পার্বত্য রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতোমং মারমাকে পরিকল্পিত হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) দিবাগত রাত্রে পাহাড়ের বিচ্ছন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা অতর্কিত ব্রাশফায়ার করলে চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশের ধারণা কেএনএফ সন্ত্রাসীরা গুলি করতে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়তলি ইউনিয়নের বড়থলি মারমা পাড়ায় চেয়ারম্যান আতোমং মারমা তাঁর চাচার বাড়িতে বেড়াতে যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাওয়া খেতে উঠানে ঘুরছিলেন।
এ সময় আতোমং মারমাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। পরে বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা ছুটে আসলে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এতে তাঁর পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন।
পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় বড়থলি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান মারমা এই জনপ্রতিনিধিকে সেনাবাহিনী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। পরবর্তীতে মধ্যরাতে পাশের উপজেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। আজ বুধবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
বিলাইছড়ি থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাঁকে প্রথমে সেনাবাহিনী চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। পরবর্তীতে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে সেখান থেকে বুধবার চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। চেয়ারম্যান হাতে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
ঘটনাটি নির্বাচনকে ঘিরে হয়েছে কী-না জানতেচাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “গতকাল উপজেলা নির্বাচন থাকলেও এটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট না। অন্য কোনোকারণে হতে পারে।”
বড়থলি ইউনিয়ন রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার হলেও এটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার ঘেঁষা। এলাকাটি বেশ দুর্গম। রাঙ্গামাটি থেকে একমাত্র নৌপথের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়।
যাতায়াত ও যোগাযোগের সুবিধার কারণে এলাকার লোকজন বেশির ভাগ সময় বান্দরবানের রুমা হয়ে চলাচল করে থাকে।
মারমা সম্প্রদায়ের এই জনপ্রতিনিধিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হাতে সাধারণ পাহাড়ি বা বাঙ্গালী কেউ নিরাপদ নয়। বেছে বেছে মারমা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব শূন্য করতে হত্যার মিশনে নেমেছে। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী সদর ইউনিয়নের রেজুক মারমা পাড়া গ্রামের উহ্লাচিং মারমা (৪০) নামে এক মারমা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিকে কেএনএফ এর সশস্ত্র শাখা ন্যাশনাল আর্মি কর্তৃক গুলি করে আহত করে। দাবিকৃত চাঁদার টাকার জন্য এই হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ধারনা করা হয় কেএনএফ এর চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম এবং রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করায় এই মারমা জনপ্রতিনিধিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে।
উপরোক্ত হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হাতে নিরাপদ নয় স্থানীয় মারমা সম্প্রদায়সহ অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়। তাই সকলকেই কেএনএফ সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এরা পাহাড়ের শান্তি-সম্প্রীতি ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে।