হান্নান সরকার: পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর বিরুদ্ধে এক হচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িসহ সমগ্র জেলা থেকে জেএসএস সন্তুর সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করতে ইউপিডিএফ প্রসিতদল কেএনএফ কে অর্থ সহযোগীতা দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ ও তহবিল কালেকশন শুরু করেছেন।
বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। জানা যায়, আগামী ৩১ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কথিত ত্রাণের অর্থ ও তহবিল গ্রহণ করা হবে। ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ নরেশ ত্রিপুরা, রোনাল চাকমা ও থুইক্যসিং মারমা তাদের স্ব-স্ব বিকাশ নাম্বার দিয়ে “বম উদ্বাস্তুদের সাহায্যার্থে ইউপিডিএফের ত্রাণ তহবিল গঠন, সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান” জানিয়ে তার অন্তরালে কেএনএফ কে সাংগঠনিকভাবে জেএসএস এর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এই কথিত ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, বান্দরবানের ২টি উপজেলা, যথা- রুমা ও থানচিতে গত ২ ও ৫ এপ্রিল সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের ৩টি শাখায় ডাকাতি, এবং পুলিশের অস্ত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের নির্দেশে যৌথবাহিনী জড়িত কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযান থেকে বাঁচতে কেএনএফ সাধারণ বম সম্প্রদায়ের মানুষ জনের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। বম সম্প্রদায়ের একটি নীরিহ ও সাধারণ অংশ কেএনএফ কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া থেকে বিরত ছিল। কারণ তারা জানতো কেএনএফ রাস্ট্র বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই তারা কেএনএফ কে সর্বধরণের সহযোগিতা দেয়া থেকেই বিরত ছিল। এই বম সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ করেছিলো। এর ফলে এই সাধারণ বম সম্প্রদায়ের উপর কেএনএফ হামলা শুরু করে এবং অর্থ লুটপাট ও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। কেএনএফ ভয়ে উদ্বাস্তু বমদের মানবতাবাদী সেনাবাহিনী খাদ্য ও চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে এসেছে৷ এরপরও কেএনএফ ভয়ভীতিতে অনেক বম পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে স্বজাতিদের কাছে আশ্রয়ে গেছে। কেউ কেউ ভয়ে ঘর-বাড়িতে আসতে পারছে না। তাদেরকে ইস্যু করে কেএনএফ নোংরা রাজনীতি খেলা শুরু করেছে৷ মূলত কেএনএফ এতদিন ধরে সাধারণ বম সম্প্রদায়কে ঘর ছাড়া করে রাজনৈতিক সুবিধাসহ বিভিন্ন মহলের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে আসছিলো। যার প্রতিফলন ঘটেছে বর্তমানে।
এদিকে বিগত কয়েকবছর ধরে বান্দরবান থেকে চাকমা নেতৃত্ব তথা জেএসএস এর নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করতে কেএনএফ বরাবরই জেএসএস বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। কেএনএফ বা বম সম্প্রদায় চাকমা বিরোধী। এটি বহুকাল থেকে প্রমাণিত। তাই চাকমা নেতৃত্বশ্রেণীর প্রতি বৈরী মনোভাব সবসময় বিরাজমান। বর্তমানে বান্দরবানে পুরোদমে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে জেএসএস এর পুরাতন শত্রু ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ ঘর-ছাড়া বমদের একটি অংশকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বমদের নামে ত্রাণ তহবিল কালেকশন করার মাধ্যমে কেএনএফ কে সহযোগিতা করে জেএসএস এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, বম সম্প্রদায়ের নামে মানুষজন থেকে উত্তোলিত ত্রাণ বা তহবিল জেএসএস এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ক্রয় করতে ব্যবহার করবে। এই অর্থ দিয়ে কেএনএফ অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনে জেএসএস নির্মূলে ব্যবহার করবে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।