আলোচনার টেবিল থেকে সরে গিয়ে কেএনএফ প্রমাণ করেছে তারা পাহাড়ে শান্তি চায়না।

0
1

রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান চায়না কেএনএফ

সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই উত্তাপ পাহাড়ের গন্ডি পেরিয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের শান্তি কমিটির আলোচনার টেবিল থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করেই গত এপ্রিল মাসের ২ ও ৩ তারিখ জেলার রুমা ও থানচি উপজেলা সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি করে। ব্যাংকে হামলা ও অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার সদস্যের ১৪টি অস্ত্র কেড়ে নেয় কেএনএফ৷ চলমান শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করার বিষয়টি সকলকে হতবাক করেছে। আজকে যারা বলছে, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান সামরিক বাহিনীর অভিযানে সম্ভব নয়। এই সমস্যা রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান করা উচিত৷” তাদের এটা জেনে রাখা উচিত সরকারের সঙ্গে কিন্তু কেএনএফ এর রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানে আলোচনার বৈঠক চলছিলো গত ৫/৬ মাস ধরে। স্বশরীরে বৈঠকসহ ৩ দফায় তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই শান্তি প্রক্রিয়া আলোচনার ফলপ্রসূ কেএনএফ এর দাবি অনুযায়ী কয়েকটি চুক্তি সমঝোতা করেন উভয় পক্ষ। বাদবাকি দাবিদাওয়া গুলো নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিলো। আলোচনা চলাকালীন সময় নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফ এর বিরুদ্ধে অভিযানও বন্ধ করে। এমন সময় কেএনএফ কোন একটি ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্র ধরে সংগঠনের সভাপতি নাথান বমের নির্দেশে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের শান্তি প্রত্যাখ্যান করে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাহলে শান্তি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করলো কারা? নিঃসন্দেহে কেএনএফ লঙ্ঘন করেছে। যে কেএনএফ রাজনৈতিকভাবে দাবিদাওয়া ও সমস্যা সমাধানের পথ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সঙ্গে সামরিক উপায় ছাড়া সমস্যা সমাধানের পথ আর কী বা আছে? সরকার কী কেএনএফ কে সুযোগ দেয়নি? সরকার বরাবরই আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ছিল৷ দুঃখজনক কেএনএফ কোনভাবেই পাহাড়ে শান্তি চায়নি৷ তারা চেয়েছিল সশস্ত্র ও চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে তাদের তথাকথিত দাবিদাওয়া পূরণ করবে আর পাহাড়কে অশান্ত করবে।

চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য নিম্নবর্ণিতরা সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করেছে। তারা বলছে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য। প্রকৃত সত্য ঘটনা না জেনে তারা এমন ঢালাওভাবে মন্তব্য করে যাচ্ছে। প্রকৃত সত্য হলো- কেএনএফ রাজনৈতিক উপায়ে শান্তি স্থাপনে অনিহা, তারা পাহাড়ে কোনভাবেই শান্তি চায়না। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদ লালন করে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে তারা থাকতে চায়না। কেএনএফ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চায় তাদের এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অজুহাত এবং হীন উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী অনেক ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল তারা মানবাধিকার বিষয়টি সামনে রেখে কাজ করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা উজ্জ্বল। যা দেশের জন্য এক অর্জন। কেএনএফ যে অন্যায় করে আসছে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোন দেশের সেনাবাহিনী হলে কেএনএফ এর অপরাধের অভিযোগে সমগ্র বম জনগোষ্ঠীকে মাটিতে মিশিয়ে দিত। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী মানবিক, দেশপ্রেমিক এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতি উদার ও আন্তরিক। যার প্রমাণ সেনাবাহিনী দিয়ে আসছে।

পাঠকমণ্ডলীর জ্ঞাতার্থে কেএনএফ এর দাবিদাওয়া ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং এই নিয়ে সরকারের ভূমিকা কী ছিল সেবিষয়টি পরিষ্কার করার প্রয়োজনীতা অনুভব করছি। তাই তার সংক্ষিপ্ত তুলে ধরছি-
প্রথমত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) যেসকল দাবিদাওয়া সরকারের নিকট পেশ করেছিল, দাবিগুলো কতটা যুক্তিসঙ্গত বা সংবিধান সম্মত তা কী আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ও প্রগতিশীলরা কখনো ভেবে দেখেছেন? তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বশাসন বা স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে। বাস্তবিক অর্থে কেএনএফ যেসকল দাবিদাওয়া পেশ করেছে তার অন্তরালে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বৃহৎ অংশ আলাদা করার নীলনকশা। স্বায়ত্তশাসন দাবির অন্তরালে কী থাকে? সেটা বর্হির বিশ্বের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে তাকালে অনুমেয়। এবং এই নিয়ে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কিংবা দেশীয় সংবিধান কী বলে। এমনকি এমন কিছু দাবি তারা পেশ করেছে যেসব দাবিদাওয়া সরকার বাস্তবায়ন করলে ১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘিত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ভাষাভাষী উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব হবে৷ কেএনএফ মাত্র ১৩ হাজার বম জাতির সংগঠন৷ কুকিভুক্ত ৬টি জাতি কেএনএফ কে সমর্থন করেনা। সামান্য ক্ষুদ্র জনসংখ্যা নিয়ে এই দাবিদাওয়া পেশ করা কতটুকু বাস্তবসম্মত? এই দাবিদাওয়া চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার, মর্যাদা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য খর্ব করে। কেএনএফ এর এমন সব অদ্ভুত ও সংবিধান পরিপন্থী দাবি সরকার তড়িঘড়ি বাস্তবায়ন করতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত সংঘাত, ভেদাভেদ ও হানাহানি বেড়ে যেত৷ এই অঞ্চলে দীর্ঘ সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই সরকার কেএনএফ এর দাবিদাওয়া গুলো বিচার-বিশ্লেষণ এবং সংবিধান সম্মত কীনা তা যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে তাদের ন্যায দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার দিকে হাঁটছিলেন। কেএনএফ বুঝে গেছে সরকার তাদের ন্যায দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন করবে কিন্তু অযাচিত দাবি মেনে নিবেনা। ন্যায দাবি বাস্তবায়ন করলে তাদেরকে অস্ত্র ছাড়তে হবে। অথাৎ সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। মূলত কেএনএফ চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড টিকিয়ে রাখতে এবং পাশাপাশি স্বপ্নের কুকিল্যাণ্ড করতে শান্তি কমিটির চলমান আলোচনার টেবিলে থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে। একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলোচনার টেবিল থেকে সরে যাওয়ার উদ্দেশ্যকে যারা সহজভাবে নেয় তাদের রাজনৈতিক ও কূটনীতিক জ্ঞান সীমিত বলে মনে করি।

আগের পোস্টমৃত শাসনবিধি বলবৎ করতে ইউপিডিএফ কর্মসূচী পালন করে অবরোধের ডাক দেয়!
পরের পোস্টরাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে ইউপিডিএফ এর আধাবেলা অবরোধ।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন