বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলার থানচি ও লিক্রি সীমান্ত সড়কের ৮কিলো এলাকায় ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি করেছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফিরেছেন চালক-সহকারী। অদ্য- বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল আনুমানিক ৪-৩০ ঘটিকার সময় এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। ৫টি মালবাহী ট্রাক বান্দরবান সদর থেকে থানচি যাচ্ছিলো। এসময় মুখে লাল কাপড় পরিহিত ৫জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে একটি ট্রাক লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। ট্রাকের পেছনের অংশ গুলি লাগে। ট্রাকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত ৫টি ট্রাক নিয়ে থানচি সদরে পালিয়ে এসে গুলিবর্ষণের বর্ণনা দেন চালক-সহকারীরা। এসময় তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলার বিষয়টি জানায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা কেএনএফ ঘটিয়েছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বলছিলো তারা সাধারণ বাঙ্গালীদের কোন ক্ষতি করেনা। তাদের স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলন-সংগ্রাম রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই হামলার মধ্য দিয়ে তাদের ওয়াদার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে। এর আগেও তারা পর্যটক ও সাধারণ বাঙ্গালীর উপর হামলা, লুটপাট চালিয়েছে। এমনকি হত্যাও করেছে। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পাহাড়ের পরিস্থিতি দিনদিন অশান্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা- থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটপাটের ঘটনার পর থেকে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে যৌথবাহিনী অভিযানে নামে। অভিযানে প্রায় ৭০ এর অধিক আটক হয়েছে। অভিযানের পরেও তাদের হামলা এবং সহিংস ঘটনা বন্ধ নেই। এসব ঘটনা প্রমাণ করে তারা রাস্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সরকার তাদের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে জোর চেষ্টা করেছিলো। এখনো বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। তারা শান্তি আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে কুকি রাজ্য বা কুকিল্যাণ্ড নামক রাষ্ট্র গঠন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃতরা নিরীহ দাবি করে কেএনএফ সাধারণ বাঙ্গালীদের ক্ষতি করেনা এমন বিবৃতি একাধিকবার দিলেও আজকের বাঙ্গালীদের ট্রাক লক্ষ করে গুলি করে তারা প্রমাণ করেছে এ রাষ্ট্রের জনগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের প্রতিপক্ষ।
গত ২০২২ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সশস্ত্র গেরিলা প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তারা সরকারের নজরে আসে। তারা কুকি রাজ্য বা আলাদা কুকিল্যাণ্ড নামক রাষ্ট্র গঠনে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এরপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। ৫জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয় এবং সাধারণ পাহাড়ি-বাঙ্গালীসহ অনেক নিহত ও আহত হয়। দাবিদাওয়া এবং সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে শান্তি কমিটি গঠন হয়। শান্তি কমিটির সঙ্গে কয়েক দফায় অনলাইন ও স্বশরীরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কেএনএফ এর। উক্ত বৈঠকে ১১ টি বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা হয়। আরো পেশকৃত দাবিদাওয়ার বিষয়গুলোর উপর বিস্তর আলোচনা চলমান ছিলো৷ এমতাবস্থায় কেএনএফ স্বায়ত্তশাসনের দাবির ধুয়ো তুলে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্রলুটের মত ঘটনা ঘটায়।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং স্থানীয় জনসাধারণের উপর হামলা ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।
তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনে নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে।