রফিকুল ইসলাম, রাঙামাটি প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটি আসামবস্তি- কাপ্তাই সড়কে ড্রেন নির্মাণ কাজের বাঙ্গালী লেবারদের চাঁদার জন্য মারধর করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) সন্তুর একটি সশস্ত্র গ্রুপ।
অদ্য শুক্রবার (২৪ মে) আসামবস্তি কিপ্পা বিপরীতে তংচঙ্গ্যা পাড়া ড্রেন নির্মাণ কাজের স্থানে দুপুর আনুমানিক ২ ঘটিকার সময় জেএসএস সন্তুর সশস্ত্র কমান্ডার দীপক চাকমার নেতৃত্বে ১৬/১৭ জন বাঙ্গালী লেবারকে বেধড়ক মারধর করার ঘটনা ঘটে।
একাধিক সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। ড্রেনের কাজটি করার জন্য জেএসএস সন্তুর পূর্বের কমান্ডারকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা দেওয়া হয়। পূর্বের কমান্ডার বদলী হওয়ার পর নতুন কমান্ডার আসে দীপক চাকমা (৪০)। কমান্ডার দীপক আসামবস্তি এরিয়াতে আসার পর মোটা অংকে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদার টাকা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে লেবারদের উপর অতর্কিত হামলা করে জেএসএস সন্তুর সশস্ত্র গ্রুপের সন্ত্রাসীরা।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন লেবার জানায়, এতদিন ধরে চাঁদা দাবি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো কমান্ডার দীপক চাকমা। বিষয়টি আমরা ঠিকাদারকে জানালেও সে কর্ণপাত করেনি এবং লেবারদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আজকে হঠাৎ ১৫/২০ জনের অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ কাজের স্থানে এসে লেবারদের এলোপাতাড়িভাবে মারধর করতে থাকে। বেধড়ক মারধরে কয়েকজন লেবার গুরুতরভাবে আহত হন। সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখান। অস্ত্র উঁচু করে বলেন, কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। চাঁদা না দিলে গুলি করে মেরে ফেলব। তোদের ঠিকাদারকে বলবি চাঁদা পাঠাই দিতে। যদি চাঁদা না দেয় তাহলে পরিণাম খারাপ হবে৷
স্থানীয় বাসিন্দা, আবু কালাম জানান, জেএসএস এর একটি সশস্ত্র গ্রপ চাঁদার জন্য লেবারদের মারধর করে কাজ বন্ধ করে দেয়। ভারী অস্ত্র নিয়ে তংচঙ্গ্যা পাড়া অনেক সময় মহড়া দিয়েছে। এর আগেও একাধিকবার এই সড়কে জেএসএস বিশৃঙ্খলা করেছে চাঁদার জন্য। চাঁদার জন্য লেবারদের মারধর এবং সিএনজি আগুন দিয়েছে। গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে একাধিক ঘটনা ঘটে এই সড়কে। এসব একাধিক ঘটনার ১ বছর যেতে না যেতেই আবারো হামলা করেছে জেএসএস৷ হামলার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালী সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, কমল বড়ুয়া জানান, আমি কাপ্তাই থেকে আসার পথে দেখি, কয়েকজন উপজাতি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সড়কের ড্রেনে কর্মরত বাঙ্গালী লেবারদের মারধর করতেছে চাঁদার জন্য৷ এসময় অস্ত্র প্রদর্শন করে সন্ত্রাসীরা। হামলার সময় লেবারদের কান্না, চিৎকার ও চেঁচামেচির ভিডিও’ ও ছবি ধারণ করতে গিয়ে আমিও বাধার মুখে পড়ি। ঘটনার বেগিতক দেখে আমি দ্রুত মোটরসাইকেল দিয়ে পালিয়ে আসি।
লেবারদের উপর হামলার বিষয়টি জেএসএস সন্ত্রাসীদের ভয়ে গোপন রাখা হয়েছে। আহত লেবারদের গোপনীয়তা বজায় রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না।
সূত্রে জানা যায়, জুন মাস উপলক্ষে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী দলগুলো চাকরিজীবি, নির্মাণ কাজ, যানবাহন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন চাঁদার উৎস থেকে চাঁদা উত্তোলনে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। জুন মাসের ১ তারিখ থেকে পুরোদমে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলবে এই চাঁদা আদায়। তারই আগাম প্রস্তুতি ও সর্তকবার্তা হিসেবে বাঙ্গালী লেবারদের উপর জেএসএস সন্ত্রাসীরা হামলা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।