কাঠ পাচারের অভিযোগে বন বিভাগের একজন বরখাস্ত, দুইজন ক্লোজড।

0

আহসান হাবিব জিতু, লামা থেকে ফিরে এসে:

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ ও পাহাড়ি বিলুপ্ত গাছগাছালি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই অবৈধভাবে কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে পাচার ঘটনা এবং তৈন রিজার্ভের গাছ চুরির অভিযোগে বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার বন বিভাগের একজন বরখাস্ত ও দুইজন ক্লোজর্ড করা হয়েছে। এরা হলেন, রেঞ্জ অফিসার জুলফিকার, বিট অফিসার মোজাম্মেল ও বাগান পহরি বিমল।

সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন শতাধিকের উপর গাছ বেঁচে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসেছেন। বন বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন এর নেতৃত্বে তদন্ত টিম বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। তিনজন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ১৫ জনের টিম তৈন রেঞ্জের কাঁকড়ারঝিরি আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন।

তবে সাংবাদিকরা তৈন রেঞ্জের সরকারি বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, বাগানের বড় গাছের পাশাপাশি ছোট-বড় সবধরনের গাছগাছালি কেটে ফেলা হয়েছে। বাগানটি মরুভূমি ন্যায় ন্যাড়া হয়ে আছে। এই বাগানে ছিল, সেগুন, গামারিসহ পাহাড়ি বিলুপ্ত প্রায় ১৭ প্রজাতির গাছপালা। বিশাল আয়তনের এই বন আজ খোলা আকাশের মাঠ।

স্থানীয় জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীরা আরো জানায়, সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারি চক্র গহিন বনের মধ্য থেকে বিশাল বিশাল সেগুনসহ অন্যান্য গাছ কেটে নিয়ে গেছে। যে-সব গাছের বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। আর এসব গাছ পরিবহনের জন্য সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলের মধ্যেই স্কেভেটর দিয়ে বন ও পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছে কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮৪, ৮৫ ও ৮৬ সালের দিকে লামা ও আলীকদমের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা তৈন মৌজায় ৫৭ হাজার একশত ৮৪ একর জায়গায় সরকারি অর্থায়নে সেগুন বাগান সৃজন করা হয়। নিয়মানুসারে সে সময় থেকে লামা বন বিভাগের তৈন রেঞ্জ এই বন সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে আছে।

অপরদিকে এক লাখ দুই হাজার ৮৫৪ একর আয়তনে মাতামুহুরী নদীর অববাহিকায় মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয় এরও কয়েক দশক পূর্বে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজার করার পর এবার তৈন সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস যজ্ঞ চলছে।

আর এই ঘটনার মধ্যদিয়ে ওই বনাঞ্চলে থাকা সরকারের হাজার কোটি টাকার সেগুন গাছের নিরাপত্তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে!

জানা যায়, বান্দরবানের লামা বন বিভাগের অধীনে থাকা সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কোটি টাকার মূল্যবান সেগুন গাছ বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগসহ অবৈধভাবে কাঠ পাচার করতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী নামে ওই বনের ই এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অবৈধ কাঠ চোরাকারবারিরা কম টাকায় কিনে নেয়া এসব গাছ ইতোমধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কয়েকটি স্থান থেকে কয়েক দফায় কেটে নিয়ে গেছেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আরিফুল হক বেলাল। ডিএফও বলেন, সংরক্ষিত বন থেকে গাছ পাচারের ঘটনা জানতে পেরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, আঞ্চলিক বিচ্ছন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদল ও বিভিন্ন অসাধু কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে এতদিন ধরে এই তিন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরকারি বাগানসহ বিটের বিভিন্ন বাগানের গাছ কেটে পাচার করে আসছিল। বনের গাছ কাটছেন কর্মকর্তারা, বাধা দিলেই মামলার হুমকি দেন স্থানীয়দের। যার কারণে কেউ এই ব্যাপারে কথা বলতে চাননা বলে জানা যায়।

সরকারি বাগানের গাছগাছালি পাচার করার অভিযোগের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করে তাদের মুঠোফোনের সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে এই ঘটনার সত্যতার প্রমাণ মিললেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান বন বিভাগ।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বন বিভাগ বনাঞ্চল এবং সরকারি বনজ সম্পদের রক্ষক। যেখানে রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে সেখানে গাছগাছালি বা বৃক্ষরাজি ধ্বংস হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেসাথে পরিবেশের উপর বিরূপ উপর প্রভাব পড়বে।

রেঞ্জ অফিসার জুলফিকার, বিট অফিসার মোজাম্মেল ও বাগান পহরি বিমল এতদিন ধরে তারা অবৈধভাবে কাঠ ও জ্বালানি কাঠ পাচার করে আসছিল। প্রতিটি কাঠ ও জ্বালানি কাঠের গাড়ি হইতে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত তারা কাঠ ব্যবসা সমিতির মাধ্যমে আদায় করতো বলে জানিয়েছে স্থানীয়সূত্র।

একটি গোপন সূত্র জানিয়েছে, কাঠ চোরাকারবারিদের থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের কে দিতেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট কাঠ সমিতির মাধ্যমে কাঠ ও জ্বালানি কাঠ পাচার করে আসছে। এই কাঠ পাচার রোধে রেঞ্জ অফিসার জুলফিকার, বিট অফিসার মোজাম্মেল ও বাগান পহরি বিমলের বিরুদ্ধে বরখাস্ত ও ক্লোজড ব্যবস্থা একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

আগের পোস্টচট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম পাহাড়ের কৃতি সন্তান।
পরের পোস্টকেএনএফ এর নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার।

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন