আঞ্চলিক দলের প্রলোভনে অন্ধকার জীবনে পা বাড়াচ্ছে পাহাড়ের তরুণ যুব সমাজ।

0

দুর্গম পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদ, সশস্ত্র বন্দীজীবন কখনো আলোর মুখ বা কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নে পৌছাতে পারেনা। এমনকি এই অন্ধকার জীবন আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও দেশ থেকে বহুদূরে পিছিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায়না, মনের বাসনা পূর্ণ হয়না। সভ্যতার বাহিরের জগতে থেকে রাষ্ট্র ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে দুশ্চিন্তায় ভুগে নিজেকে কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করা ছাড়া উপায়ন্তর নেই।

এমন জীবন বেছে নিতে পাহাড়ের তরুণ যুব সমাজকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীরা দলে ভেড়াচ্ছেন। HBF এর এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসিত মূল দলে প্রায় ২,০০০ হাজার যুবক একদম তরুণ৷ যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে! মানসিক বিকাশ এবং নিজেদের ভবিষ্যত তৈরি করার সময়ে এই যুবকরা অন্ধকার জীবনে পা বাড়িয়েছে আঞ্চলিক দলগুলোর মিথ্যা স্বপ্ন ও প্রলোভনে।

ছোটছোট বাচ্চাদের মধ্যে অনলাইনে গেম খেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, তারা বিভিন্ন যুদ্ধ গেম, অস্ত্র চালানোর মতো গেম গুলোতে বেশি আসক্ত লক্ষ্য করা যায়৷ তরুণ বয়সের যুবকদের মধ্যেও অস্ত্র চালানো এবং ক্ষমতা দেখানো একপ্রকার আসক্ত। বন্ধুবান্ধবদের কাছে হিরো হওয়ার জন্য হলেও একে- ৪৭ অস্ত্র হাতে নেওয়া যুবকদের বর্তমান চাহিদা। এর মধ্যে যে কেউ এই কাজগুলোতে উদ্বুদ্ধ করলে আসক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্লাস নাইন-টেন ও কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা হতদরিদ্র পরিবারের তরুণ যুবকের টার্গেট করে আঞ্চলিক দলগুলো সশস্ত্র সদস্য সংগ্রহে কাজ করে৷ প্রথমে তাদের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের বিষয়ে বিদ্বেষমূলক ধারণা মস্তিষ্কে ঢুকানো হয়। তারপর আস্তে আস্তেই তাদেরকে সশস্ত্র জীবনে নিয়ে যাওয়ার উপঢৌকন দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে স্বপ্ন দেখানো হয়- অস্ত্র চালানো, ক্ষমতা প্রদর্শন, এবং সুন্দর ভবিষ্যত ও স্বজাত প্রেমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভেঙে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সশস্ত্র বিপ্লবী জীবনধারণের। তাদেরকে বলা হয় যে, রাষ্ট্র তাদের অধিকার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। অচিরেই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি হারাবে। তাই বলা হয় বিপ্লবী জীবনধারণের মাধ্যমে ভূমি অধিকার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রাস্ট্র গঠন করা সম্ভব। এমন মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণ বয়সের যুবকদের আঞ্চলিক দলগুলোতে ভেড়াতে নানা প্রলোভন দেখিয়ে থাকে।

HBF বলছে, ইউপিডিএফ-এ থাকা ২০০০ তরুণ যুবকের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। এদের অনেকেই এখনো মূল্যবোধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি৷ সঠিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। আসক্তি ও ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে তারা অস্ত্র ধরার পথ বেছে নিয়েছে। তাদের বেতন ভাতা মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এই বেতন-ভাতা দিয়ে কী তাদের নিজেদের পকেট খরচ হয়? কীভাবে তারা পরিবার পরিজনের দায়দায়িত্ব বহন করবে? একরাশ মিথ্যা স্বপ্ন আর ৩০০-৫০০ টাকা দিয়ে যুবকের হাতে অস্ত্র দিয়ে তাদের ভবিষ্যত জীবন ধ্বংসসহ তাদের পরিবারকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জাতিসত্তার মেধাবী লোক যেমন হ্রাস পাবে তেমনি জাতি হিসেবে সুস্থভাবে বেছে থাকার পথ শঙ্কিত হবে।

বর্তমানে পাহাড়ে যে রক্তের হোলিখেলা শুরু হয়েছে। এই খেলায় কেউ নিরাপত্তা নয়। পাহাড়ি-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায় এক অনিশ্চয়তা দিন পার করছে। আঞ্চলিক দলগুলো চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলমান সংঘাতে হতাহতের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তাই লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন আঞ্চলিক দলে পা বাড়িয়ে নিজেদের অনিরাপদ করে তোলা হবে বোকামি। ইতোমধ্যে যারা আঞ্চলিক দলে যোগ দিয়েছেন তাদের কারো অবস্থা ভালো নয়। তারা এখন সভ্য সমাজ বা আলোর পথ থেকে বহিষ্কৃত৷ তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত তারা এখন ভোগ করতেছে। আঞ্চলিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের খপ্পরে পড়ে প্রাণ যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের। সংগঠনগুলো সদস্য সংকটে ভুগছে। তাই তারা নানা আশা ও স্বপ্ন এবং প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ উঠতি বয়সের যুবকদের দলে ভেড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছে।

তরুণ যুবকের শুধু ইউপিডিএফ নয় জেএসএস সন্তু, জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, এমলপি ও কেএনএফসহ আঞ্চলিক দলগুলোও মিথ্যা স্বপ্ন ও প্রলোভন দেখিয়ে দলে ভেড়াচ্ছেন। বর্ণিত দলগুলোতে ১৮ থেকে ২২/২৫ বছরের যুবকদের দেখা যায় বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্র ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিচার- বিশ্লেষণ করে বলা যায়- ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবকদের সংখ্যাই বেশি।

অভিভাবক ও তরুণ যুবকের উদ্দেশ্যেই বার্তা থাকবে- নিজেদের সুন্দর জীবন নষ্ট না করার; অস্ত্র ধরে দুর্গম পাহাড়ের বন্দী ফেরারি জীবন বেছে নিয়ে সভ্যতার আধুনিক, শিক্ষা ও কর্মদক্ষতার জীবন থেকে বঞ্চিত যেনো না হয়; অন্ধকার জীবন বেছে নিলে প্রতিনিয়ত তাড়া করবে এবং আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও দেশ থেকে বহুদূরে নিয়ে যাবে। জীবন যেহেতু আপনার তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও আপনার। আবেগ ও আসক্তে বুঁদ হয়ে বন্ধুবান্ধবদের কাছে ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে অন্ধকার জীবনে পা বাড়িয়ে নিজেকে শেষ করবেন না।

আগের পোস্টআঞ্চলিক দলের সহায়তায় পাচার হচ্ছে অবৈধ কাঠ: আদায় করছে বিপুল পরিমাণ চাঁদা!
পরের পোস্টবিলাইছড়ি সেনা জোনের উদ্যোগে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন