জিহান মোবারক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধি:
একজন অভিভাবক তীব্র তাপদাহের পরেও নিজের আদরের সন্তানকে সুশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিত স্কুলে পাঠিয়ে দেন। সেটা ঝড়বৃষ্টি বা রৌদ্র যাইহোক। সন্তানের শত বায়নার সাথেও অভিভাবক আপোষ করেন না। সবাই চায় তার সন্তান যেনো সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হন। স্কুলে পাঠানো কোমলমতি শিশু-কিশোর বা ছাত্র-ছাত্রীরা কোথায় কী করেন তার কী অভিভাবক হিসেবে আমরা খবর রাখি? এই খবর আমাদের সবারই রাখা উচিত। কিন্তু আমরা অনেকটাই অচেতন বে-খেয়ালি। আমরা স্কুলের শিক্ষকের উপর ভরসা করে সব দায়িত্ব তাদের উপর ছেড়ে দেই। আমাদের মনে রাখতে হবে পাহাড়ী জনপদে স্কুল-কলেজ গুলো আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা যেমন খুশি তেমন করে। তাদের প্রয়োজনে তারা আমাদের আদরের শিশু-কিশোরদের বলিদান দিতেএ পিছপা হয় না। আমাদের স্কুলে পাঠানো কোমলমতি শিশু-কিশোরদের পাঠদান বন্ধ রেখে আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ প্রায়শ্চই রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য অর্জনে তাদেরকে বাঙ্গালী, নিরাপত্তাবাহিনী ও রাষ্ট্র এবং প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছেন।
আজকে দেখলাম তীব্র তাপদাহের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায় কয়েকটি প্রাইমারি ও হাইস্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের এক প্রকার জোর করেই ৩৫-তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করিয়েছে। সমাবেশ ও র্যালিতে শিশু-কিশোরদের দিয়ে স্লোগান দেয়া হচ্ছে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র এবং প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে। তাদেরকে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘৃণা গিলানো হচ্ছে। এই বয়সে তাদের কী শেখার কথা ছিল!!! আর তারা কী করছে? বা কী শিখছে? যুক্তির খাতিরে মেনে নিলাম আন্দোলন অধিকার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার বাচবিচার নেই৷ তাই বলে কী অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া ৫ বছর থেকে ১৪/১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের ধরে এনে অধিকার সংগ্রামের নামেই বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র এবং প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক, হিংসাত্মক, বিদ্বেষমূলক ঘৃণা চর্চা শেখাতে হবে? এই চর্চা শিখাতে গিয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে কতটা মানবিক বিকাশে প্রভাব ফেলবে তার কী নূন্যতম জ্ঞান-ধারণা মূর্খ ইউপিডিএফ এর আছে?
সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে প্রশ্ন: ৫ বছর থেকে ১৪/১৫ বছরের শিশুকিশোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বা সংগ্রাম কিংবা ধর্মঘট সম্পর্কে কতটুকু বুঝার জ্ঞানবোধ বিকাশ হয়েছে? তারা কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করছে সেটা প্রচলিত নিয়মে মেনে নিলাম কিন্তু প্রাইমারি ও হাইস্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের ব্যবহার কতটুকু আইন বা যুক্তিসঙ্গত? ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে! এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। এই বয়সের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মধ্যে সেনাবাহিনী, বাঙ্গালী ও রাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার মাধ্যমে ঘৃণা বিদ্বেষমূলক গিলানোটা রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহেই বলা যায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করায় অভিভাবকসহ সচেতন মহল বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে তারা শঙ্কিত। এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ইউপিডিএফ বলে অভিযোগ করেছে।
আমরা প্রায় দেখি থাকি, ইউপিডিএফ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য প্রাইমারি ও হাইস্কুলে লেভেলের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে এনে ঘন্টার পর ঘটনা দাঁড় করিয়ে রাখতে, সে সাথে তাদেরকে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী, রাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়। যাতে তারা ভবিষ্যতে বাঙ্গালী, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র বিরোধী মনোভাবে গড়ে উঠে।
একটি জাতির উন্নতি, কল্যাণ এবং এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম অনুপ্রেরণা আজকের প্রজন্ম। আজকের শিশু-কিশোর গড়ে ওঠার উপর নির্ভর করে জাতির ভবিষ্যত৷ তাই তাদেরকে জাতির কল্যাণে নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করাটা জরুরী৷ কিন্তু আমাদের পাহাড়ের অভিভাবকরা সম্পূর্ণ অচেতন ও বে-খেয়ালি। তাদের সন্তান কোথায় যায় কী করে? কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ইন্ধনে বা প্রলোভনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড করছে কীনা তার খোঁজখবর রাখে না। যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সর্বশেষ এর দায়ভার এসে পড়ে অভিভাবকদের উপর।
ইউপিডিএফ যখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে আইনের মুখামুখি হয় তখন নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং রক্ষা করতে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনৈতিক মাঠে এনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এমন ব্যানার ফেস্টুন ও স্লোগান দিতে জোরপূর্বক বাধ্য করেন। তার মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে তাদের ব্যবহার করে। ইউপিডিএফ এর এই অসৎ উদ্দেশ্য কবে বন্ধ হবে তা বোধগম্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্কুল শিক্ষক জানায়,”পাহাড়ে আমরা অস্ত্রধারী আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক হয়রানি, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি এবং অন্যায় ও অত্যাচারের শিকার। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। অনেক সময় আমাদের শিক্ষা পাঠদান বন্ধ রেখেই রাষ্ট্র বিরোধী কর্মসূচীতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠাতে হয়। পাঠদান বন্ধ রাখার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা পিছিয়ে পড়ে। অনেক সময় আমাদের স্কুলও ব্যবহার করতে দিতে হয়। আমরা এখানে বাধ্য। সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করলে এবং নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করলে বাঙ্গালীদের চেয়ে আমাদের পাহাড়িদের উপকার বেশি হবে। আমরা পাহাড়িরা ভুক্তভোগী।”
সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাইমারি, হাইস্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোর ও কলেজের পাঠদান বন্ধ করে যতত্রত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, এবং তাদেরকে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যের কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে। সেসাথে শিক্ষা পাঠদান বন্ধ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যুক্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের। কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক দলকে ঢালাওভাবে সহযোগিতা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ হতে পারে সঠিক সমাধান।