একটি দেশের ভবিষ্যৎ হলো সে দেশের তরুণ সমাজ। তারুণ্যের শক্তিই পারে যেকোনো দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে এই তরুণ সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু আজকে আমাদের এই তরুণ সমাজ ভুল পথে হাঠছে। একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সব সময় চেষ্টা করে তাদের উন্নতি। বাংলাদেশে বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে, তার মধ্যে বম জনগোষ্ঠী একটি যার বেশিভাগ বসবাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায়। ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিসংখ্যান বলছে, বমদের মোট জনসংখ্যা ১১ হাজার ৬৩৭ জন। তবে সামাজিক সংগঠন বম সোশাল কাউন্সিলের হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার বম রয়েছে। অতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উপজাতি সম্প্রদায় তারা। তাদের মধ্যে যুবক যুবতীদের সংখ্যা ৫-৬ হাজার। এর মধ্যে কেএনএফ এর সামরিক শাখার সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিনশ থেকে চারশোর মতো হতে পারে।বেশিরভাগ যুবক ও কিশোর কিশোরী নিজেদের জীবন গড়তে অনেক কষ্ট করে যাচ্ছে। তাদেরকে হঠাৎ দেশদ্রোহী ও বিপদগামী করে তুলছে বম থেকে সৃষ্টি হওয়া কেএনএফ নামে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। যারা বিভিন্ন লোভ লালসা ও ভয় দেখিয়ে তরুণ তরুণী এবং কিশোর কিশোরীদের নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত করেছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক পিতামাতা সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন শহর উপশহরে আত্মগোপন সন্তানদের মানুষ করতে দিন পার করছে। দুর্গম পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদ, সশস্ত্র বন্দীজীবন কখনো আলোর মুখ বা কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নে পৌছাতে পারেনা। এমনকি এই অন্ধকার জীবন আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও দেশ থেকে বহুদূরে পিছিয়ে নিয়ে যায়। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায়না, মনের বাসনা পূর্ণ হয়না। সভ্যতার বাহিরের জগতে থেকে রাষ্ট্র ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে দুশ্চিন্তায় ভুগে নিজেকে কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করা ছাড়া উপায়ন্তর নেই।
সন্ত্রাসী জীবন বেছে নিতে পাহাড়ের তরুণ যুব সমাজকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীরা দলে ভেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় প্রায় শতাধিক নারী তরুনী কেএনএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। তারা বিভিন্ন ভাবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের জীবনকে বিপদগামী করে তুলেছে। কেএনএফ এর বিভিন্ন নেতার মনোরঞ্জনের জন্য তাদের ব্যবহার করা হয় এদের । ব্যাংকে হামলা করে টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনার সময় দেখা যায় বেশ কিছু নারী সদস্যকে। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী।
গোপন সুত্রে জানা যায় অনেকে তাদের জীবন অনিশ্চিত দেখে পালাতে চেয়ে পারেনি। কারণ তারা সশস্ত্র সন্ত্রাসীর লালসার পাত্র যারা পালাতে চেয়েছে তারা বিভিন্ন অপদস্তের শিকার হয়েছে। ছোটছোট বাচ্চাদের মধ্যে অনলাইনে গেম খেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, তারা বিভিন্ন যুদ্ধ গেম, অস্ত্র চালানোর মতো গেম গুলোতে বেশি আসক্ত লক্ষ্য করা যায়৷ বম তরুণ তরুণী বয়সের যুবক যুবতীদে মধ্যেও অস্ত্র চালানো এবং ক্ষমতা দেখানো একপ্রকার আসক্ত। বন্ধুবান্ধবদের কাছে হিরো হওয়ার জন্য হলেও একে- ৪৭ অস্ত্র হাতে নেওয়া যুবকদের বর্তমান চাহিদা। এর মধ্যে যে কেউ এই কাজগুলোতে উদ্বুদ্ধ করলে আসক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্লাস নাইন-টেন ও কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা হতদরিদ্র পরিবারের তরুণ তরুণীদে টার্গেট করে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্য সংগ্রহে কাজ করে৷ প্রথমে তাদের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের বিষয়ে বিদ্বেষমূলক ধারণা মস্তিষ্কে ঢুকানো হয়। তারপর আস্তে আস্তেই তাদেরকে সশস্ত্র জীবনে নিয়ে যাওয়ার উপঢৌকন দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে স্বপ্ন দেখানো হয়- অস্ত্র চালানো, ক্ষমতা প্রদর্শন, এবং সুন্দর ভবিষ্যত ও স্বজাত প্রেমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভেঙে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সশস্ত্র বিপ্লবী জীবনধারণের। তাদের বলা হয় বিপ্লবী জীবনধারণের মাধ্যমে ভূমি অধিকার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রাস্ট্র গঠন করা সম্ভব। এমন মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে বম তরুণ তরুণী বয়সের যুবক যুবতীদের কেএনএফ এ ভেড়াতে নানা প্রলোভন দেখিয়ে থাকে।
যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে! মানসিক বিকাশ এবং নিজেদের ভবিষ্যত তৈরি করার সময়ে এই বম তরুন তরুনীরা অন্ধকার জীবনে পা বাড়িয়েছে কেএনএফ এর মিথ্যা স্বপ্ন ও প্রলোভনে। যখন তারা বিভিন্ন ভাবে সশস্ত্র কাজে জড়িয়ে পড়ে তখন আর পিছু ফিরতে পারেনা। পড়ে ঝুঁকির মুখে। যেকোনো জাঁতি ও দেশের সামগ্রিক বিকাশলাভের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশক হল তার তরুন সমাজের ভুমিকা। মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, আচার-আচরণের বিবর্তনের মাধ্যমেই প্রতিটি জাঁতি নিজের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে তরুনরা।
বম তরুন তরুনীদের জন্য উপদেশ ও পরামর্শ থাকবে যে, নিজেদের সুন্দর জীবন নষ্ট না করার; অস্ত্র ধরে দুর্গম পাহাড়ের বন্দী ফেরারি জীবন বেছে নিয়ে সভ্যতার আধুনিক, শিক্ষা ও কর্মদক্ষতার জীবন থেকে বঞ্চিত যেনো না হয়; অন্ধকার জীবন বেছে নিলে প্রতিনিয়ত তাড়া করবে এবং আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও দেশ থেকে বহুদূরে নিয়ে যাবে। জীবন যেহেতু আপনার তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও আপনার। আবেগ ও আসক্তে বুঁদ হয়ে বন্ধুবান্ধবদের কাছে ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে অন্ধকার জীবনে পা বাড়িয়ে নিজেকে শেষ করবেন না।
আপনার সুন্দর নারীত্ব দাসে পরিণত করবেন না। এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা পবিত্র দেহ অপবিত্র করবে না।