ্ছে। সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থা একদম নাজুক বেপরোয়া কাঠের গাড়ির কারণে। মানুষের নিরাপত্তা নেই ১০০ স্পীডে সড়কে গাড়ি চলে! কিন্তু তাদের রুখে দাঁড়ানোর কেউ নেই। অনিয়ম থেমে নেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন বনাঞ্চলে ১০০০ থেকে ২০০০ ফুটের উপর কোন বাগান নেই। অথচ জোত পারমিটের নামে ৩০০০ ফুট থেকে ১০০০০ হাজার ফুট পর্যন্ত পারমিট দিয়ে বসে আছে সংশ্লিষ্টরা৷ পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বছরের পর বছর ধরে কাঠ নেওয়া হচ্ছে! যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনী। বর্তমানে অধিকাংশ পারমিটের নকল কপি ব্যবহার করে পরিমাণের বাহিরে কাঠ নিয়ে রাজেস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এছাড়াও অবৈধভাবে তো যাচ্ছেই প্রতিনিয়ত কাঠ। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে৷ অন্যদিকে আঞ্চলিক দলগুলো অবৈধ কাঠ পাচারের সহযোগীতা করে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে৷ চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে অস্ত্র-ক্রয়, প্রশিক্ষণ, কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রসারিত করছে।
অবৈধ কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের খবরাখবর ফাঁসসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি পার্বত্য পরিস্থিতি অশান্ত করছে। যদি সন্ত্রাসীদের চাঁদার এই প্রধান উৎস কাঠ পাচার বন্ধ করা না যায় অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করবে। তাই অবৈধ কাঠ পাচার রোধসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ হবে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য কার্যকারি।