রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত প্রার্থী অমর জীবন চাকমা। তিনি জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে আনারস প্রতীকে ৬,১৫৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি তথাকথিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জ্যোতিলাল চাকমা পেয়েছে ৪,১৬২ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র সুজিত তালুকদার ও ইউপিডিএফ সমর্থিত অনিতা চাকমা।
স্থানীয়রা জানায়, সকাল ৯ টা থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র গ্রুপগুলো সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোট অমর জীবন চাকমাকে দিতে বাধ্য করে। অনেক ভোটারকে কেন্দ্রে যেতে বাধাপ্রদান করে। জরিমানা করার ভয় দেখান। পাহাড়ের ভিতর এলাকার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র অবস্থান ছিল। জাহানাতলী উচ্চ বিদ্যালয় ও রত্নসিং কার্বারী পাড়া কেন্দ্র ইউপিডিএফ সশস্ত্র গ্রুপ নিয়ে ঘেরাও করে দখল করেন। এমনকি কেন্দ্র দখলের জন্য জেএসএস সংস্কার এম.এন এর সহায়তা চায়। সংস্কারের নেতৃত্বে কয়েকটি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করে ইউপিডিএফ। এই নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে ইউপিডিএফ চিরশত্রু জেএসএস সংস্কার এম.এন ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সঙ্গে গোপনে সমঝোতা করেন। এমনই জনশ্রুতি আছে। ইউপিডিএফ এর কূটকৌশলের কাছে পরাজিত হয় জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বর্মা গ্রুপ। এদিকে তিনটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে প্রশাসনকে বোকা বানিয়ে তথা ব্যবহার করে সমর্থিত প্রার্থীকে জিতিয়েছে।
অমর জীবন চাকমার জীবনের অপরাধের শেষ নেই। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ করার সময় নানিয়ারচর গণহত্যা চালিয়েছে এমনকি রাষ্ট্র, বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী বিরোধী অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। এমন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার ফলে সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা ব্যাপক হারে বাড়বে।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, ভয়ভীতি, জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্ট কে কেন্দ্রে ডুকতে দেওয়া হয়নি৷ এবিষয়ে নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েও পায়নি।
এছাড়াও জাল ভোট প্রদানসহ দখলকৃত কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিল করা হয়নি! নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজন করতে ব্যর্থ হন। যার কারণে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হতে সক্ষম হয়।
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত পাহাড়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় প্রশাসন। খাগড়াছড়ি প্রায় উপজেলা এবং রাঙামাটির একটি উপজেলাসহ এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ইউপিডিএফ এগিয়ে৷ সাম্প্রতিক সময়ে মাঠে সক্রিয় হওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো উপজেলা নির্বাচনে সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী করা।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ইউপিডিএফ নানিয়ারচরকে এক সন্ত্রাসী জনপদে পরিণত করবে৷ সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি, হানাহানি ও খুন-খারাবি থেকে মুক্তি পাবার আর সুযোগ থাকলো না নানিয়ারচরবাসীর। নির্লজ্জ জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের মূল্যবান চেয়ারটাই দখলে নিলেন ইউপিডিএফ। জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করে প্রশাসনিক সহযোগিতায় ইউপিডিএফ আরো শক্তিশালী হবে। বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী বিরোধী তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। ইউপিডিএফ যে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছে সে ক্ষত এখনো শুকায়নি। রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী আচরণকারী দেশদ্রোহী ইউপিডিএফ শক্তিরকাছে প্রশাসনের এভাবে অসহায়ত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী টিকে থাকা এক কঠিন চ্যালেজ হয়ে যাবে।
প্রশাসন এই নির্বাচনকে বৈধতা দিলেও সচেতন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, অমর জীবন চাকমার নামে ৬টি মামলার ওয়ারেন্ট থাকার পরেও কীভাবে তিনি নির্বাচন করে নির্বাচিত হলেন? পৃথিবীর ইতিহাসে আইনের লঙ্ঘন কোথাও এমন হয়েছে কীনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার না করে নির্বাচনে সুযোগ দিয়ে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে বাধাপ্রদান করেছে৷ এর মাধ্যমে একজন সন্ত্রাসী বা অপরাধী পার পেয়ে যাবেন। জনগণের প্রতি থাকবে না দায়বদ্ধতা।
লেখক: হাসান আলী, নানিয়ারচর, রাঙামাটি (২৬ মে ২০২৪)